কুড়িগ্রামে শীতের দাপটেও থেমে নেই বোরো রোপন
- জাকারিয়া শেখ, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম)
- ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫১, আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫৩
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় শীতের তীব্রতা যেন জীবনযাত্রাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছে। হিমশীতল বাতাস আর ঘন কুয়াশার আবরণের মধ্যেও কৃষকরা থেমে নেই। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা ইরি-বোরো ধানের চারা রোপনে নিজেদের ব্যস্ত রেখেছেন।
এই অঞ্চলের প্রকৃতিতে শীতের রঙ যেন সবকিছু ছাপিয়ে গেছে। মাঠের পর মাঠ ঢেকে রয়েছে কুয়াশার চাদরে, আর সেই চাদর ভেদ করে সূর্যের মুখ দেখা যায় অনেক দেরিতে। এমন প্রতিকূল পরিবেশে উপজেলার কৃষকেরা প্রতিদিন নিরলস পরিশ্রম করছেন। তাদের চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট হলেও ভবিষ্যৎ ফসলের সম্ভাবনায় ফুটে উঠছে আশার আলো।
শীতের সকালে সরেজমিনে রাবাইতারী গ্রামে দেখা গেছে, কুয়াশার চাদরে মোড়া প্রকৃতি আর হিমেল বাতাসের তীব্রতা উপেক্ষা করেই মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। শীতের প্রকোপকে অগ্রাহ্য করে ইরি-বোরো ধানের চারা রোপনের কাজে মগ্ন তারা।
কৃষক মুসলিম উদ্দিন বলেন, ‘আমার আবার কিসের ঠান্ডা, কাজ না করলে খামু কি।’
তার এই কথাটি যেন শীতকে জয় করার এক অনন্য প্রতীক হয়ে উঠেছে।
তাপমাত্রা কম থাকায় শরীর ভারী মনে হলেও জীবিকার তাগিদে এবং পরিবারের জন্য খাদ্যের নিশ্চয়তা বিধানে তাদের দৃঢ়তা ও মনোবল সত্যিই প্রশংসনীয়। এ যেন প্রকৃতির প্রতিকূলতার সাথে সংগ্রাম করে জয়ের মুকুট ছিনিয়ে আনার এক অদম্য প্রচেষ্টা।
এই অঞ্চলের তাপমাত্রা প্রতিদিনই ১৩ ডিগ্রির আশপাশে ঘোরাফেরা করছে। বিশেষ করে ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের দেখা মেলে না। এমনকি অনেক সময় কুয়াশা এতটাই ঘন হয় যে দৃষ্টিসীমা কয়েক ফুটের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। তবুও কৃষকেরা থেমে নেই।
তাদের মতে, সময় মতো ধানের চারা রোপন করতে না পারলে উৎপাদন ব্যাহত হবে। এজন্য তারা প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে জমিতে কাজ শুরু করেন। কেউ জমি প্রস্তুত করছেন, কেউ ধানের চারা রোপণ করছেন।
নওদাবাস গ্রামের কৃষক মজিবর রহমান বলেন, ‘যে শীতেই হোক, আমাদের কাজ থেমে থাকলে পরিবার চলবে না। আর এই সময়টাই ধানের চারা রোপনের উপযুক্ত সময়।’
শীতের প্রকোপ থাকলেও ফুলবাড়ী অঞ্চলের মাঠগুলো যেন এক প্রকার উৎসবের চিত্র তুলে ধরছে। ধানের চারা রোপন নিয়ে এই ব্যস্ততার মধ্যে প্রকৃতির সৌন্দর্য আর মানুষের শ্রম এক মধুর সমন্বয় তৈরি করেছে। কৃষকেরা দলবেঁধে মাঠে কাজ করছেন, আর তাতে যোগ হয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মুগ্ধতা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, ‘শীতকালীন ফসলের উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হচ্ছে। সার, বীজ, এবং সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতে আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি। চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ১০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।’
তবে কৃষকেরা চাচ্ছেন, সরকারি সহায়তা আরো সহজলভ্য হোক এবং শীতের সময় ফসল উৎপাদনে যেন তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সরঞ্জাম দেয়া হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা