২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বালিয়াডাঙ্গীর ভাতাভোগীদের টাকা প্রতারক চক্রের হাতে

বালিয়াডাঙ্গীর ভাতাভোগীদের টাকা প্রতারক চক্রের হাতে - ছবি : নয়া দিগন্ত

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে গত এক মাসে থানায় অন্তড ১৫টি জিডি হয়েছে। অনেকে সমাজ সেবা কার্যালয়ে মৌখিক অভিযোগ করেছেন। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে অনেক সুবিধাভোগী সরকারি ভাতার টাকা হারাচ্ছেন।

প্রতারক চক্র নানা কৌশলে তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ বিষয়ে গত এক মাসে থানায় অন্তত ১৫টি জিডি হয়েছে। এর বাইরে অনেকে সমাজসেবা কার্যালয়ে মৌখিক অভিযোগ করেছেন।

১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরের সমাজসেবা অধিদফতর থেকে সারা দেশে দুস্থ, বিধবা, অসহায় বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকারি সুবিধাভোগী ভাতা চালু করা হয়।

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আটটি ইউনিয়নে ১২ হাজার ৪২৬ জন বয়স্ক, ১৫ হাজার ১২০ জন বিধবা ও চার হাজার ৭৩ জনের নামে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড রয়েছে। কার্ডধারী প্রত্যেক বিধবার নামে বরাদ্দ প্রতি মাসে ৫০০ টাকা, বয়স্কদের ৬০০ টাকা ও প্রতিবন্ধীদের ৮৫০ টাকা। সেই হিসাবে তিন মাস পরপর এক বছরে চার কিস্তিতে তাদের টাকা দেয়া হয়। গত বছর থেকে এসব কার্ডধারীদের মোবাইলে নগদ হিসাব নম্বর খুলতে বলা হয়। সেই হিসাব নম্বরে ভাতার টাকা পাঠানো হয়।

ভাতাভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশ কার্ডধারীরা টাকা তোলার সময় তাদের মোবাইলে হিসাব নম্বরের গোপন পিনকোড এজেন্টদের কাছে বলে দেন। এজেন্টরা গোপন পিনকোড প্রতারক চক্রকে জানিয়ে দেয়। এভাবে প্রতারক চক্র টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

দুওসুও ইউনিয়নের লালাপু গ্রামের মোমিনা খাতুন বিধবা ভাতা পান। তিনি বলেন, ‘আমার মোবাইলে এক ব্যক্তি সমাজসেবা অফিসের লোক বলে পরিচয় দিয়ে ছয় সংখ্যার একটি মেসেজ (খুদে বার্তা) দেন। সেই মেসেজে সংখ্যাটি আমাকে বলতে বলেন। সেই সংখ্যা বলার পর মোবাইল থেকে টাকা নাই হয়ে গেছে।‘

প্রতারণার শিকার কয়েকজন থানায় জিডি করেছেন। অনেকে সমাজসেবা অফিসে মৌখিক অভিযোগ করেছেন।

বালিয়াডাঙ্গী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফিরোজ কবীর বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে কৌশলে কয়েকজনের কিছু টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব না হওয়ায় প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বলেন, এ ধরনের অভিযোগ শুধু বালিয়াডাঙ্গীতে নয়, সারা দেশে একই অবস্থা হয়েছে। তথ্যপ্রমাণের অভাবে প্রতারক চক্রকে চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে প্রতারক চক্রের দৌরাত্ম বন্ধ হচ্ছে না।

চরম প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সমাজসেবা অধিদফতরের বয়স্ক ভাতাভোগীরা। কিছুদিন পর পর বিকাশ নম্বর পরিবর্তন করে বয়স্কভাতার টাকা তুলে নিচ্ছেন একটি প্রতারকচক্র। আবার অনেকেই জানেনইনা যে তাদের নামে বয়স্ক ভাতা হয়েছে। ভাতাভোগীর তথ্য নিদিষ্ট কোনো লোকের হলেও বিকাশের নম্বর একটি চক্র ব্যবহার করে টাকা তুলে আত্মসাৎ করছে বলে সমাজ সেবা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে।

টাকা আত্মসাৎকারী চক্রটি সনাক্ত হলেও আপোষ রক্ষা ছাড়া কোনো আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ফুলতলা গ্রামের বৃদ্ধ আব্দুল স্থানীয় ভাষায় বোঝাতে চেয়েছে, ‘আমি নয় মাস ধরে বয়স্কোভাতার টাকা পায় না’ কেন পায় না, বার বার অফিসে গেলেও কোনো সমাধান পাইনি আমি। সমাজ সেবা অফিস গেলে তারা বিকাশ অফিসে যেতে বলে, আবার বিকাশ অফিসে গেলে তারা সমাজ সেবা অফিসে যেতে বলে।

এ সময় তিনি কান্নাজনিত কণ্ঠে আরো বলেন, এখন কাজ কামও কম, এই বয়সে কাজ কামের জন্য কেউ নিতেও চায় না। তিন মাস পর পর বয়স্কভাতার টাকা তুলে কোনো রকমে দিন কাটানোর একমাত্র ভরসা ছিল। এখন সেই বয়স্কভাতার টাকা বিকাশের মাধ্যমে প্রতারক চক্র তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করায় মানবেতর দিন যাপন করতে হচ্ছে।

জানা গেছে, নয় মাস ধরে তার বয়স্ক ভাতার টাকা তার বিকাশ নম্বর না গেয়ে অন্যজনের বিকাশ নম্বরে টাকা চলে যাচ্ছে। এভাবেই টাকা আত্মসাৎ করে আসছে। কার বিকাশ নম্বরে টাকা যাচ্ছে তা অফিস জানাতে নারাজ হচ্ছেন।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের আমতলা গ্রামের আহম্মদ আলী (৯০) একই কথা বলেন, শুধু আব্দুল আর আহম্মদই নয় এদের মতো অসংখ্য বয়স্ক মানুষ একই কথা বলেন।


আরো সংবাদ



premium cement