রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুলে চালু হচ্ছে উন্নত মম শীর নামে নজরুল স্কয়ার
- সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর ব্যুরো
- ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:১৩
২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান, কবিতা, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের অন্যতম প্রাসঙ্গিক হওয়ায় তাকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে রংপুর পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে স্থাপন করা হয়েছে চির উন্নত মম শীর স্কয়ার।
আগামীকাল (বুধবার) সকালে কবি নজরুল ইনস্টিটিউট-এর সাবেক নির্বাহী পরিচালক কবি আব্দুল হাই শিকদার এর উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অ্যাকাডেমিক বিল্ডিংয়ের উত্তর-পশ্চিম কর্নারে শহীদ মিনারের পাশে স্থাপন করা হয়েছে নান্দনিক ডিজাইনের এ স্বাধীনতা স্কয়ার। মার্বেল পাথর এবং টাইলসে সুশোভিত করা হয়েছে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের মুরাল। সন্নিবেশন করা হয়েছে টুপি পরিহিত কবি কাজী নজরুলের সেই ছবি। ছবিটি এমনভাবে ফুটে তোলা হয়েছে। ছবির মধ্যে বিদ্রোহের আগুন আছে। সাম্যের গান আছে। শোষণের বিপক্ষে রুখে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার আছে। অসাম্প্রদায়িক চেতনার কবিতা আছে। অর্থনৈতিক মুক্তির প্রেরণা আছে। মানুষে মানুষে ভালোবাসার গান আছে।
পাশে লেখা হয়েছে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের বৈষম্যহীন মানবিক এবং গণতান্ত্রিক চেতনার প্রতীক কবিতাটির চার লাইন।
যেখানেই লেখা রয়েছে
‘অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানে না সন্তরণ,
কাণ্ডারী! আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তিপণ!
‘হিন্দু না ওরা মুসলিম?’ ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?
কাণ্ডারী! বল ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা'র!’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা রংপুরের পুলিশ সুপার মো: শরীফ উদ্দিনের পরিকল্পনায় নান্দনিক ডিজাইনের এ ম্যুরালটি স্থাপন করেছে।
পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম (একাডেমিক) জানান, ‘কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাঙালি জাতির একজন প্রকৃত জাতীয়তাবাদী কবি। ব্রিটিশ শাসনামলে নজরুল ইসলাম তার কবিতায় ভারতবাসীর সার্বিক মুক্তির জন্য বিদ্রোহের ঝান্ডা তুলেছিলেন। নজরুলের এ বিদ্রোহ ছিল মূলত ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে। কিন্তু ব্রিটিশ পরবর্তী ভারতের সাধারণ মানুষের কাছে কবি নজরুল একজন জাতীয়তাবাদী কবি হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও পরবর্তীতে তিনি সরকারিভাবে ভারতীয় জাতীয়তাবাদী কবি হতে পারেননি। তাই স্বাধীন বাংলাদেশ কবি নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের একজন দেশ প্রেমিক মানবতাবাদী ও জাতীয়তাবাদী কবি হিসেবে নন্দিত হয়েছেন। বর্তমান বিপ্লবী সরকার নজরুল ইসলামকে রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘জুলাই আগস্ট বিপ্লবে নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান ভীষণভাবে প্রেরণা জুগিয়ে ছিল। তাই পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজ রংপুর নজরুলকে নতুন করে এ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরবার জন্যই আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। দেশ বরেণ্য কবি আবদুল হাই শিকদারের উপস্থিতিতেই নজরুল-এর চেতনা রংপুর তথা বাংলাদেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়বে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজের উপাধ্যক্ষ আ.ন.ম বাবর আলী (প্রশাসন) জানান, ‘যেহেতু কবি কাজী নজরুল ইসলাম জুলাই বিপ্লব বাস্তবায়নের প্রেরণার উৎস। সে কারণে বিপ্লবের পরই আমরা কবি কাজী নজরুল ইসলাম চর্চাকে অমৃত করবার জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছি।’
রংপুর পুলিশ লাইন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর জালাল উদ্দিন আকবর জানান, ‘২৪-এর গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে প্রথম বিজয় দিবস রংপুর পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পক্ষ থেকে মাসব্যাপী উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরই আলোকে আমরা কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ঘিরে স্বাধীনতা স্কয়ার নির্মাণ করেছি। আমরা মনে করি, এর মাধ্যমে নজরুল চর্চা শিক্ষক শিক্ষার্থী অভিভাবকদের মধ্যে নতুন মাত্রা যোগাবে এবং প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে যদি এভাবে নজরুল চর্চার উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়। তাহলে নজরুল আমাদের মাঝে আরো অনিবার্য হয়ে উঠবে।’
রংপুর পুলিশ সুপার মো: শরীফ উদ্দিন জানান, ‘কবি কাজী নজরুল ইসলাম এই উপমহাদেশের প্রত্যেকটি মানুষের মনোজগতে বিরাজমান। তার গান ও কবিতা এবং প্রবন্ধ ও নিবন্ধ জাতীয়তাবাদের আদর্শের প্রতীক। বৈষম্য এবং ভেদাভেদের বিরুদ্ধে ও অসাম্প্রদায়িকতার জন্য তার লেখালেখি পৃথিবী যতদিন বিরাজমান থাকবে ততদিন প্রাসঙ্গিক থাকবে। জুলাই বিপ্লবী কাজী নজরুল ইসলাম হয়ে উঠেছিলেন সব থেকে বড় প্রাসঙ্গিক। এ কারণে দেখা গেছে, জুলাই বিপ্লবে ছাত্র জনতার সমস্ত উচ্চারণে কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান কবিতা এবং প্রবন্ধ ও নিবন্ধন। আমরা মনে করেছি, তরুণ প্রজন্মের কাছে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে চর্চার জন্য এর প্রতিটি প্রান্তে উদ্যোগ থাকা প্রয়োজন। এ কারণে ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠকের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্মরণে স্বাধীনতা স্কয়ার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি।’
নজরুল ইনস্টিটিউটের সাবেক নির্বাহী পরিচালক বহুমাত্রিক কবি আব্দুল হাই সিকদার জানান, ‘একজন মানুষের জন্য যেমন খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, আলো এবং বাতাস প্রয়োজন ঠিক তেমনিভাবে বাংলাদেশের জন্য সবসময়ই প্রাসঙ্গিক কবি নজরুল। বাংলাদেশ মানেই নজরুল। যেখানে শোষণের বিরুদ্ধে শোষিতের উচ্চারণ সেখানেই নজরুল।’
কবি আব্দুল হাই শিকদার আরো বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের প্রতিটি উচ্চারণে তাই কবি নজরুলের লেখা অনিবার্য বিপ্লবের প্রতীক হয়ে স্লোগান দেয়ালসহ প্রতিটি কর্মে প্রতিফলিত হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ নজরুলকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে নজরুল স্কয়ার নির্মাণের যে উদ্যোগ নিয়েছে এজন্য রংপুর পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজকে ধন্যবাদ জানাই। এর মাধ্যমে কবি কাজী নজরুল ইসলামের বহুমাত্রিক প্রাসঙ্গিকতা নতুন প্রজন্মের কাছে আলোড়িত এবং জাগড়িত হবে। এর মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্রবিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হবে।’
পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ‘আগামীকাল বুধবার সকাল ১০টায় এ নজরুল স্কয়ার উদ্বোধন করা হবে। কবি আব্দুল হাই সিকদার এর উদ্বোধন করবেন।’
উল্লেখ্য, ১৯৮৭ সাল থেকেই কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে মর্যাদা দেয়া হলেও এ বিষয়ে কোনো গেজেট প্রকাশিত হয়নি। শুধুমাত্র কবি কাজী নজরুল ইনস্টিটিউট আইনেই তাকে জাতীয় কবি হিসেবে উল্লেখ করা আছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
১৮৯৯ সালের ২৪ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চুরুলিয়া গ্রামে কাজী নজরুল ইসলাম জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ২৩ বছরের সাহিত্যজীবনে কবিতা, গান, উপন্যাস, ছোট গল্পসহ সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তার অবদান তুলনাহীন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা