০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ৭ রজব ১৪৪৬
`

ফেলানী হত্যার ১৪ বছর, এখনো নিভৃতে কাঁদেন মা

সীমান্তে ফেলানী হত্যার ১৪ বছর - ছবি : নয়া দিগন্ত

২০১১ সালের এই দিনটি যেন এক কালো অধ্যায় হয়ে রয়েছে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তের মানুষ ও জাতির হৃদয়ে। এ দিনেই ১৫ বছরের কিশোরী ফেলানী খাতুনকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) নির্মমভাবে হত্যা করে। সেদিন গুলিবিদ্ধ হয়ে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে থাকা ফেলানীর নিথর দেহের দৃশ্য সারা বিশ্বের বিবেককে নাড়া দিয়েছিল।

ফেলানী হত্যার ১৪ বছর পার হলেও মেয়র শোকে কবরের পাশে দাঁড়িয়ে নিভৃতে কাঁদেন মা। তার অশ্রুসিক্ত চোখে বিষ্ময় চাহনি! আর মনের গভীরে উঁকি দিচ্ছে ‘ন্যায়বিচার কি কখনো পাবো?’ এমন প্রশ্ন।

ফেলানীর মা শাহানারা বেগম কবরের পাশে দাঁড়িয়ে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার মেয়েকে যে যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তার বিচার এখনো পাইনি। প্রতিবছর এই দিনে মনটা আরো ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। কেউ আমাদের কথা শুনল না। আমরা তো ন্যায়বিচার ছাড়া আর কিছুই চাই না।’

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরের আলো ফোটার আগেই ফেলানী তার বাবা নুর ইসলামের সাথে ভারতের কুচবিহার থেকে বাংলাদেশে ফিরছিলেন। দালালের সহায়তায় কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ গুলি চালান। ওই সময় গুলিবিদ্ধ ফেলানী কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে থাকেন দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা।

সীমান্তে ফেলানীর ওই হৃদয়বিদারক দৃশ্য পুরো জাতিকে শোকাহত করে তুলেছে। নাড়া দিয়েছে বিশ্ব বিবেক। কিন্তু ওই ঘটনা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করলেও ফেলানীর পরিবার আজো সুবিচারের মুখ দেখেনি।

ফেলানী হত্যার ঘটনায় বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের বিরুদ্ধে ভারতের কুচবিহারে বিশেষ আদালতে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট বিচার শুরু হয়। ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম ও মামা হানিফ আদালতে সাক্ষ্য দেন। কিন্তু বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতার পর ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর অমিয় ঘোষকে খালাস দেয়া হয়।

পরে ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন ‘মাসুমের’ সহযোগিতায় ফেলানীর পরিবার ভারতের সুপ্রিম কোর্টে পুনর্বিচারের আবেদন জানায়। ২০১৪ সালে পুনর্বিচার শুরুর পরও ২০১৫ সালে একই অভিযুক্তকে আবারো খালাস দেয়া হয়। এরপর ২০১৫ সালে নতুন রিট করা হলেও বিচারপ্রক্রিয়া এখনো স্থবির হয়ে আছে।

ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম বলেন, ‘আমি ভারতের সুপ্রিম কোর্টে বিচার চেয়েছি। কিন্তু করোনাসহ বিভিন্ন অজুহাতে বিচার প্রক্রিয়া ঝুলে রয়েছে। আমি চাই অমিয় ঘোষের ফাঁসি হোক। কিন্তু এই দীর্ঘ অপেক্ষা আমাদেরকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করছে।’

ফেলানী হত্যার ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো সীমান্তে হত্যা বন্ধ হয়নি। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মনোযোগ আকর্ষণের আহ্বান জানালেও বাংলাদেশ সরকার কঠোর অবস্থান নিতে ব্যর্থ বলে অভিযোগ তুলেছেন মানবাধিকারকর্মীরা।

কুড়িগ্রাম আদালতের সাবেক রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (প্রসিকিউটর) আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘দীর্ঘ ১৪ বছরেও বিচার হয়নি। ভারতের আদালতে মামলাটি বারবার পিছিয়ে দেয়া হচ্ছে। আমরা আশা করি, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং দু’দেশের মধ্যে সীমান্ত হত্যাকাণ্ড বন্ধে কার্যকর চুক্তি বাস্তবায়িত হবে।’

৭ জানুয়ারি ফেলানী হত্যার স্মরণে ফুলবাড়ী সীমান্তে স্থানীয় বাসিন্দা ও মানবাধিকারকর্মীরা শোকসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করছেন। ফেলানীর মা-বাবার বিশ্বাস একদিন তাদের মেয়ে হত্যার সুবিচার হবে। তবুও দীর্ঘ অপেক্ষায় সেই আশার আলো এখন অনেকটাই ম্লান হয়ে আসছে।


আরো সংবাদ



premium cement