সীমান্তে হত্যার কবে হবে অবসান?
- জাকারিয়া শেখ, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম)
- ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩:৪০
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কিশোরী ফেলানী খাতুনকে (১৫) ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) গুলি করে হত্যা করেছে। হত্যার ১৪ বছর পূর্ণ হতে চলেছে, কিন্তু এখনো ন্যায়বিচার পায়নি ফেলানীর পরিবার।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার দক্ষিণ কলনিটারী গ্রামের কিশোরী ফেলানী খাতুন। ভারত থেকে বাবার সাথে দেশে ফেরার পথে কাঁটাতারে আটকা পড়ে। বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে থাকা কিশোরী ফেলানীর লাশের ছবি এক যুগ আগে দেশে-বিদেশে আলোড়ন তুলেছিল। বিএসএফ এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য দোষ স্বীকার করলেও সঠিক বিচার আজও হয়নি।
এ ঘটনার পর দেশজুড়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ শুরু হয়। মানবাধিকার সংস্থা ও গণমাধ্যমগুলোর সরব প্রতিবাদেও বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হতে থাকে।
ভারতের কোচবিহারে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট বিএসএফের বিশেষ আদালতে এই হত্যার বিচার শুরু হয়। তবে ওই আদালত অভিযুক্ত অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয়। বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) আপত্তিতে ২০১৪ সালে পুনরায় বিচার হলেও একই রায় বহাল থাকে।
এরপর ২০১৫ সালে ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম ভারতের সুপ্রিম কোর্টে রিট আবেদন করেন। কিন্তু নানা জটিলতায় সেই মামলার শুনানি বার বার পিছিয়ে যায়। ১৪ বছর পার হয়ে গেলেও বিচার প্রক্রিয়া এখনো থমকে রয়েছে।
ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম বলেন, ‘আমি দু’বার ভারতে গিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছি। কিন্তু আজও ন্যায়বিচার পাইনি। যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিন এই লড়াই চালিয়ে যাব।’
ছোট ভাই জাহান উদ্দিন বলেন, ‘১৪ বছর পার হলো। কিন্তু আমার বোনের হত্যার বিচার এখনো হয়নি। আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই যেন এই হত্যাকাণ্ডের কঠোর বিচার হয়।’
ফেলানীর মা জাহানারা বেগমও ন্যায়বিচারের আশায় রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিচারের আশায় কত জায়গায় ঘুরেছি। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। আমাদের কষ্ট কেউ বুঝতে চায় না।’
কিশোরী ফেলানী হত্যার ১৪ বছর পরও সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়নি। মানবাধিকার সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে শতাধিক বাংলাদেশী বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন। বেশিভাগ ক্ষেত্রেই এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে নিরাপরাধ মানুষ হত্যার বিষয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদাহরণ। অথচ প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে ভারত ও বাংলাদেশের সরকার এ নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
সীমান্তে ফেলানীর মতো আর কোনো নিরপরাধ মানুষকে যেন প্রাণ দিতে না হয়- এটাই আজ বাংলাদেশের সাধারণ মানুষদের দাবি। সীমান্তে হত্যার অবসান ঘটাতে কেবল ন্যায়বিচারই যথেষ্ট নয়। বরং দুই দেশের মধ্যে সুস্পষ্ট এবং কার্যকর নীতিমালা প্রয়োগ করতে হবে।
ফেলানীর হত্যাকাণ্ডের মতো হৃদয়বিদারক ঘটনা আর যেন না ঘটে, সেজন্য কূটনৈতিক পর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। সীমান্তে বসবাসরত মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা শুধু একটি রাষ্ট্রের নয়, প্রতিবেশী দেশেরও দায়িত্ব।
কুড়িগ্রামের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর ও ফেলানীর বাবার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন বলেন, “বিলম্ব হলেও আমরা আশাবাদী যে ন্যায়বিচার হবে। দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের স্বার্থে ভারতীয় আদালতকে একটি ন্যায়সঙ্গত রায় দিতে হবে।”
ফেলানী হত্যার ১৪ বছর পূর্ণ হলেও তার পরিবারসহ দেশের মানুষ এখনো ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন। প্রশ্ন থেকে যায়, সীমান্তে হত্যার অবসান কবে হবে? কোনো নিরাপরাধ জীবনকে যেন আর লাশ হয়ে কাঁটাতারে ঝুলতে না হয়- এই আশা নিয়েই ফেলানীর পরিবার ও জাতি পথ চেয়ে রয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা