রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাংক লুটের ঘটনা একমাত্র বাংলাদেশেই ঘটেছে : গভর্নর
- নীলফামারী প্রতিনিধি
- ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৭:১৫

‘রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাংক লুট করার ঘটনা একমাত্র বাংলাদেশেই ঘটেছে’ জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘শুধু একটা ব্যাংক নয় সাতটি ব্যাংকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া খাটিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে। পাচার করা হয়েছে অর্থ।’
রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টার দিকে নীলফামারী সরকারি কলেজের হলরুমে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যত রুপরেখা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন,‘পৃথিবীর কোনো দেশে রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে আর্থিক খাতের সর্বনাশ হয়নি। পৃথিবীর নানা দেশে আমি আইন ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করেছি। হ্যাঁ দূর্বল ব্যাংক ব্যবস্থাপনা হয়, মূল্য স্ফীতি হয়।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন একটা পরিবার তাদের হাতেই ছিল সাতটা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেটা আইন বহির্ভূত। আইন অনুযায়ী একটা পরিবার থেকে একটা ব্যাংকের শেয়ার করা হতো ১০ শতাংশ তার বেশি নয়। তাহলে কিভাবে তারা পুরোপুরি ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিলো এবং ইসলামী ব্যাংকের ৮০ শতাংশর ওপর শেয়ার এস আলম গ্রুপের একটা পরিবারের। কিভাবে তারা পেলো? এটা পুরোপুরিভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রের ব্যর্থতা, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যর্থতা। তারা হয়েছিল পলিটিক্যাল ডাইরেক্টর।’
রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তাদের সুরক্ষা দেয়া হয়েছে জানিয়ে গভর্নর বলেন, ‘কিভাবে একটা পরিবার সাতটা ব্যাংক নিলো এবং সবগুলোকে দেউলিয়া করলো এটা কি আমরা জানতাম না। অবশ্যই জানতাম। কেন কিছু করা সম্ভব হয়নি। কেন হয়নি সেটাও আমরা জানি। কারণ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যদি এটাকে প্রটেকশন দেয়া হয়, ডিজিএফআই থেকে প্রটেকশন দেয়া হয়, তাহলে কীভাবে সাধারণ মানুষেরা প্রতিহত করবে। প্রতিহত করা সম্ভব ছিল না।’
ব্যাংকগুলোর ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়ে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘কিছু ব্যাংক আছে যেগুলো ভালো ভাবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এদের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক অন্যতম। ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং কেন দাঁড়িয়েছে? কারণ ডিপোজিটররা কমিটেড টু দ্য ব্যাংক। তারা চায় তাদের ব্যাংকটা থাকুক। তারা জানে যে ব্যাংক টা ভালো ছিল। ব্যাংকটা ভালো হতে পারে এবং ব্যাংকটা ভালো হবে। এই যে আশা এই আশাটা কিন্তু আমাদের ব্যাংকিং খাতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ব্যাংকিং খাতের জন্য যদি আলাদা দিতে পারি তাহলে ঘুরে দাঁড়ানো সহজ।’
তিনি আরো বলেন, ‘কিন্তু সবগুলো ব্যাংক কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? হয়তো পারবে না। কিন্তু আমরা তো দাঁড় করাবো। মার্কেট তৈরি হোক যেভাবেই হোক। আমরা প্রত্যেকটা ডিপোজিটরের অর্থ আমরা ফেরত দেবো। এই গ্যারান্টি আমরা দিচ্ছি। ডিপোজিটের কোনো টাকা হারাবে না হয়তো সাময়িকভাবে তারা অ্যাক্সেস পাবেন না। কিন্তু যখন আমাদের প্রক্রিয়া শেষ হবে, তখন তাদেরকে অল্টারনেট একটা অ্যাসেট দেয়া হবে। ইনশা-আল্লাহ আপনাদের ক্ষতি হবে না। তাই আমরা ব্যাংকগুলোকে এমনভাবে পুনর্গঠন করব, এমনভাবে ম্যানেজমেন্টে নিয়ে আসব যাতে শক্তিশালী ব্যাংক হিসেবে তারা দাঁড়িয়ে যেতে পারে। ব্যাংক ঘুরে দাঁড়ানোর সময় লাগে না। চার পাঁচ বছর সময় লাগে। আমরা আশা করি যে পরবর্তী সরকার সেটিকে সামনের দিকে নিয়ে যাবে। সামনের দিকে যদি তা নিতে পারে তাহলে কিন্তু এটা গঠনমূলক হবে না। কাজেই দায়িত্বটা কিন্তু পরবর্তী সরকারের।’
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে গভর্নর বলেন, ‘যে লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে তা তো উদ্ধারের চেষ্টা করছি। আমরা এখানে অনেকগুলো জয়েন্ট ইনভেস্টিগেশন টিম গঠন করেছি। আর তারা প্রত্যেকে ব্যক্তিগতভাবে তথ্য নিচ্ছে। তারা অন্য জায়গা থেকে তথ্য নিচ্ছে। তাদের কিছু সম্পদ, সম্পত্তি যেগুলো বাংলাদেশে আছে সেগুলোকে অ্যাটাচ করা হচ্ছে। ‘স্টোল অ্যাসেট ট্রেসিং’ এগুলোর জন্য বিদেশী কিছু সংস্থা আছে। সরকারি সংস্থা ইংল্যান্ডে আছে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন আছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আছে, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকেও আছে । আমরা এদের সাথে যোগাযোগ করছি। তাদের কাছ থেকে আমরা কারিগরি সহায়তা দিচ্ছি। আইনগত সহায়তাও নিচ্ছি। আমরা চেষ্টা করছি ইনভেষ্টিগেশনগুলোকে সঠিকভাবে করতে। কারণ এগুলো ইন্টারন্যাশনাল কোর্টে যখন আমরা নিয়ে যাব তখন এটা বাংলাদেশের কোর্টের স্ট্যান্ডার্ডের জন্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন তদন্তের ভিত্তিতেই তাদের সম্পদ আমরা জব্দ করতে পারব এবং পরবর্তীতে ফেরত আনতে পারব।’
তিনি আরো বলেন, ‘ইন্টারন্যাশনাল এক্সপিরিয়েন্স হচ্ছে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে চার থেকে পাঁচ বছর লেগে যায়। এর মধ্যে আমরা মালয়েশিয়াতে দেখেছি চার থেকে পাঁচ বছর লেগেছে। আমরা দেখেছি নাইজেরিয়াতে প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের যে সম্পদ নিয়ে গিয়েছিলেন, সেই টাকা ফেরত আনা হয়েছে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলারের মতো। এটা করা সম্ভব। তবে সময় লাগবে এবং এই সরকারের পক্ষে কিন্তু রেজাল্টটা দেখা সম্ভব নয়। শুরুটা করা সম্ভব, আমরা শুরু করে দেই। কিন্তু শেষটা করতে হবে পরবর্তী সরকারকে।’
আলোচনা সভায় কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান ভূইয়ার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান। সভায় কলেজের শিক্ষক, ব্যাংক কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন এবং তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা