রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭১ শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিস্কারে আল্টিমেটাম
- সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর ব্যুরো
- ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:১২
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় শহীদ আবু সাঈদ হত্যা এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭১ শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিস্কারে প্রশাসনকে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। দাবি না মানলে না প্রশাসন ভবনে স্থায়ী অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া সেন্টারে অভিযুক্ত এসব শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে লঘু শাস্তির প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এই আল্টিমেটাম দেন তারা।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব রহমত আলী, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন, আশিকুর রহমান, শিক্ষার্থী সমাজ সাকিব, হাবিব প্রমুখ।
এ সময় সমন্বয়ক আশিকুর রহমান বলেন, ‘১৬ জুলাই ছাত্রলীগের যে সন্ত্রাসীরা বড় বড় অস্ত্র নিয়ে আমাদের উপরে হামলা করেছিলো তাদের মাত্র এক/দুই সেমিস্টার বহিস্কার করা হয়েছে। যেখানে র্যাগিং করলে ১ সেমিস্টার ২ সেমিস্টার বহিস্কার করা হয়। সেখানে আমার ভাই আবু সাঈদকে যারা প্রকাশ্যে হত্যার সাথে জড়িত ছিলো তাদেরকে ১ সেমিস্টার/ ২ সেমিস্টার বহিস্কার করা হয়েছে। এটা শুভঙ্করের ফাঁকি। গ্রামের ভাষায় যাকে বলে কানাকে হাইকোর্ট দেখানো। আমরা এই বিচার মানি না।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রশাসন রক্তের উপরে দাঁড়িয়ে আছে। আমার দাবি প্রশাসন এই বিচার পূর্ণমূল্যায়ন করুক এবং যারা আবু সাঈদ হত্যায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলো তাদেরকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করতে হবে। শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যারা মাস্টার মাইন্ড আছে তাদের সার্টিফিকেট বাতিল করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে হবে। যদি এই প্রশাসন শাস্তির ব্যবস্থা না করে তাহলে আমরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবো।’
এ সময় শিক্ষার্থী হাবিব বলেন, ‘এক-দুই সেমিস্টার বহিস্কারের এ সিদ্ধান্ত প্রহসন ছাড়া আর কিছু না। আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড ও আন্দোলনে হামলায় জড়িতদের স্থায়ী বহিস্কার করতে হবে। যাদের পড়াশোনা শেষ হয়েছে তাদের সার্টিফিকেট বাতিল ও মামলার ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া জড়িত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হামলায় জড়িত থাকলেও তদন্ত প্রতিবেদনে তাদের নাম আসেনি। নতুন করে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধেও মামলার দাবি জানান তারা। তিন দিনের মধ্যে দাবি না মানা হলে প্রশাসনিক ভবনের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দেন এ কর্মসূচি থেকে। র্যাগিং বা পরীক্ষায় নকল করলে যে শাস্তি। একজনকে হত্যা করার শাস্তি একই হতে পারে না।’
মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব রহমত আলী জানান, ‘যারা ক্যামেরার সামনে আমাদের ভাইদের উপরে হামলা চালিয়েছে। প্রশাসন এখনো তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারে নাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা দিতে নাকি কান খুলে পরীক্ষা দিতে হয় সেখানে এই হামলাকারিদের নামসহ পূর্নাঙ্গ পরিচয় প্রকাশে করতে ব্যার্থ হয়েছে প্রশাসন। আমরা প্রশাসনের পদক্ষেপকে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করছি। তাদেরকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করতে হবে।’
সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৭১ জনের বিরুদ্ধে যে শাস্তির ব্যবস্থা করেছে তা প্রহসন। কারণ অস্ত্রধারীরা ১/২ সেমিস্টার পরে এসে আমাদের ওপর সরাসরি গুলি চালাবে। অবিলম্বে এই শাস্তি বাতিল করে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের স্থায়ীভাবে বহিস্কার করতে হবে। তা না করা হলে আবু সাঈদের সহযোদ্ধারা এখনও মরে যায় নি। তারা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে। তিনদিনের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে ক্যাম্পাসের প্রশাসন ভবনের সামনে স্থায়ী অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তথ্য মতে, গত ৫ জানুয়ারি রোকেয়া বিশ্ববিদ্য্যালয়ের ১০৯তম সিন্ডিকেট সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি ড. শওকাত আলী গেলো বছর ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসে যোগ দিয়েই ১০৭তম সিন্ডিকেট সভায় হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাত্র কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খুঁজে বের করে তথ্যানুসন্ধান কমিটি করেন।
কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে গত বছর ২৮ অক্টোবর ১০৮তম সভায় ৭১ জনের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করা হয়। ৩৩ জন শিক্ষার্থীকে ২ সেমিস্টার ড্রপ ও ২৩ জনকে ১ সেমিস্টার করে ড্রপ এবং ১৫ জনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের সিদ্ধান্ত হয়। তাদের অধিকাংশই নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী।
তবে সিন্ডিকেট সভায় নেয়া সিদ্ধান্তের বাইরেও বেশ কয়জন শিক্ষকসহ শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী জড়িত থাকার বিষয়ে ইন্টারনেটে ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হলেও তাদের বিষয়ে কোনো কমিটি গঠন কিংবা সিদ্ধান্ত হয়নি। এতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে সবখানে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা