২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ময়মনসিংহে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মা ও আহত শিশুর পরিচয় মিলেছে

বেঁচে যাওয়া চিকিৎসাধীন দেড় বছর বয়সী শিশুর জায়েদ। - ছবি : নয়া দিগন্ত

ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে দুই দিন পড়ে থাকা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভালুকা উপজেলার স্কয়ার মাস্টারবাড়ি এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মা ও বেঁচে যাওয়া চিকিৎসাধীন শিশুর পরিচয় মিলেছে। মায়ের নাম জায়েদা খাতুন (৩২)। তিনি সিলেট সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার খুশিউড়া গ্রামের বাসিন্দা মো: রমিজ উদ্দিনের মেয়ে। বেঁচে যাওয়া দেড় বছর বয়সী শিশুর নাম জায়েদ। শিশুটি এখন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আইনি অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ভরাডোবা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: আতাউর রহমান জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ৩টার দিকে স্কয়ার মাস্টার বাড়ি এলাকায় ওই শিশু ও তার মা সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন। তবে কীভাবে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা জানা যায়নি। পরে ৯৯৯ কল পেয়ে পুলিশ ওই শিশু ও তার মাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ভালুকা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। চিকিৎসাধীন অবসন্থায় মা মারা যান। আহত শিশুটি মাথায় আঘাত নিয়ে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

ওয়ার্ডের চিকিৎসক ফারজানা জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মায়ের মৃত্যু হয়েছে। অবুঝ শিশুটি হাসপাতালে অঝোড়ে কান্নাকাটি করছিল। উপস্থিত লোকজন শিশুটিকে কোলে নিয়ে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করেন। হাসপাতালে শিশুটির চিকিৎসা নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে।

এদিকে মাতৃহারা এ শিশুটির চিৎকারে হাসপাতালের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। নেটিজেনরা আবেগতাড়িত হয়ে পরিচয় জানতে চেয়ে নিজেদের টাইমলাইনে শিশুটির ছবিসহ পোস্ট করতে থাকেন। ফেসবুকে মায়ের মৃত্যু ও আহত শিশুটি চিকিৎসাধীন থাকার খবর দেখে ময়মনসিংহে ছুটে আসেন নিহত জায়েদা খাতুনের বড় ভাই মো: রবিন মিয়া। তিনি জানান, ফেইসবুকের মাধ্যমে জায়েদার মৃত্যুর খবর পেয়ে থানা পুলিশের সাথে কথা বলে লাশ নিতে আসেন। তার বোনের বেঁচে যাওয়া দেড় বছর বয়সী শিশু ছেলের নাম জায়েদ বলেও জানান তিনি।

ভালুকা হাইওয়ে থানার পুলিশের কর্মকর্তা মো: বাবুল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, গাজীপুর জেলার কাপাশিয়া উপজেলার কাপাশিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো: ফারুক মিয়ার সাথে নিহত জায়েদার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। ফারুক কফিল উদ্দিনের ছেলে। ফরুকের ঘরে প্রথম স্ত্রীসহ তিনটি সন্তান রয়েছে। যে কারণে জায়েদার বিয়ে মেনে নেয়নি ফরুকের পরিবার। ফলে জায়েদার সাথে তার স্বামীর যোগাযোগ না থাকায় স্কয়ার মাস্টারবাড়ি এলাকায় শিশু জাহিদকে নিয়ে বসবাস করতেন। ধারণা করা হচ্ছে ঘটনার দিন রাতে তিনি রাস্তা পারাপার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন।

নিহত জায়েদা খাতুনের স্বামী ফারুক মিয়া পেশায় ট্রাকচালক। তিনি জানান, প্রায় ৭/৮ বছর আগে জায়েদাকে দ্বিতীয় বিয়ে করি। কিন্তু তার পরিবার বিয়ে মেনে নেয়নি। তার সাথে বিয়ে হওয়ার পর জায়েদা আরো তিনটি বিয়ে করেছেন। এখন তিনি প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে স্কয়ার মাস্টার বাড়ি এলাকায় বসবাস করছেন। জায়েদা খাতুনও তার ছেলেকে নিয়ে স্কয়ার মাস্টার বাড়ি এলাকায় বসবাস করতেন। তবে নির্দিষ্ট ঠিকানা জানা ছিল না। গত এক মাসে তার সাথে জায়েদার তিনবার দেখা হয়েছে। ফেসবুকের মাধ্যমে জায়েদার মৃত্যুর খবর পান তিনি।

ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার গোলাম ফেরদৌস জানান, আল্লাহর রহমতে শিশুটি সুস্থ আছে। ওয়ার্ডে কর্মরত কর্মীরা তার দেখভাল করছেন। আইনি অভিভাবক না পাওয়া পর্যন্ত শিশুটি হাসপাতাল ও পুলিশের তত্ত্বাবধানে থাকবে।


আরো সংবাদ



premium cement