বালিয়াডাঙ্গীতে ভারতের দখলে থাকা ৯১ বিঘা জমি পুনরুদ্ধারে আনন্দ উৎসব
- বালিয়াডাঙ্গী (ঠাকুরগাঁও) সংবাদদাতা
- ২২ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:৩২
দীর্ঘ ৭০ বছর ভারতের দখলে থাকার পর ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বেউরঝাড়ি ও জগদল সীমান্তবর্তী ৯১ বিঘা বাংলাদেশী জমি উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বাংলাদেশ শুধু নয়, ভারতও পেয়েছে ২৩ দশমিক পাঁচ বিঘা জমি। এতে দেখা গেছে সীমান্তবাসীদের আনন্দ উৎসব।
উদ্ধার জমিতে সাদা পতাকা (নিশানা) টানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশী সীমান্তরক্ষী বাহিনী।
সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত ৯১ বিঘা জমিতে প্রবেশের অধিকার ফিরে পাওয়ায় সীমান্তবর্তী মানুষের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে। জমিগুলো উদ্ধারে প্রায় এক মাস আগে কাজ শুরু করে বিজিবি।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও ব্যাটালিয়ন (৫০ বিজিবি)-এর সুচারু পরিকল্পনা এবং সময়োপযোগী উদ্যোগে বাংলাদেশ ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের প্রতিনিধি দলের সাথে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ ও সমন্বয় সাধন করে তারা। সে হিসেবে অধীনস্থ বেউরঝাড়ী এবং জগদল বিওপির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশ-ভারতের সার্ভে বিভাগের যৌথ জরিপের মাধ্যমে ভারতের দখলে থাকা জগদল বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় প্রায় ১৫ বিঘা জমি এবং বেউরঝাড়ি বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় প্রায় ৭৬ বিঘা জমি (মোট ৯১ বিঘা) উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশের অনুকূলে প্রাপ্ত জমির মধ্যে ৭৭ বিঘা আবাদি জমি, ১১ বিঘা চা বাগান ও তিন বিঘা নদীর চর রয়েছে।
ঠাকুরগাঁও ব্যাটালিয়ন স্ট্রীপ ম্যাপ পর্যালোচনা করে পূর্ব থেকেই নিশ্চিত ছিল যে জমিগুলো বাংলাদেশের। বিজিবির আহ্বানে বিজিবি ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মধ্যে অনুষ্ঠিত পতাকা বৈঠকে জমিগুলো বাংলাদেশের বলে বিজিবির পক্ষ হতে জোরাল দাবি উপস্থাপন করা হয়। পরে বিজিবির পক্ষ হতে আরো বলা হয়, বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য সার্ভেয়ারের মাধ্যমে যৌথ জরিপের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
পরে ৬ ও ৭ মার্চ বাংলাদেশ ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের সহকারী জরিপ ও চার্জ অফিসার এবং ভারতীয় সার্ভে বিভাগের সহকারী চার্জ অফিসারের সমন্বয়ে বিজিবি ও বিএসএফের উপস্থিতিতে ঠাকুরগাঁও ব্যাটালিয়নের অধীনস্থ বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বেউরঝাড়ী এবং জগদল বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় সীমানা নির্ধারণের লক্ষ্যে যৌথ জরিপ ও পরিদর্শন অনুষ্ঠিত হয়। সেই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ৬ মার্চ জগদল বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে প্রায় ১৫ বিঘা ভারতের দখলে থাকা জমি বাংলাদেশের অনুকূলে পাওয়া যায় এবং অপরদিকে প্রায় সাত দশমিক পাঁচ বিঘা বাংলাদেশের দখলে থাকা জমি ভারত পায়। এরপর ৭ মার্চ বেউরঝাড়ি বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে প্রায় ৭৬ বিঘা ভারতের দখলে থাকা জমি বাংলাদেশের অনুকূলে পাওয়া যায়।
অপরদিকে প্রায় ১৬ বিঘা বাংলাদেশের দখলে থাকা জমি ভারত পায়। জরিপে বাংলাদেশের প্রাপ্ত জমির পরিমান ৯১ বিঘা এবং ভারতের প্রাপ্ত জমির পরিমান ২৩ দশমিক পাঁচ বিঘা।
বাংলাদেশ ও ভারতের সার্ভে বিভাগের যৌথ জরিপের মাধ্যমে প্রাপ্ত বাংলাদেশী জমিগুলো স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে প্রকৃত মালিকের কাছে হস্তান্তরের লক্ষ্যে ঠাকুরগাঁও ব্যাটালিয়ন (৫০ বিজিবি)-এর পক্ষ হতে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসনের সাথে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করা হয়েছে।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বেউরঝাড়ী সীমান্তবর্তী এলাকার ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধ আনছারুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ছোটকাল থেকেই দেখে আসছি এই জমিগুলো ভারতের অধীনে এবং ভারতের লোকজন এগুলাতে চাষ করে আসছে। কিছুদিন আগেই জমিতে একজন বাংলাদেশী যাওয়ার কারণে তাকে গুলি করে মারা হয়। প্রায় ৭০ বছর পর আমরা জমিগুলো ফিরে পেয়েছি। এতে আমাদের মধ্যে অনেক বেশি আনন্দ-উৎসাহ বিরাজ করছে। আজকে থেকেই জমিগুলো আমরা চাষবাদ করতে পারব এবং এইগুলো বাংলাদেশের জমি, যেগুলো এতদিন ভারতের মানুষ ভোগ করে আসছিল।’
ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবির অধিনায়ক লেলেফটেন্যান্ট কর্নেল তানজীর আহম্মদ বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে বুঝতে পারি যে এই জমিগুলো বাংলাদেশের এবং বেউরঝাড়ি ও জগদল সীমান্তের কিছু অংশ বাংলাদেশের জমি হিসেবে আমরা ধারণা করি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ভারতের সাথে কথা বলি এবং জরিপ করার জন্য আহ্বান জানাই। তাদেরকে আমরা অনুরোধ করি যে তারা যেন প্রকৃতপক্ষেই জমির মাপের কাজটি করা হয়। বাংলাদেশ বিজিবি এবং বিএসএফের যৌথ জরিপের মাধ্যমে আমরা এই জমিগুলো পেয়েছি।’
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘বিজিবি এবং বিএসএফের যৌথ জরিপের মাধ্যমে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বেউরঝাড়ী ও পাশ্ববর্তী জগদল সীমান্তের বাংলাদেশের ৯১ বিঘা জমি উদ্ধার করে। উদ্ধার জমি যাচাই-বাছাই করে বণ্টন করা হবে।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা