গোবরের লাকড়িই ভরসা গ্রামীণ পরিবারের
- জাকারিয়া শেখ, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম)
- ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪৩
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার গ্রামীণ পরিবারগুলোতে গবাদি পশুর গোবর দিয়ে তৈরি করা লাকড়ি জ্বালানি চাহিদা পূরণ করছে। গ্যাস ও কাঠের দাম বৃদ্ধির কারণে বিকল্প হিসেবে এ জ্বালানি ব্যবহার দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রযুক্তি আর গ্যাসের সহজলভ্যতা সত্ত্বেও এই ঐতিহ্যবাহী প্রথা গ্রামীণ জনপদের অনেকের নিকট এখনো গুরুত্বপূর্ণ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার কুরুশা ফেরুষা গ্রামে জোসনা বালা নামের এক গৃহিণী বসে বসে গোবর দিয়ে লাকড়ি তৈরি করছেন। তিনি জানান, ‘গোবরের লাকড়ি তৈরি করা সহজ ও কম খরচের একটি পদ্ধতি। পাটখড়ি, ধানের তুষ এবং গোবর মিশিয়ে লাকড়ি তৈরি করা হয়, যা রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয় বর্ষার সময়ের জন্য। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোর মধ্যে এ জ্বালানির চাহিদা বেড়ে চলেছে।’
তিনি বলেন, ‘এক সময় গ্রামের আড়া-জঙ্গলের শুকনো কাঠ সংগ্রহ করে রান্নার কাজ চলত। তবে জনসংখ্যা বাড়ার কারণে বনাঞ্চল ও জঙ্গল কেটে আবাসিক এলাকা এবং কৃষিজমি তৈরি হচ্ছে, যার ফলে জ্বালানি কাঠের সঙ্কট দেখা দিচ্ছে।’
নিম্নআয়ের পরিবারের নারীরা নিজেদের গবাদিপশুর গোবর থেকে লাকড়ি তৈরি করেন, যাদের গবাদিপশু নেই তারা মাঠ বা অন্য বাড়ি থেকে গোবর সংগ্রহ করেন। শিশুদেরও গোবর সংগ্রহে সহযোগিতা করতে দেখা যায়।
স্থানীয় প্রবীণ পুষ্প কান্ত জানান, এটি তাদের পূর্বপুরুষদের রেখে যাওয়া ঐতিহ্য। নতুন প্রজন্মের অনেকেই এ প্রথা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী, যা গ্রামীণ সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখতে ভূমিকা রাখছে।
ফুলবাড়ীর নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাছেন আলী জানান, গোবরের লাকড়ি পরিবেশবান্ধব এবং গ্রামীণ জীবনের অংশ। এটি শুধু রান্নার কাজে নয়, শীতের সময় ঘর গরম রাখতেও ব্যবহৃত হয়। প্রযুক্তির উন্নয়ন ও গবাদিপশু পালনের হার কমতে থাকায় ভবিষ্যতে এ প্রথাও হারিয়ে যেতে পারে। তবু, গ্রামীণ জীবনযাত্রায় এখনো গোবরের লাকড়ি জ্বালানির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো চাইলে এ ঐতিহ্য সংরক্ষণে ভূমিকা রাখতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা