রংপুরে তথ্যমেলায় শেখ হাসিনার বাণী সংবলিত লিফলেট প্রচার, তীব্র প্রতিবাদ
- সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর ব্যুরো
- ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১:৩৭
রংপুরে তথ্য মেলার চারটি স্টলে মুজিববর্ষ ও শেখ হাসিনার বাণী প্রচার নিয়ে তোলপাড় চলছে। এ ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে স্টল সংশ্লিষ্টদের বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় তারা জড়িতদের অপসারণের দাবি জানিয়েছেন।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রংপুর মহানগরীর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে জেলা প্রশাসন ও সচেতন নাগরিক কমিটির আয়োজিত (সনাক) দু’দিনের তথ্য মেলায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি এবং জেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা চেয়ে নোটিশ পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসন বলে জানা গেছে।
এর আগে মেলা উদ্বোধন করেন ডিসি মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল। উদ্বোধনের পর মেলার আগন্তুক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা পরিদর্শনে গিয়ে দেখেন চারটি স্টলে মুজিববর্ষ ও শেখ হাসিনার বাণী সংবলিত লিফলেট প্রচার করছে। জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, জেলা মৎস্য অফিস, জেলা সঞ্চয় অফিস ও পরিবার পরিকল্পনার অফিসের স্টলে এ প্রদর্শনী দেয়।
জানা গেছে, বিতরণ করা লিফলেটগুলোতে লেখা ছিল ‘নিরাপদ মাছে ভরবো দেশ, মুজিববর্ষে বাংলাদেশ,’ ‘বাঙালি জাতি এখন বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলছে আগামীতেও মাথা উঁচু করে চলবে, সেটাই হবে আমাদের আজকের দিনের প্রতিজ্ঞা- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’। এবং পতিত সরকারের সময়কার মুজিববর্ষের লোগোও দেখা যায় ওই লিফলেটে।
এ ধরনের ফ্যাসিবাদের লিফলেট বিতরণ করার বিষয়টি নিয়ে সেখানে প্রতিবাদ জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। ফ্যাসিবাদের পক্ষে কাজ করছেন’। এ নিয়ে সেখানে কর্মকর্তাদের সাথে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তারা তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
মেলায় উপস্থিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগরের মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকার জানান, ‘৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালালেও তার দোসররা এখনো সবখানে বিরাজমান। তারা নতুন করে শেখ হাসিনার তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠিতি করতে চায়। পতিত হাসিনার ফ্যাসিস্ট কাঠামোগুলো জাগ্রত করতে চাইছে। আজকের সরকারি স্টলগুলো থেকে তথ্য মেলার নামে বঙ্গবন্ধুর মুজিববর্ষের ছবিসহ শেখ হাসিনার সেই ফ্যাসিস্ট বাণীর লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। এটা আমরা কোনোভাবেই মানতে পারছি না। এরা কিভাবে এই সাহস পায়। এর মাধ্যমে ২০২৪-এর জুলাই বিপ্লবকে চ্যালেঞ্জ করছে শেখ হাসিনার সরকারি দোসররা। অবিলম্বে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপসারণ করতে হবে। না হলে আমরা মাঠে আন্দোলন করে তাদের অপসারণ করতে বাধ্য করব।’
এ ব্যাপারে রংপুর জেলা মৎস্য স্টলে থাকা পীরগঞ্জ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা কাওসার হোসেন জানান, ‘সহকারী পরিচালক সঞ্জয় ব্যানার্জি বলেন, সব কিছুই নতুন করা হয়েছে। অফিস থেকে সব কিছু আমরা দেখেই নিয়ে এসেছি। তারপরেও অজান্তে এটা হয়ে গেছে। প্রতিবছর বছর নতুন নতুন লিফলেট ছাপানো হয়। এই লিফলেটটা মনে হয় আগের বছরের। সেগুলো এই বছরের সাথে চলে এসেছে। এটা আমাদের অজান্তে ভুল হয়েছে। অফিসে আগের এবং বর্তমান লিফলেট একসাথে থাকার কারণে ভুল করে নিয়ে আসা হয়েছে।
স্টলে উপস্থিত সহকারী পরিচালক সঞ্জয় ব্যানার্জি জানান, ‘মেলায় আমরা আছি। সব কিছু্ নতুন করা হয়েছে। কিন্তু লিফলেটগুলো করা হয়নি। এটা আমাদের ভুল।’
এ বিষয়ে রংপুর জেলা কর্মসংস্থান এবং জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মালিক মোহাম্মদ তৈমুর গোফরান জানান, ‘এখানে বঙ্গবন্ধুকে প্রোমোট করা হচ্ছে না। যেটা আগে প্রিন্ট করা ছিল ওইটাই। এরপর আমাদের আর কোনো নতুন কিছু প্রিন্ট করে দেয় নাই। আমাদেরকে হঠাৎ করে মেলায় স্টল দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। তাই আমরা সময়ও পাইনি। এজন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাণী ও বঙ্গবন্ধুর ছবি সংবলিত লিফলেটই আমরা নিয়ে এসেছি। নতুন করে ছাপালে আমাদের ১৫ দিন সময় দেয়া লাগে। তাই যা ছিল তাই নিয়ে এসেছি। আমি বলে দিচ্ছি, এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করলেই ভালো হয়।’
মেলায় উপস্থিত রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল জানান, ‘স্টল পরিদর্শনের সময় প্রথমে আমার নজরে আসেনি। পরে আমি তা দেখতে পাই। দু’টি স্টল থেকে একটি মন্তব্য এবং লোগো সংবলিত লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে যা আগের ফ্যাসিস্ট সরকারের। এটা জানা মাত্রই জেলা মৎস্য অফিস এবং কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের কর্মকর্তাদের ডেকে পাঠিয়েছি। তাদের কাছে জানতে চেয়েছি। এটা কিভাবে আসলো? কেন আসলো? তারা দু’জনই আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আগে থেকেই বলে রেখেছিলাম। যদি ফ্যাসিস্ট সরকারের কোনো কিছু বা লিফলেট থাকে সেগুলো নষ্ট করতে। কিন্তু কেন সেগুলো তারা করল না, সব মিলিয়ে আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে তাৎক্ষণিক ব্যাখ্যা চেয়েছি এবং লিখিতভাবে যা যা করণীয় সেটা করব।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির সংগঠক আলমগীর নয়ন বলেন, ‘এখনো পতিত হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারি কর্মকর্তারা এ ধরনের সাহস পায় কিভাবে। সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। জেলা প্রশাসন শুধু মৌখিকভাবে তাদের সতর্ক করলো, ব্যাখ্যা চাইলো। এটাও আমরা মানতে পারছি না। প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে থাকা এসব ফ্যাসিস্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে অপসারণ করতে হবে। নইলে আবারো আমরা মাঠে নামতে বাধ্য হব।’
এ বিষয়ে রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের উচিত ছিল সাথে সাথে জড়িতদের বহিষ্কার করা। কিন্তু তিনি সেটা না করে জনমনের ক্ষোভ আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। এর মাধ্যমে প্রমাণ করে সরকারি এসব প্রতিষ্ঠান ও কর্মকর্তা, কর্মচারীরার পতিত হাসিনার উচ্ছিষ্টভোগী। তাদের অপসারণ করা না হলে জনগণকে সাথে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা