২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

পানিশূন্য যমুনাশ্বরী, মৎস্যজীবীদের মানবেতর জীবনযাপন

- ছবি : নয়া দিগন্ত

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার যমুনেশ্বরী, ঘাঘট, আঁখিরা নদী শুকিয়ে যাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন মৎস্যজীবী পরিবারগুলো। প্রায় দেড় মাস আগে শুষ্ক মৌসুম শুরুর আগেই নদীগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় সহস্রাধিক জেলে পরিবার বেকার হয়ে পড়েছে। খেয়ে না খেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। তাদের অনেকেই পরিবারের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দিতে বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যোগ দিয়েছেন।

মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়া মাসিমপুর বড় বালা মিলনপুর, পায়রাবন্দ, ভাংনী, মির্জাপুর, ইমাদপুর ইউনিয়নের বুক চিরে যমুনেশ্বরী, ঘাঘট, আখিরা নদী প্রবাহিত। বর্তমানে পানিশূন্য হয়ে পড়ায় নদীর তীরবর্তী মাঝিপাড়া কেশবপুর ছড়ান, উঁচা বালুয়া, জানকীপুর, সাহালামপুর, বড় বালা একডালা উঁচা বালুয়া, হাঁছিয়া, হেলেঞা, কেশবপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের বেশিভাগ জেলে পরিবারে অভাব। অনেক পরিবারের চুলায় হাঁড়ি চড়ছে না। তারা রিকশা/ভ্যান চালানো বা অন্য কোনো পেশায় যোগ দিয়েছেন, তারা কোনো মতে দিনশেষে পরিবারের জন্য দু’তিন কেজি চাল নিয়ে ঘরে ফিরতে পারছেন। অন্যদের পরিবারে শুধু হাহাকার।

জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে যমুনেশ্বরী, ঘাঘট, আখিরা নদী শুকিয়ে যাওয়ায় ছেলেদের অনেকে সাল নৌকা ছেড়ে কেউ রাজমিস্ত্রি লেবার, কেউ মুটের কাজ, কেউ মাছের আড়তের শ্রমিক, কেউ মুরগির দোকানের মজুর, কেউ চুল কাটা সেলুনের নর সুন্দর হয়েছে। অনেকে বেছে নিয়েছে রিকশা ও ভ্যানচালকের পেশা।

এ দিকে, উপজেলার হাঁছিয়া গ্রামের সুধীর চন্দ্র নদীতে মাছ ধরে সংসার চালাতেন। নদীতে পানি না থাকায় তিনি এখন রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দিয়েছেন। মাঝিপাড়া গ্রামের শ্রীকান্ত কয়েক বছর আগেও তিনি নদীতে মাছ ধরতেন। কিন্তু নদী শুকিয়ে যাওয়ায় তিনি বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে তিনি এখন সেলুনে কাজ করেন। মাছ তিনি এখন কিনে খান। তার মতোই পেশা বদল করেছেন অনেকে। সুরেশ কমলকান্ত, ধীরেনচন্দ্র, অধীরচন্দ্রসহ কমপক্ষে এক শ’ পরিবার।

উপজেলা মৎস্য দফতর সূত্র জানায়, উপজেলায় জেলে পরিবারের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে কার্ডধারী তালিকাভুক্ত তিন হাজার ২৭ জন। কার্ড নেই এমন পরিবারের সংখ্যাই বেশি।

উপজেলা মৎস কর্মকর্তা হকিবুর রহমান জানান, জেলেদের সমস্যার বিষয়টি তারা জেনেছেন। নদীতে পানি না থাকায় অনেক জেলে পরিবার কষ্টে আছেন। সরকারি কোনো অনুদান বা সহায়তা এলে অবশ্যই তাদের দেয়া হবে। নদীর পানি প্রবাহ ধরে রাখতে নদী খননের মতো প্রকল্প আমাদের হাতে নেই। পানি প্রবাহ কম ও শুকিয়ে যাওয়াসহ জেলে পরিবারের দুর্দিনের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত আছেন।


আরো সংবাদ



premium cement