০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, empty
`

রংপুরে বাড়ছে ভালোবাসার ফাঁদে যৌনতা ও জিম্মি বাণিজ্য

- প্রতীকী ছবি

রংপুর মহানগর এলাকায় ক্রমেই বাড়ছে ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে যৌনতা ও জিম্মি বাণিজ্যের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া প্রতারক চক্রের দৌরাত্ম্য। প্রথমে প্রেম-ভালোবাসা, তারপর উদাম যৌনতা, পরে ভিডিও করে ইন্টারনেটে প্রচার ও মৃত্যুর ভয়-ভীতি দেখিয়ে জিম্মি করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। এমন অভিযোগে ছয় নারীসহ ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ। এর মধ্যে দু’জন কলেজছাত্রী ও একজন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যের স্ত্রীও রয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গতকাল শুক্রবার ভোর পর্যন্ত নগরীর ধাপ, নুরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় ১৩টি মোবাইল, তিনটি এটিএম কার্ড এবং নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে রংপুর কোতোয়ালি থানায় এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রশিদ। তিনি বলেন, নগরীতে সরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার লোকজনকে গ্রেফতারকৃত প্রতারক সিন্ডিকেটের নারী সদস্যরা প্রথমে সোস্যাল মিডিয়া এবং ফোনের মাধ্যমে প্রেম-ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে। পরে তাদের নগরীর নিজস্ব এবং ভাড়া করা বাসায় নিয়ে গিয়ে উদাম যৌনতায় মেতে উঠে। এভাবে কিছুদিন চলার পর ফাঁদে পড়া পুরুষদের চক্রটির পুরুষ সদস্যরা জিম্মি করে ভিডিও করত। পরে সেই ভিডিও ভাইরাল করা এবং মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়া হতো।

ওসি জানান, এই ভালোবাসার ফাঁদে পড়া নীলফামারীর জলঢাকার এক ব্যবসায়ীর মামলার ভিত্তিতে আমরা মূল হোতা নগরীর ধাপের গাইবান্ধা বিআরসিটি বাস কাউন্টারের পেছনের ভাড়াবাসা থেকে বীনা রানী ওরফে মুক্তা ওরফে সুমিকে গ্রেফতার করি। ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বীনা রানী চক্র আড়াই লাখ এবং তার বন্ধুর কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। বীনা নগরীর নুরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় চারটি বাসা ভাড়া নিয়ে ছাত্রীসহ বিভিন্ন পেশা ও বয়সী নারীদের দিয়ে এই নানা সেক্স ও প্রতারণার বাণিজ্য করতেন। তার নামে মানব পাচারের অভিযোগে দু’টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে এই চক্রের একটি বড় অংশের সন্ধান মেলে। পরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার ভোর রাত পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সিন্ডিকেটের হোতা সোহাগী ওরফে রাজিয়া (৩২), কলেজছাত্রী জোনাকী ওরফে তিশা (২১) ও জান্নাতুল ফেরদৌস ওরফে জান্নাতি (২০), শাহনাজ (৩৫, লীজা মনি (২২), জাহাঙ্গীর আলম কচি (৩৪), আহসান হাবিব (২৫), বিষ্ণু রায় আকাশ (১৯), সেকেন্দার রাজা (৩৫), শ্যামল ওরফে নুর ইসলামকে (৫৫) আটক করা হয়। এর মধ্যে একজন পুলিশের স্ত্রী রয়েছেন বলেও জানা গেছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার ফাঁদে ব্যবহার করা ১৩টি মোবাইল, জিম্মি করে হাতিয়ে নেয়া তিনটি ব্যাংক এটিএম কার্ড এবং ২২ হাজার টাকাও উদ্ধার করে পুলিশ।

অভিযানে অংশ নেয়া কোতোয়ালি থানার এসআই মজনু জানান, এই সঙ্ঘবদ্ধচক্রটি এরই মধ্যে নগরীর ঘোড়াপীর মাজার এলাকায় গঙ্গাচড়া উপজেলা পরিষদে কর্মরত এক কর্মকর্তাকে ভালোবাসার ফাঁদে ফাঁসিয়ে জোরপূর্বক এটিএম কার্ড ও পিন নিয়ে ডাচ্ বাংলা ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার টাকা এবং তার পরিবারের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ৩০ হাজার এবং নগদ পাঁচ হাজার টাকাও হাতিয়ে নেয়। এ ধরনের আরো অনেকেই প্রতারিত হয়েছেন সিন্ডিকেটটির কাছে।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন জানান, রংপুর মহানগরীর বিভিন্ন নিজস্ব এবং ভাড়া বাসাবাড়িতে একটি সঙ্ঘবদ্ধ নারী-পুরুষচক্র করপোরেট সেক্সের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ নানা ধরনের অপরাধের সাথে যুক্ত। এসব নারী-পুরুষ ছাত্রী ছাড়াও বিভিন্ন পেশার সাথেও যুক্ত। এ ধরনের কিছু নিজস্ব এবং ভাড়াবাসা চিহ্নিত করে সেখানে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।


আরো সংবাদ



premium cement