উত্তরে পানিবন্দী মানুষদের মহাদুর্গতি, ত্রাণ নেই
৩৯১ সরকারি প্রাথমিক স্কুলে পাঠদান বন্ধ- সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর অফিস
- ০৭ জুলাই ২০২৪, ১৯:৫৫, আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪, ১১:০৪
উত্তরাঞ্চলে তিস্তার পানি নিচে থাকলেও বিপদসীমার ওপরে এখনো ঘাঘট, ধরলা, দুধকুমার, ব্রক্ষ্মপুত্র ও যমুনা পানি। ফলে এসব নদ-নদী অববাহিকায় বানের পানিতে বন্দী হয়ে মহাদুর্গতিতে দিন কাটছে আড়াই লক্ষাধিক মানুষের। এরমধ্যে কুড়িগ্রামেই পানিবন্দী দেড় লাখ, গাইবান্ধায় ৭০ হাজার, রংপুরে ২০ এবং লালমনিরহাটে ৩০ হাজারেরও বেশি। আশ্রয়, খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটে দিশেহারা এসব পরিবার। আছে পোকামাকড়ের উপদ্রুপ। সরকারিভাবে যে ত্রাণ সহায়তা পৌছাচ্ছে তা দিয়ে ২ ভাগ লোকও কভার হচ্ছে। বেসরকারি তরফে নেই কোনো তৎপরতা। ফলে মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা এসব এলাকায়। এরই মধ্যে পানি উঠায় ৩৯১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিভিন্নস্থানে বাধ, সড়কসহ নদীপাড়ে দেখা দিয়েছে ভাঙন।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, উত্তরাঞ্চলের বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে দুধকুমার নদ পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৫১ সেন্টিমিটার, ধরলার কুড়িগ্রাম পয়েন্টে ৩১ সেন্টিমিটার, ঘাঘটের গাইবান্ধা পয়েন্টে ২৬ সেন্টিমিটার, ব্রক্ষ্মপুত্র কুড়িগ্রামের নুন খাওয়া পয়েন্টে ৫৩, হাতিয়া পয়েন্টে ৫৬, ধরলা পয়েন্টে ৬৭, যমুনা গাইবান্ধার ফুলছড়ি পয়েন্টে ৭৬, বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ৮৬, সাঘাটা পয়েন্টে ৮২,সারিয়াকান্দি পয়েন্টে ৫৬, কাজিপুর পয়েন্টে ৫৫,জগন্নাথগঞ্জ পয়েন্টে ১১৮, সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ৬১ পোড়াবাড়ি পয়েন্টে ৩১ এবং বাঘাবাড়ির আত্রাই পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি সমতলে সময় বিশেষে বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে তিস্তা নদীর পানি কতিপয় পয়েন্টে স্বল্পমেয়াদে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে এবং ধরলা ও দুধকুমার নদী সংলগ্ন কুড়িগ্রাম জেলার কতিপয় নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সামান্য অবনতি হতে পারে।
এছাড়াও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি আগামী ৭২ ঘণ্টা অবধি ধীর গতিতে হ্রাস পেতে পারে। এর পাশাপাশি আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের যমুনাশ্বরী, করতোয়া, বাঙ্গালী, আপার করতোয়া, পুর্নভবা, টাঙ্গন, ইছামতি-যমুনা, আত্রাই, মহানন্দা এবং ছোট যমুনা নদীর পানি সমতলে সময় বিশেষে বৃদ্ধি পেতে পারে।
এছাড়াও আগামী ২৪ ঘণ্টায় আত্রাই নদীর পানি বাঘাবাড়ী পয়েন্টে বৃদ্ধি পেতে পারে এবং ঘাঘট নদীর পানি সমতল গাইবান্ধা পয়েন্টে হ্রাস পেতে পারে। এর ফলে সিরাজগঞ্জ জেলার আত্রাই নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হতে পারে এবং গাইবান্ধা জেলার ঘাঘট নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। অন্যদিকে আগামী ৭২ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ জেলার ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যার পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে আগামী ২৪ মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এছাড়াও রোববার বিকেলে ৩টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চলের মধ্যে পঞ্চগড়ে ১১০ এবং বদরগঞ্জে ৫৩ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ সময়ে দেশের উজানে পশ্চিম বঙ্গের জলপাইগুড়িতে ১৬৭, শিলিগুড়িতে ১০৪ এবং দার্জিলিংয়ে ২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
এমন পরিস্থিতিতে উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। উত্তরাঞ্চল পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, রোববার (৭ জুলাই) সন্ধ্যায় ৬টায় রংপুরের কাউনিয়া তিস্তা সেতু পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও লালমনিরহাটের ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে তিস্তার পানি বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) বিপৎসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের ৪৪টি গেই খুলে রাখা হয়েছে। ভারতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি হলে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বাংলাদেশে তিস্তায় নদীর পানি আগামী ৪৮ ঘণ্টায় আবারো বাড়া-কমা হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে তিস্তায় গেল ২৭ দিনে ৫ দফায় তিস্তায় পানি বাড়ল বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
এদিকে তিস্তায় পানি বৃদ্ধির কারণে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালিগঞ্জ, আদিতমারী, সদর, নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে পানি উঠেছে। অববাহিকার অন্তত ৫০ হাজার মানুষের বাড়িঘরে পানি উঠেছে। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট। অনেক জায়গায় বিচ্ছিন্ন আছে যাতায়াত। নৌকা-কলার ভেলায় কোনোমতে যাতায়াত করছেন মানুষ। বাড়িঘরে পানি ওঠায় রান্না এবং শিশুদের নিয়ে বিপাকে পানিবন্দীরা। তলিয়ে গেছে উঠতি বাদামসহ ফসলি জমি। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিলেও এসব মানুষের পাশে এখনো পাশে দাড়ায়নি কেউ। পানি নামা শুরু করলেও কমেনি দুর্ভোগ।
তিস্তার পানি কমার সাথে সাথে বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে ভাঙ্গন। রংপুরের গঙ্গাচড়ার মর্নেয়া, কোলকোন্দ, লক্ষিটারী, মর্নেয়া, কাউনিয়ার বালাপাড়ার গদাই, পীরগাছার ছাওলা, তাম্বুলপুর লালমনিরহাটের হাতিবান্দার সিন্দুরনা, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ি, কালিগঞ্জের কাকিনা, আদিতমারির মহিষাখোচ, সদরের খুনিয়াগাছ, কুড়িগ্রামের রাজারহাটের বিদ্যানন্দ, গতিআসাম, বুড়িরহাট, উলিপুরের ঠুটাপাইকর, থেতরাই, বজরা, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের তারাপুর, বেলকা, হরিপুর ইউনিয়নের অন্তত ১২৫ পয়েন্টে ধরেছে ভয়াবহ ভাঙ্গন।
রংপুরের ডিসি মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জানান, রোববার (৭ জুলাই) আমি আমাদের সংশ্লিষ্ট অফিসাররাসহ গঙ্গাচড়ার গজঘন্টা ও মর্নেয়া ইউনিয়ন পরিদর্শন করেছি। বন্যা দুর্গতদের এ পর্যন্ত ৩ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ২০ লাখ টাকা সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী আছে। পানির তোড় বেশি হওয়ায় মর্নেয়ায় একটি ব্রিজ ভেঙ্গে গেছে। সেখানে আমরা যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি আছে আমাদের।
কুড়িগ্রাম, জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, কুড়িগ্রামে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি বৃদ্ধিতে নদ-নদীর অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে ৭ দিন ধরে বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ। অনেকেই ঘর-বাড়ি ছেড়ে গবাদি পশু নিয়ে উঁচু সড়ক ও বাঁধে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনো খাবার সঙ্কটে পড়েছেন চরাঞ্চলের বন্যা কবলিতরা। পাশাপাশি গবাদি পশুর খাদ্য সঙ্কট নিয়েও বিপাকে পড়েছেন তারা। বন্যার পানি ওঠায় জেলার ৯ উপজেলায় ৩৪১টি প্রাথমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদরাসায় পাঠদান সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানিয়েছেন, বন্যা মোকাবেলায় ৩১৭ টন চাল, ২১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ও ১৯ হাজার ৩০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
তবে এই সহযোগিতা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই নগন্য বলে জানিয়েছেন বানভাসীরা। জরুরী ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন সেখানকার অধিকারকর্মী নাহিদ হোসেন।
এদিকে তিস্তার নদীর পানি বৃদ্ধিতে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্দ্ধনে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ২ নম্বর সলিডারী স্পার বাঁধের সিসি ব্লক ধসে পড়েছে। বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করছে তীরবর্তী মানুষ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্ত সেটা কাজে আসেনি। স্থানীয়রা বলছেন যেকোনো মুহূর্তে বাঁধের সামনের অংশের আরসিসি পার্ট ভেসে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হতে পারে। এতে বিস্তৃণ এলাকা ক্ষতির মুখে পড়েবে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার জানান, বাঁধের সিসি ব্লক ধসে যাওয়ায় জরুরিভাবে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন থেকে রক্ষা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে আরো জিও ব্যাগ নেয়া হবে।
অন্যদিকে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের পাশে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা শহর রক্ষা চন্ডিমারী বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। বাঁধের পাশ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীদের। একাধিকবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানালে তারা শুধু পরিদর্শন করে যাচ্ছেন। প্রয়োজনীয় কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না। ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই বাঁধ মেরামত করা না গেলে বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। এতে তিস্তা নদীর গতিপথ উল্টো দিকে চলে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড বাইপাসের পাশে সাধুর বাজার থেকে দক্ষিণ দিকে হাতীবান্ধা শহর রক্ষার্থে একটি বাঁধ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ওই বাঁধটি এলাকায় চন্ডিমারী বাঁধ নামে পরিচিত। সেই বাঁধের ৬০/৭০ ফুট অংশ ধসে যাচ্ছে। জিও ব্যাগ পানিতে ভেসে যাচ্ছে কয়েক দিন ধরে। পানি কমে যাওয়ার ফলে ভাঙন বেড়ে গেছে কয়েক গুণ।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আক্কাস আলী জানান, এই বাঁধ ভেঙে গেলে তিস্তা নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে উল্টো দিকে যাবে। এতে হাতীবান্ধা শহরে তিস্তা নদীর পানি ঢুকে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ দৌলা জানান, স্থানীয়রা বলার পরেই ওই স্থানে কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছিল। তিস্তার পানি বৃদ্ধি হওয়ার ফলে হঠাৎ করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে।
এদিকে ঘাঘট ও যমুনার পানি বৃদ্ধির কারণে উজানের গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলাসহ চার উপজেলার চরাঞ্চল ও নদীর তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়ে দেখা দিয়েছে বন্যা। বন্যায় বাড়ি-ঘরে পানি ওঠায় দুর্ভোগে পড়েছেন ওইসব এলাকার বন্যার্ত মানুষেরা। এ অবস্থায় বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সঙ্কটসহ সাপ ও বিভিন্ন পোকা-মাকড়ের ভয় আঁকড়ে ধরেছে তাদের। কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে বানভাসী মানুষেরা গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ও কঠিন সময়ের শেষ সম্বলটুকু নিয়ে আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন নিকটবর্তী বাঁধে।
জেলা প্রশাসনের হিসেবেই গাইবান্ধার সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ৩৯ হাজার ৮৮৯টি, সুন্দরগঞ্জে ৯টি ইউনিয়নে ৫ হাজার, সাঘাটায় ৮টি ইউনিয়নে ১৫ হাজার ১৫০ ও ফুলছড়ি উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ৭ হাজার ৪৯০টি পরিবার মোট ৬৭ হাজার ৭২৯টি পরিবার পানিবন্দী।
চার উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে ও শিক্ষাঙ্গনের ভেতরে বন্যার পানি উঠায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজ ও মাদরাসাসহ জেলার ৮১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রমও বন্ধ ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বিভাগ। অন্যদিকে, পানিতে নিমজ্জিত ও তলিয়ে গেছে ৩ হাজার ৮৯০ হেক্টর আউশ ধান, পাট, ভুট্টা ও আমন বীজতলা। তলিয়ে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের।
উত্তরাঞ্চল পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, গুরুত্ব বিবেচনায় কিছু কিছু এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন প্রতিরোধের চেষ্টা চলছে।
প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের রংপুর বিভাগীয় উপ-পরিচালক মুজাহিদুল ইসলাম বুলেট জানিয়েছেন, রোববার (৭ জুলাই ) পর্যন্ত বিভাগের ৩৯১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে। এরমধ্যে ৩৭৬টিতে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও ৫১টি স্কুল আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে বানভাসীরা আশ্রয় নিয়েছেন। ৭টি বিদ্যালয় স্থানান্তর করে পাঠ দেয়া হচ্ছে। ৭টি বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন জানান, বন্যায় যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে সরকারিভাবে সব ধরনের আগাম প্রস্তুতি নেয়া আছে। আমরা দুর্গত এলাকায় সরকারি ত্রাণ সহায়তা পৌছে দিচ্ছি। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা আছে। প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সার্বক্ষণিক নদীপাড়ের পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখছেন।
তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি জানান, তিস্তা উত্তরের ২ কোটি মানুষের জীবনরেখা। প্রতিবছর এখানে ২০ হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হয়। প্রায় লাখ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় তৈরি হয়েছে এই অবস্থা। যেহেতু পানি চুক্তি হচ্ছে না। তাই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলেই এই অবস্থার উত্তরণ সম্ভব। আমরা চাই চীন ভারত নয়, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ আগামী শুষ্ক মওসুমেই শুরু করা হোক।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা