আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার বোরোবি প্রক্টর শরিফুল বরখাস্ত
- সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর ব্যুরো
- ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩৭
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলায় রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলামকে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ডক্টর হারুনুর রশিদ জানান, ‘ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গত ১৯ নভেম্বর ২০২৪ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর গ্রেফতার হওয়ায় সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৩৯(২) ধারা মোতাবেক শরিফুল ইসলামকে চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’
গত ১৮ নভেম্বর রাত সাড়ে ১০টায় রংপুর মহানগরীর আলমনগর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পিবিআই। ১৯ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টায় রংপুরের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ বিচারক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের আদালতের তাকে তোলা হয়। পিবিআই পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পুলিশ সুপার এ বি এম জাকির হোসেন জানান, ‘সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে গেল ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেটের সামনে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে পুলিশ গুলি করার সময়, আগে ও পরে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের নেতারা একত্রিত হয়ে হামলায় নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগ আছে। অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে ১৪টি স্থির চিত্র এবং একাধিক ভিডিও ফুটেজসহ ২৯টি অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।’
আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় তার বড় ভাই রমজান আলী গত ১৮ আগস্ট পুলিশের সাবেক আইজিপিসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ৩০ থেকে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। পরে ১৪ অক্টোবর ওই মামলায় আরো সাতজনের নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য আদালতে আবেদন করেন। তারা হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বেরোবির সাবেক ভিসি ড. হাসিবুর রশিদ, সাবেক প্রক্টর ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা শাখা) শাহ নূর আলম পাটোয়ারী, বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক ও অস্থায়ী চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নূরুন্নবী, সুরতহাল প্রস্তুতকারী কর্মকর্তা এসআই তরিকুল ইসলাম ও সুরতাহাল রিপোর্টের প্রতিস্বাক্ষরকারী ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ সাদাত। আদালতের আদেশে তাদেরও এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়। সে হিসেবে আবু সাঈদ হত্যা মামলায় এখন নামীয় আসামি ২৪ জন।
আবু সাঈদ হত্যা মামলার প্যানেল আইনজীবী রোকনুজ্জামান জানান, ‘ফরেনসিক রিপোর্টে প্রমাণিত হয়েছে আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এই মামলার দ্রুত তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে বিচার শুরু করতে হবে। একই সাথে মাত্র তিনজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে বাকিদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।’
তবে শরিফুল ইসলামের আইনজীবী সাবিহা আক্তার পপি জানান, ‘আমার আসামি নির্দোষ। তাকে জামিন না দেয়ায় ন্যায় বিচার ব্যাহত হয়েছে। আমরা উচ্চ আদালতে যাব।’
রিমান্ড শুনানির সময় শরিফুল ইসলাম আদালতকে বলেছিলেন, ‘আমি নির্দোষ। প্রতিদিনই ক্যাম্পাসে গিয়েছি। গতকাল পরীক্ষা নিয়েছি। বাড়িতেই ছিলাম। আমাকে চা খাওয়ার দাওয়াত দিয়ে এনে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। আমি পিএইচডির জন্য আবেদন করেছি। আমাকে জামিন দেয়া হোক। যখনই আমাকে ডাকা হবে তখনই আমি চলে আসবো।’
উল্লেখ্য, আবু সাঈদ হত্যা মামলায় এর আগে সাবেক আইজিপি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, তাজহাট থানার বরখাস্তকৃত এএসআই সৈয়দ আমির হোসেন এবং কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়কে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা