২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

নাগেশ্বরীতে পানিবন্দী অর্ধলাখ মানুষ

নাগেশ্বরীতে পানিবন্দী অর্ধলাখ মানুষ - ছবি : নয়া দিগন্ত

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে বন্যার অবনতি। তলিয়ে আছে উপজেলার ১০ ইউনিয়ন ও পৌরসভার তিনটি ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে অর্ধলাখ মানুষ।

দুধকুমার নদের বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মিয়াপাড়া এলাকার দুধকুমার নদের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ১৫০ মিটারের বেশি জায়গাজুড়ে ভেঙে গেছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী দুধকুমারের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে বামনডাঙ্গা, বেরুবাড়ি, কালীগঞ্জ, ভিতরবন্দ, নুনখাওয়া, কচাকাটা, কেদার, বল্লভেরখাষ, নারায়ণপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ ও রায়গঞ্জের কিছু অংশসহ পৌরসভার ৩, ৭, ৮, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা। ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় চৌকির উপর চৌকি বসিয়ে চলছে কোনোমতে একবেলা রান্নার কাজ। ফুরিয়ে আসছে শুকনো খাবারের মজুত। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট। পয়: নিষ্কাষণ সমস্যা প্রকট। বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুকি।

তলিয়ে গেছে প্রায় সকল রাস্তা-ঘাট। অবরুদ্ধ হয়েছে এসব এলাকার মানুষ।

সরেজমিন দেখা গেছে, বামনডাঙ্গার সেনপাড়া ও পৌরসভার পুর্বসাঞ্জুয়ারভিটা গ্রাম থেকে শহরে আসার সেনপাড়া-সাঞ্জুয়ারভিটা, সেনপাড়া-বোয়ালেরডারা ও সেনপাড়া-অন্তাইপাড় এ সড়ক তিনটির ওপর দিয়ে কোথাও কোমড়, কোথাও হাঁটু সমান বন্যার পানি তীব্র স্রোতে প্রবাহিত হচ্ছে। পাড়াপাড়ে কলাগাছের ভেলা তাদের ভরসা। এতে কোথাও দুর্ঘটনা ঘটছে মাঝেমধ্যে।

শুক্রবার ভেলা দিয়ে পাড়াপাড় করতে গিয়ে ডুবে যাওয়া সেচ পাম্পের বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে মারা গেছে দুইশিশু। এরা হলেন কালীগঞ্জ বেগুনীপাড়ার শাহাদৎ হোসেনের দুই মেয়ে সুমাইয়া (১১) ও মাছুমা (৬)। একই দিনে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা গেছে নারায়ণপুর ইউনিয়নের আব্দুর রহমানের ছেলে সিরাজুল ইসলাম।

তথ্যানুযায়ী ভেসে গেছে ২৬৫টি পুকুরের প্রায় ২৪ লাখ টাকার মাছ। নিমজ্জিত হয়ে গেছে ৫০ হেক্টর বীজতলা, আউশ ৬৫ হেক্টর, ২৪ হেক্টর শাক-সবজি, মরিচ আড়াই হেক্টর ও ৮৪ হেক্টর জমির পাটক্ষেত। পানি ঢুকে পড়ায় পাঠদান ও পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়া হয়ে কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসা মিলে ২৩ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ও ৩২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। এ তথ্য নিশ্চিত করেন উপজেলা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। এছাড়া যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা সেখানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীর অনেকেই বন্যার্ত এলাকায় অবরুদ্ধ। তাদেরকেও কর্মক্ষেত্রে যেতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোফাখখারুল ইসলাম জানান, এবারের বন্যায় এ পর্যন্ত ১৫ হাজার পরিবারের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যার অবনতি হওয়ায় এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। তাদের মাঝে সরকারী ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে ৪৫ টন জিআর চাউল ও এক লাখ ৮০ হাজার টাকার শুকনো খাবারের ৬৫০ প্যাকেজ। প্রতি প্যাকেজে দেয়া হয়েছে চাউল, ডাল, চিনি, লবন, তেল। ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর আরো চাহিদা পাঠানো হয়েছে। পেলে তা বিতরণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিব্বির আহমেদ জানান, আমরা সর্বদা খোঁজখবর নিচ্ছি। প্রস্তুত রাখা হয়েছে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রগুলো।


আরো সংবাদ



premium cement