০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ৭ রজব ১৪৪৬
`

ফেলানী হত্যার ১৪ বছর, ভারতের আদালতে ন্যয় বিচারের আশায় বাবা-মা

ফেলানী হত্যার ১৪ বছর, ভারতের আদালতে ন্যয় বিচারের আশায় বাবা-মা - ছবি : সংগৃহীত

কুড়িগ্রাম সীমান্তে কিশোরী ফেলানী হত্যার ১৪ বছর আজ (মঙ্গলবার)। দেশ-বিদেশে আলোচিত এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও বিচার পায়নি ফেলানীর বাবা-মাসহ পরিবার। বিচারিক কাজ ভারতের উচ্চ আদালতে ঝুলে থাকায় এখনো ন্যায় বিচারের আশায় অপেক্ষার প্রহর গুনছেন ফেলানীর বাবা-মাসহ স্থানীয়রা। এদিকে বিচারিক কাজ বিলম্বিত হলেও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সীমান্ত হত্যা বন্ধের প্রত্যাশা বিশিষ্টজনের।

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে বাবার সাথে কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয় বাংলাদেশী কিশোরী ফেলানী। ফেলানীর লাশ প্রায় ৪ ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে থাকার দৃশ্য দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমসহ মনবাধিকার কর্মীদের মাঝে সমালোচনার ঝড় তোলে। পরে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারের বিএসএফ'র বিশেষ আদালতে ফেলানী হত্যার বিচার কাজ শুরু হয়। একই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয় বিএসএফ'র বিশেষ আদালত।

বিজিবির আপত্তিতে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনবিচার শুরু হলেও সেখানেও খালাস দেয়া হয় অভিযুক্ত অমিয় ঘোষকে। এরপর ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম) এর মাধ্যমে ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করেন। পিটিশনের ভিত্তিতে কয়েক দফায় শুনানির দিন পিছালেও এখনো আদালতেই ঝুলে আছে পিটিশনটি। এ অবস্থায় অনেকটা হতাশার মধ্যে থাকলেও মেয়েকে হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তিসহ ন্যায় বিচারের আশা করছেন ফেলানীর পরিবারসহ দেশবাসী।

ফেলানীর মা জাহানারা বেগম জানান, আমার নিষ্পাপ মেয়ে ফেলানীকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করেছে ভারতের বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ। আমার বড় মেয়েকে মেরে আমার বুক খালি করেছে। মেয়েকে হত্যার পর থেকে আমার পরিবারের সবাই দুর্বিসহ দিন কাটাচ্ছি। কেউ খোঁজ খবর নেয় না। বাংলাদেশ-ভারত সরকারের কাছে আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই। বেঁচে থাকতে আমি অমিয় ঘোষের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দেখে যেতে চাই।

ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম জানান, ভারতের কোচবিহারে বিএসএফ'র আদালতে আমার মেয়ে হত্যার বিচার শুরু করে। আমি স্বাক্ষী দিয়ে আসি। আমার চোখের সামনে গুলি করে মারা হয়েছে আমার মেয়েকে। কিন্তু অভিযুক্ত অমিয় ঘোষকে খালাস দেয়া হয়। পরবর্তীতে আমি ভারতের একটি মানবাধিকার সংগঠনের সহায়তায় ভারতের উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন দাখিল করি। কিন্তু সেখানে বিচার শুরু হয়নি। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।

রামখানা ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দা আখতার হোসেন জানান, শুধু শুনে আসছি যে ফেলানী হত্যার বিচার হবে। কিন্তু বিচার হচ্ছে না। ভারত সরকার বিচার করছে না। ফেলানী হত্যার বিচার পেতে আদালতে সাক্ষী দিতে কয়েক দফায় ভারতে যান ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিচার না পাওয়ায় হতাশ আমরা এলাকাবাসীরাও।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কুড়িগ্রামের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফখরুল ইসলাম জানান, ফেলানী হত্যার রিট পিটিশনটি ভারতের উচ্চ আদালতে ঝুলে আছে। আমরা মনে করি, পিটিশনটি উত্থাপন করে ফেলানী হত্যার বিচারের মাধ্যমে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে ভারত সরকার। এতে করে দু'দেশের দীর্ঘ সীমান্তে হত্যার ঘটনা কমে আসবে।

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলনিটারী গ্রামের নুর ইসলাম ও জাহানারা দম্পতির ৮ সন্তানের মধ্যে সবার বড় মেয়ে ছিল ফেলানী। পরিবারের অভাব অনটন দূর করতে কাজের সন্ধানে সপরিবারে চলে যান ভারতে। মেয়েকে বিয়ে দিতে দালালের মাধ্যমে দেশে ফেরার সময় এ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় ফেলানী।


আরো সংবাদ



premium cement