রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা চেয়ারম্যানের শপথে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা
- রংপুর অফিস
- ২৬ জুন ২০২৪, ২১:৪০
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাচন নিয়ে জটিলতা কাটছেই না। নানা নাটকীয়তায় ফলাফল ঘোষনার পর গেজেট প্রকাশ হলেও পরাজিত প্রার্থী রুহুল আমীনের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান মোকাররম হোসেন সুজনের শপথ গ্রহনের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত।
যদিও সুজনের আইনজীবির দাবি, আদেশ বে-আইনি হওয়ায় আপত্তি জানিয়ে শুনানির জন্য আপিল করেছেন তারা। আগামী ৩০ জুন হবে শুনানি। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে সুজন সমর্থকদের মধ্যে। সতর্ক অবস্থায় পরিস্থিতি মনিটরিং করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় দফায় ভোট হয়েছিল গেল ২৯ মে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার। দিনভর শান্তিপূর্ণ ভোট শেষে ফলাফল ঘোষণা নিয়ে তৈরি হয়েছিল নাটক। চেয়ারম্যানপ্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রুহুল আমিনের সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক হাজার ৭৪৩ ভোটে বিজয়ী হয়েছে বলে প্রচারণা চালান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিউজ ফিড ভরে যায় রুহুল আমীনের ফুলের মালার ছবি। রাত ১১টা ২০ মিনিটে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ৮৪৩ ভোট বেশিতে মোকাররম হোসেন সুজনকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষনা করেন। এরপর বদলে যায় দৃশ্যপট। হাওয়া হয়ে যায় ফেসবুকের নিউজ ফিড। রুহুল আমীনের বদলে নিউজ ফিডে জায়গা করে নেয় সুজন। এরপর মোকাররম হোসেন সুজনসহ ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের নাম উল্লেখ করে গত ৪ জুন গেজেট ঘোষণা হয়। আগামী ৩ জুলাই এই শপথের দিনও ধার্য করা হয়।
এ দিকে, গত ১৩ জুন নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে শপথের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে নির্বাচনি ট্রাইবুনাল জেলা যুগ্ম জজ আদালত-১ এ মামলা করেন পরাজিত প্রার্থী রুহুল আমীন।
২৩ জুন শপথের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালতের বিচারক মো: আব্দুল মালেক।
বুধবার ওই আদেশ বেআইনি দাবি করে আপত্তি জানিয়ে আদালতে আপিল করে বিজয়ী প্রার্থী সুজন।
রংপুর জজ আদালতের পিপি আব্দুল মালেক জানান, ‘রংপুর জেলা যুগ্ম জজ আদালতের বিচারক পদাধিকার বলেন রংপুর জেলা নির্বাচনি ট্রাইবুনালের বিচারক। তার আদালতে গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাচনের পরাজিত প্রার্থী মো: রুহুল আমীন বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে মোকাররম হোসেন সুজন, বিভাগীয় কমিশনারসহ ৩৫ জনকে বিবাদী করে শপথ স্থগিত চেয়ে মামলা করেছেন। ওই মামলায় আদালতের বিচারক শপথের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়ে শুনানির দিন ধার্য করেছেন আগামী ৭ জুলাই। এই পরিপ্রেক্ষিতে আপত্তি জানিয়ে বিবাদী মোকাররম হোসেন সুজন আগাম শুনানির জন্য ওই আদালতে পিটিশিন দিয়েছেন। আদালত পিটিশন মঞ্জুর করে আগামী ৩০ জুন শুনানির দিন ধার্য করেছেন। যেহেতু সুজন নিষেধাজ্ঞা রদ চেয়েছেন পিটিশনে। সেহেতু শুনানির পর বিচারকের আদেশ অনুযায়ী পরবর্তী ধাপে মামলা পরিচালিত হবে।’
এ ব্যপারে মোকাররম হোসেন সুজনের আইনজীবি জোবায়দুল ইসলাম বুলেট জানান, ‘নির্বাচনি ট্রাইবুনালের আইনেই এ ধরনের মামলার বিষয়ে সব কিছু বলা আছে। সেখানে বলা আছে যদি কোনো বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিতে হয়, তাহলে দুই পক্ষের শুনানি করে তা দিতে বলা হয়েছে। এক পক্ষের কথা শুনে সেটা দেয়া যাবে না। কিন্তু এখানে এক পক্ষের কথা শুনে আদেশ দেয়া হয়েছে। সরকার পক্ষ বিভাগীয় কমিশনারকেও এখানে বিবাদী করা হয়েছে। এটা বেআইনি হয়েছে।’
কেন ওই আদেশ আইনসিদ্ধ হয়নি, ওই ব্যাখ্যা দিয়ে অ্যাডভোকেট জোবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘আদেশটা ঠিক হয়নি। আদেশটা ইললিগ্যাল হয়েছে। যেহেতু সাত দিনের মধ্যে উভয়পক্ষকে না শুনেই আদেশ হয়েছে। ওই কারণে এই আদেশ ইললিগ্যাল আদেশ হিসেবে আসবে। আর্টিকেল থারটি নাইন টু ফাইভে বলা আছে সরকারের বিরুদ্ধে একতরফা শুনে কোনোভাবেই নিষেধাজ্ঞা দেয়া যাবে না, না, না। সেখানে আমাদেরকে না শুনে এই আদেশ দেয়া হয়েছে। এটা বেআইনি হয়েছে। আমরা আদালতকে এটা বলেছি। আদালত আমাদের কথা শুনেছেন। আগামী ৩০ জুন তিনি শুনানির দিন ধার্য করেছেন। আমরা আশা করি, শুনানিতে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।’
জোবায়দুল জানান, ‘আরেকটা বিষয় হলো সরকার চাইছে সুষ্ঠু নির্বাচন। এবার সারাদেশে যেভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। এই ধরনের হাইফোথিক্যাল মামলায় তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। কারণ গঙ্গাচড়ার নির্বাচনে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। দেশে কোন ইলেক্ট্রনিক্স, প্রিন্ট এবং অনলাইন প্রচারমাধ্যমে নির্বাচনে অনিয়মের কোন সংবাদ প্রচার হয়নি। কিংবা পরাজিত প্রার্থী নির্বাচনের সময় অথবা পরে কোন ধরনের ভায়োলেশন, ভোট কেন্দ্রে বিশৃংখলা, ব্যালট বক্স ছিনতাই, জোড় জবরদস্তি কিংবা অনিয়ম হয়েছে এ ধরনের কোনো অভিযোগ করেনি। এ কারণে এ ধরনের হাইফোথিক্যাল মামলা সরকারের সদিচ্ছা এবং নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।’
অ্যাডভোকেট জোবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো সময় যদি একপক্ষকে না শুনে অন্তবর্তিকালীন কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় তাহলে সাত দিনের মধ্যেই দুই পক্ষের কাছ থেকে শুনে সেটাকে ডিসপোজাল করতে হবে অথবা অর্ডার পাশ করতে হবে। কিন্তু আমাদেরকে না শুনেই ইনজানকশন দেয়া হয়েছে। এটা আইনে বার। এটা করা যাবে না। সেই জন্য আমরা ওই ক্লোজের ওপর সাত দিনের মধ্যে শুনানি চেয়েছি।’
জোবায়দুল জানান, ‘আইন অনুযায়ী গেজেট প্রকাশের ১ মাসের মধ্যে শপথ নিতে হবে। এরপরে শপথ নেয়া যাবে কি না সেটা বলা নাই। সে অনুযায়ী, বাধ্যতামূলক আগামী ৩ জুলাইয়ের মধ্যেই শপথ নিতে হবে।’
বিজয়ী প্রার্থী মোকাররম হোসেন সুজন জানান, ‘নির্বাচনে আমি জনগেণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। আমার ফলাফল ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়েছেন পরাজিত প্রার্থী রুহুল আমীন। আমার নামে গেজেট হয়েছে। এখন তিনি অন্তিম মুহূর্তে আমার শপথ আটকানোর চেষ্টা করছেন। তিনি সরকারি দলের লোক হয়েও আদালতকে ভুল তথ্য দিয়ে তিনি একটা আদেশ নিয়েছেন। আমরা ওই আদেশে আপত্তি জানিয়ে আদালতে আপিল করেছি। আদালত আমার কথা শুনেছেন। ৩০ তারিখ দিন দিয়েছেন। আশা করি, স্বাক্ষর দিন ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সকল ষড়যন্ত্রে মোকাবেলা করে শপথ নিয়ে চেয়ারে বসে আমি জনগনের জন্য কাজ করবো। ইনশাআল্লাহ।’
মামলার বাদি পরাজিত প্রার্থী রুহুল আমীন বলেন, ‘আমি মামলা করেছি স্পস্টভাবে। ভুল বোঝানোর কোনো উপায় নেই। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’
এই নির্বাচনে ২৯ হাজার ৪১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন মোকাররম হোসেন সুজন। তিনি অব্যাহতি পাওয়া বিএনপি নেতা। দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় বিএনপি তাকে অব্যাহতি দিয়েছে।
এ দিকে, এ ঘটনায় গঙ্গাচড়া উপজেলা জুড়ে সুজন সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সজাগ আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি অ্যান্ড মিডিয়া) ইফতেখায়ের আলম জানান, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত আছি। গঙ্গাচড়ার সবখানেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থায় আছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা