২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

গঙ্গাচড়ায় নানা নাটকীয়তার পর বিএনপি নেতা সুজনকে চেয়ারম্যান ঘোষণা

দফায় দফায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অ্যাকশন
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন মোকাররম হোসেন সুজন - ছবি : নয়া দিগন্ত

নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি থেকে শোকজ পাওয়া নেতা মোকাররম হোসেন সুজন।

এদিকে, রাতে ফলাফল ঘোষণার সময় কন্ট্রোলরুমে স্থানীয় এমপির প্রবেশকে ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেট, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ এবং লাঠিচার্জে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার (৩০ মে) রাত ১০টায় গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাচনের কন্ট্রোল রুমে স্থানীয় এমপি আসাদুজ্জামান বাবলু প্রবেশ করলে তার প্রতিবাদ জানান ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী মোকাররম হোসেন সুজন ও তার কর্মীরা।

এসময় প্রার্থী সুজন সেখানে উপস্থিত হওয়া এমপিকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আচরণবিধি অনুযায়ী আপনি এখানে আসতে পারেন না। আপনি এখানে কেন। এখান থেকে চলে যান। হয় মরবো, না হয় মারবো। তবুও কোনো অনিয়ম হতে দিবে না।‘

এমপির কন্ট্রোল রুমে অবস্থান নিয়ে দেখা দেয় উত্তেজনা। পরিস্থিতি সামাল দিতে উপজেলা ক্যাম্পাসে থাকা ঘোড়া প্রতীকের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে লাঠিচার্জ এবং রাবার বুলেট ছুড়ে সরিয়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসময় সুজনের সমর্থকদের ওপর ইটপাটকেল ছুড়তে দেখা যায় স্থানীয় সরকারদলীয় নেতাকর্মীদেরও। এতে ছররা গুলিতে ছয়জনসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন। পরে ওই মাঠ দখল করে নেয় আওয়ামী লীগ নেতা কাপ পিরিচ প্রতীকের রুহুল আমিনের সমর্থকরা।

পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ তামান্না এমপি বাবলুকে অনুরোধ করে কন্ট্রোল রুম থেকে সরিয়ে দেন।

এর আগে সন্ধ্যার পর থেকেই রুহুল আমিনের সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ১ হাজার ৭৪৩ ভোটে বিজয়ী হয়েছে বলে প্রচারণা চালান। এমনকি রুহল আমীনকে ফুলের মালা দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে থাকেন নেতাকর্মীরা। ফেসবুকের ফিডে ছড়িয়ে যায় সেই ছবি। এনিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হলে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে উপজেলার সদরে। সুজনের হাজার হাজার সমর্থক ক্যাম্পাসের বাইরে রাস্তায় ও অলিগলিতে অবস্থান নেয়।

এই পরিস্থিতির মধ্যে রাত ১১টা ২০ মিনিটে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ৮৪৩ ভোট বেশিতে মোকাররম হোসেন সুজনকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করেন। তিনি জানান, ঘোড়া প্রতীকে মোকাররম হোসেন সুজন পেয়েছেন ২৯ হাজার ৪১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কাপ পিরিচ প্রতীকের রুহুল আমীন পেয়েছেন ২৮ হাজার ২০৮ ভোট।

এই ঘোষণার পরপরই আবারো উপজেলা ক্যাম্পাস দখলে নেয় সুজনের সমর্থকরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে আবারো লাঠিচার্জ করে কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে বিশাল বহর নিয়ে কন্ট্রোল রুমে থেকে বের হয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায় মানুষকে হাত নেড়ে কৃতজ্ঞতা জানান সুজন। এরপর ‍বৃষ্টি ভেঙে যান বড়াইবাড়ি এলাকার নিজ বাড়িতে। সেখানে বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজার হাজার কর্মী অংশ নেন। পরে তিনি সেখানে সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন।

এসময় সুজন তার সমর্থকদের বলেন, ‘নানাভাবে নাটকীয়তা করে আমাদের বিজয় ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু আল্লাহর রহমতে সেটা হয়নি। আইনশৃঙখলা বাহিনী আপনাদের কয়েক দফায় পিটিয়েছে। রাবার বুলেট ছুড়েছে। আপনারা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। একজন মেম্বার অজ্ঞান হয়েছে। বহু নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তারপরেও আপনারা মাঠ ছেড়ে যাননি। এজন্য আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ তামান্না জানান, ‘এমপি স্যার কন্ট্রোল রুমে এসেছিলেন। আমি তাকে অনুরোধ করে সরিয়ে দিয়েছি। সেসময় সামান্য উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। উপজেলায় সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখানে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন মোকাররম হোসেন সুজন। তিনি ঘোড়া প্রতীকে পেয়েছেন ২৯ হাজার ৪১ ভোট। ভাইস চেয়ারম্যান পদে বই প্রতীক নিয়ে ২৪ হাজার ৪৩ ভোট পেয়ে আনারুল ইসলাম মুকুল নির্বাচিত হয়েছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ফুটবল প্রতীকে হাবিবা আক্তার ১৮ হাজার ১০১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন।’

এমপি আসাদুজ্জামান বাবলু বলেন, ‘আমি ইউএনও অফিসে গিয়েছিলাম পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য। গিয়েই ফিরে এসেছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিধি অনুযায়ী তাদের ব্যবস্থা নিয়েছে। ভোট সুষ্ঠু ও গ্রহণয়োগ্য হয়েছে। আর মোকাররম হোসেন সুজনের অভিযোগ সঠিক নয়। বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী সুজন আতংক তৈরি করার জন্যই শুরু থেকেই আমার বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ করেছেন। তিনি হেরে গেলেও একই অভিযোগ করতেন। এরা এরকমই। না আসবো বলেও নির্বাচনে আসে। জিতলে ভালো। হারলে বলে প্রভাব বিস্তার। এদের কথায় কান দিতে নেই।‘

বিজয়ী সুজন জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতা। নির্বাচনে অংশ নেয়ায় তাকে কারণ দর্শন নোটিশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। এখানে বিএনপি থেকে কামরুজ্জামান লিপ্টন নামের আরেকজন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তিনি ১৭ হাজার ১০৮ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। তাকেও বিএনপি থেকে শোকজ করা হয়েছে। এখানে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান চেয়ারম্যান রুহুল আমীন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও আরো তিনজন প্রার্থী ছিলেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। এখানে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান পেয়েছেন মাত্র ৪২২ ভোট।


আরো সংবাদ



premium cement
৭ উইকেট তুলে নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চেপে ধরেছে বাংলাদেশ লাখ টাকার প্রলোভনে শাহবাগে এত লোক কিভাবে এলো? কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে কয়েদির মৃত্যু হিজবুল্লাহ কমান্ড সেন্টারে ইসরাইলি হামলা রাজশাহীতে প্রথম আলো পত্রিকায় আগুন ও সাইনবোর্ড ভাঙচুর রোহিঙ্গাদের আশ্রয়স্থলের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে : পররাষ্ট্র সচিব আড়াইহাজারে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, আহত ১৬ শ্রম সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রগতিতে মার্কিন প্রতিনিধিদলের প্রশংসা আইপিএলে রেকর্ড গড়লেন ১৩ বছর বয়সী বৈভব সিলেটে ট্রাক ও বাসচাপায় নিহত ২ মানিকগঞ্জে প্রলোভন দেখিয়ে শাহাবাগে লোক নেয়ার মূলহোতা দবিরসহ আটক ৫

সকল