০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১, ৪ রজব ১৪৪৬
`
আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ ৫, মারা গেছেন ১ জন

হীম ঠাণ্ডায় জুবুথুবু উত্তরাঞ্চল, গরম কাপড়ের জন্য হাহাকার

ঘন কুয়াশায় কমে এসেছে রাস্তায় মানুষের চলাচল। - ছবি : নয়া দিগন্ত

পৌষের তৃতীয় সপ্তাহের শুরুতেই হীম ঠাণ্ডয় বাতাসের আদ্রতা সর্বনিম্ম ও সর্বোচ্চ কাছাকাছি আসায় হাত-পা হিম হয়ে আসা ঠাণ্ডা, শীত, শৈত্যপ্রবাহ আর কুয়াশা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রংপুরসহ পুরো উত্তরাঞ্চল। গত দুই দিন থেকে এই অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করছে। রোদের নাগাল নেই। এতে নাস্তানাবুদ হয়ে পড়েছে জনজীবনের পাশাপাশি গৃহপালিত জীবজন্তু। নিউমোনিয়া, সর্দি জ্বরসহ ঠাণ্ডাজনিত রোগ হুহু করে বাড়ছে। বিপরীতে মিলছে না পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র। এই অঞ্চলে এখন পর্যন্ত সকারি তরফে মাত্র দুই লাখ কম্বল মিলেছে। যা চাহিদার তুলনায় যৎসামান্য। গরম কাপড়ের জন্য চলছে হাহাকার। দিশেহারা ছিন্নমুল মানুষ কাজকর্ম বাদ দিয়ে বাড়িতে অলস সময় কাটাচ্ছেন। সরকারি-বেসরকারিভবে তাদের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়েছেন সচেতনমহল। অন্যদিকে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগিদের মধ্যে মারা গেছেন একজন।

আবহাওয়ার পারদ প্রতিদিনই নামছে
রংপুর আবহওয়া অফিসের সহকারী পরিচালক (সহকারী ইলেক্ট্রনিক্স প্রকৌশলী) মোস্তাফিজার রহমান নয়া দিগন্তকে জানান, গত বছর ডিসেম্বরের শুরু থেকেই জানুয়ারি থেকে এই অঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড পরিমানে কমেছে। বুধবার (১ জানুয়ারি) এই অঞ্চলের সর্বনিম্ম তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে দিনাজপুরে ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়াও কুড়িগ্রামে ১১, লালমনিরহাটে ১১ দশমিক ৫, পঞ্চগড়ে ১১ দশমিক ৬, গাইবান্ধা ও ঠাকুরগাঁওয়ে ১২, নীলফামারীর সৈয়দপুরে ১২ দশমিক ৪ এবং রংপুর ও ডিমলায় ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়ার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানান, বাতাসের আদ্রতা কাছাকাছি হওয়ায় বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হতে না পারায় সুর্য্যের নাগাল পাওয়া যাচ্ছে না। যতটুকু পাওয়া যাচ্ছে সেটাও উত্তাপবিহীন। সাথে ঝড়ছে শীত, শৈত্য প্রবাহ ও কুয়াশা বৃষ্টি। এই অঞ্চলে তাপমাত্রা অনেক স্থানে ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসবে। আবহাওয়ার এই কঠিন পরিস্থিতি পুরো ফেব্রুয়াসি মাস পর্যন্ত থাকার কথা জানিয়েছেন তিনি।

এবার জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকেই এই অঞ্চলে শীত জেঁকে বসে জোঁকের মতো। শীত যেন মরণ কামড় দিয়ে বসেছে। এখন শীত, কুয়াশা বৃষ্টি ও শৈত্য প্রবাহে কাহিল মানুষজন, জীবজন্তু সবাই। মাঘের শীতে বাঘ কাঁপে প্রবাদ বাক্যটিই আবারও এবারের শীত মনে করিয়ে দিয়েছে মানুষজনকে। এই অঞ্চলে শীতের প্রকোপ এতটাই বেশি যে, হাত পা শীতল হয়ে যাচ্ছে। মানুষ ঘর থেকে বেরুতে পারছেন না। জনজীবনের স্বাভাবিক যাত্রায় পড়েছে ভাটা। গরু ছাগলসহ গৃহপালিত পশুর অবস্থা একেবারেই কাহিল। কাজেকর্মে নেমে এসেছে স্থবিরতা।

ঠাণ্ডাজনিত রোগির সংখ্যা বাড়ছে
প্রচণ্ড শীতের কারণে নারী, বয়সি ও শিশুদের ঠাণ্ডাজনিত রোগবালাই মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার রোগি এই অঞ্চলের রংপুর, বগুড়া, দিনাজপুর, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ, জেলা ও উপজেলা সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেকেই ভর্তি হচ্ছেন।

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধান ডা. মোহাম্মদ আব্দুল হাকিম জানান, প্রতিদিনই বিপুল পরিমান সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, বাতজ্বর, আমাশয়সহ বিভিন্ন শীত শীতজনিত রোগের শিশু আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছে। সিরিয়াসদেরকে ওয়ার্ডে ভর্তি করা হচ্ছে।

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারলে আশিকুর রহমান জানান, ঠাণ্ডার প্রকোপ বেশি হওয়ায় হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। এদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যা বেশি। আক্রান্তদের বেশিরভাগই ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, হৃদরোগ, অ্যাজমা নিয়ে। আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি। পাশাপাশি আমরা পরামর্শ দিচ্ছি বয়সি এবং শিশুদের যেন দ্রুত ঘুমাতে এবং দেরিতে উঠানো হয়।

রংপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা: মোস্তফা জামান চৌধুরী জানান, শীত মওসুমকে সামনে রেখে আমাদের মেডিকেল টিম প্রস্তুত আছে। এছাড়াও শীতের এ সময়ে শিশুদের একটু সমস্যা বেশি হয়। সে কারণে শিশুদের গরম কাপড় গায়ে রাখতে হবে। শিশুরা যেন ঠাণ্ডায় না থাকে সে কারণে অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে।

আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ রোগির সংখ্যা বাড়ছে
এ দিকে শীত থেকে বাঁচতে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ রোগির সংখ্যা বাড়ছে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এই হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ডা. এমএ হামিদ পলাশ জানান, শীত নিবারণের জন্য আগুন পোহাতে গিয়ে ১ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ৫ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন একজন। এছাড়াও ৫০ জন রোগি বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন।

শীতবস্ত্রের জন্য হাহাকার
উত্তরাঞ্চলের জেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া সূত্রে প্রকাশ, শীতের শুরুতে নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে উত্তরের ১৬ জেলা থেকে ১৩ লাখ শীত বস্ত্রেও চাহিদা দেয়া হয় ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আড়াই লাখ কম্বলও বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। বেসরকারি উদ্যোগেও সেভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে না। বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় নাগরিক কমিটি কিছু কিছু জায়গায় কম্বল বিতরণ করছে।

কিন্তু সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়া এ সব কম্বল প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই নগন্য। একটি বেসরকারি সংস্থার পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে সরকারি হিসেবেই এই অঞ্চলে অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৪০ লাখ। যাদেরকে সরকার ভিজিএফ ভিজিডিসহ সরকারিভাবে সামাজিক নিরাপত্বা বেস্টনির নানা প্রকল্পের মাধ্যমে সহযোগিতা করে থাকে। আর বেসরকারি হিসেবে উত্তরের ষোল জেলায় সাড়ে ৮ হাজার বস্তিসহ প্রায় এককোটি অতিদরিদ্র মানুষ বসবাস করে। সে হিসেবে এই অঞ্চলে সরকারের বরাদ্দ দেয়া কম্বল চাহিদার ২৫ ভাগ মাত্র।

রংপুরের ডিসি মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল জানিয়েছেন, ইতোমধ্যেই সরকারিভাবে ১০ হাজার কম্বল জেলার সব উপজেলা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়নে বিতরণ করেছেন। আরো কম্বল চেয়ে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আশা করি পর্যাপ্তভাবে আমরা শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারবো। সরকারের পাশাপাশি শীতার্ত মানুষের পাশে তিনি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসারও আহবান জানান।

রংপুর বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, আমরা নভেম্বর মাসেই রংপুর বিভাগের আট জেলার জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার কম্বলের চাহিদা পাঠিয়েছিলাম ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ১ লাখের বেশি কিছু বেশি কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। সেগুলো এখন বিতরণ কার্যক্রম চলছে।

কৃষিতে বিরূপ প্রভাব
এই সময়ে আলুর পূর্ন মওসুম। তাপমাত্রা ক্রমাগত নিচে নামায় আলু চাষীরা হতাশায় ভুগছেন। অন্যদিকে ধানের বীজতলা এবং শাকসবজিও বেশি শীতে সেভাবে বেড়ে উঠে না। এই অবস্থায় কৃষি বিভাগেরও সেভাবে দেখা পান না কৃষকরা। তারা নিজেদেও বুদ্ধি এবং মাঠে থাকা ওষুধ এবং বীজ কোম্পানীগুলোর পরামর্শের উপর নির্ভরশীল।

রংপুর কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, বেশি শীত শুরু হওয়ায় আমরা এরই মধ্যে মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছি। বেশি শীত হলে বীজতলা, আলুর পাতাসহ শাকসবজির পাতা থেকে শীত নামিয়ে দেয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও শীতজনিত রোগবালাই মোকাবেলায় ভালো কীটনাশক দেয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রতিটি ইউনিয়নে আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা আছেন। তারা মাঠ তদারকি করছেন। কেউ যদি তাদের দায়িত্বপালনে অবহেলা করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
রাতের ভোটের ৩০ জেলা প্রশাসক গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচনের তারিখ নির্ভর করছে সংস্কার কতটা তার ওপর জটিলতা না থাকলে মঙ্গলবার বিদেশ যাচ্ছেন খালেদা জিয়া ধ্বংসস্তুপ থেকে অর্থনীতি টেনে তোলার চ্যালেঞ্জে অন্তর্বর্তী সরকার সম্মিলিত কল্যাণমুখী সরকার দেশের কল্যাণ আনবে : ডা: শফিক ছাত্রদলকে পড়ায় মনোযোগী হতে বললেন মির্জা ফখরুল বিএফআইইউ প্রধান হতে এস আলম ও আ’লীগের সুবিধাভোগীদের দৌড়ঝাঁপ পদ ছাড়াই রূপালী ব্যাংকে ঢালাও পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু ভারতে প্রশিক্ষণ নিতে যাচ্ছেন নিম্ন আদালতের ৫০ বিচারক দুপুরে সূর্য উঁকি দিলেও রাত কেটেছে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সকল