রংপুরে পাপিয়ার স্টাইলে যৌনব্যবসা, স্বামী-স্ত্রীসহ আটক ৪
- রংপুর অফিস
- ১৭ মার্চ ২০২০, ১৬:২৯, আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২০, ১৭:১১
রংপুর মহানগরীর জুম্মাপাড়ায় প্রেমের ফাঁদে ফেলে এনজিও আশার একজন মাঠকর্মীর কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। সোমবার রাতে এ অভিযোগে দুই নারীসহ ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রশিদ জানান, সোমবার রাত ৯টায় তারাগঞ্জের ইকরচালীতে এনজিও আশার মাঠ কর্মীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে রংপুর মহানগরীর পায়রা চত্বরের জুম্মাপাড়ার ওই বাড়িতে আনা হয়। এরপর রুমে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। সেখানে আগে থেকেই একজন নারীকে উপস্থিত রাখা হয়।
কিছুক্ষণ পর তিন-চারজন পুরুষ ওই ঘরে প্রবেশ করে। তারা শ্যামলচন্দ্রকে মেয়েটির সাথে অসামাজিক কার্যকলাপ করার অভিযোগে এনে তার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এসময় তারা শ্যামলের কাছে থাকা ২৭ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন। বাকী টাকার জন্য চাপ দিলে শ্যামল তার একজন বন্ধুকে ফোন দেন।
ওই বন্ধু বিষয়টি পুলিশকে জানালে তাদেরকে টাকা নেয়ার জন্য সুপারমার্কেটের সামনে ডাকা হয়। আগে থেকে সেখানে সাদা পোশাকে পুলিশ অবস্থান নেয়। টাকা নিতে আসলে পুলিশ নগরীর গুপ্তপাড়ার আবদুস সালামের পুত্র মেহেদী হাসান মোহনকে (২২) গ্রেফতার করে। পরে তাকে নিয়ে গভীর রাতে ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এই চক্রের নারী সদস্য নগরীর রাধাবল্লভ এলাকার হায়দার আলীর কন্যা হাবিবা আকতার (১৮), জুম্মাপাড়ার মোজাম্মেল হোসেন মিন্টু (২৯) ও তার স্ত্রী রুপা মোজাম্মেলকে (২৮) আটক করা হয়। এসময় শ্যামলকে ভয়ভীতি দেখানো একটি চাকুও উদ্ধার করা হয়।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো জানান, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে রংপুর মহানগরীতে হাবিবা, রুপা, মোহন ও মিন্টুর নেতৃত্বে ওই বাড়িতে এভাবে প্রেমের ফাঁদে ফেলে টার্গেটকৃত লোকদের ফাঁসিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে।
এদের টার্গেট চাকরিজীবী, ঠিকাদার ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ বলে জানান তিনি।
টার্গেট করার পর তারা তাদের নিজস্ব সিন্ডিকেটের নারীদের দিয়ে প্রথমে মোবাইল ফোনে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। সম্পর্কের বিষয়টি তারা শুরু থেকেই মোবাইলে অডিও, ভিডিও রেকর্ড করে রাখেন। এক পর্যায়ে তারা সেটি শারীরিক সম্পর্ক পর্যন্ত নিয়ে যান। এরপর বিভিন্নভাবে নগদ টাকা ও উপহার সামগ্রী আদায় করেন। এরমধ্যে শারীরিক সম্পর্কের বিষয়টিও তারা গোপনে ভিডিও করে রাখে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, আমরা প্রাথমিক তদন্তে আরো জানতে পেরেছি অনেক ক্ষেত্রে ওই টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে বাসায় নিয়ে গিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ এনে টাকা দাবি করেন। অথবা পরিবারের কাছে ও ইন্টারনেটে অডিও ভিডিও ফাঁস করে দেয়ার ভয় দেখিয়েও তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়।
তদন্তে দেখা গেছে আটককৃতদের মধ্যে দম্পত্তিও আছেন। তারা অনেকটাই ঢাকায় গ্রেফতার হওয়া পাপিয়া ও সুমনের স্টাইলেই চলাফেরা করতেন। আরেকজন নারী ও পুরুষ এই ব্যবসায় তাদের সহযোগী। ঢাকায় যৌন ব্যবসায়ী গ্রেফতারকৃত পাপিয়ার কাজের সাথে এদের কাজের অনেকটা মিলও রয়েছে। পাপিয়ার যৌন ব্যবসার অনলাইন প্লাটফর্ম ‘এসকটের’ সাথে এদের যোগাযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এছাড়া তাদের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। সে আলোকে নগরীতে গড়ে উঠা বিভিন্ন বাসা-বাড়ির ওপর নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। এসব বাসা-বাড়িতে যাদের যাতায়াত তাদের ব্যাপারে অনুসন্ধান চলছে। অসামাজিক ও অন্যায় কাজের সাথে জড়িত এই সিন্ডিকেটটিকে আইনের আওতায় আনতে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
তবে ঘটনার শিকার এনজিও কর্মকর্তা শ্যামল চন্দ্র জানিয়েছেন, তিনি আগে থেকে তাদেরকে চিনতেন না। রাতে পায়রা চত্বর থেকে বড়ভাইরা দেখা করতে চায় বলে আমাকে নিয়ে যায় মোহন ও তার সহযোগীরা।
ওই বাড়িতে রুমে ঢুকিয়ে দিলে আমি দেখতে পাই সেখানে একজন নারী। কিছুক্ষণের মধ্যেই রুমা, মোজাম্মেল ও মোহনসহ অন্যরা প্রবেশ করে আমাকে মেয়েটির সাথে খারাপ কাজ করার অপবাদ দিয়ে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এসময় ওই মহিলারা নিজেদের মহিলা পুলিশ ও পুরুষরা নিজেদের ডিবি পুলিশ বলে পরিচয় দেন।
এসময় আমার কাছে ২৭ হাজার টাকা ছিল। তারা সেটি ছিনিয়ে নেয় এবং বাকী টাকার জন্য চাপ দেয়। টাকা না দিলে আমাকে চাকু দেখিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আমি তাদের চাপে আমার এক বন্ধুকে ফোন করি। প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা তারা আমার ওপর নীপিড়ন চালায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা