১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আমরা মুক্তিযুদ্ধের নামে বারবার ভুল করেছি : সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ - ছবি : নয়া দিগন্ত

আমরা ৫৩ বছর ধরে কষ্ট বহন করেছি এবং মুক্তিযুদ্ধের নামে বারবার ভুল করেছি বলে মন্তব্য করেছেন সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ। তিনি বলেন, ২০২৪ সালে এর অবসান ঘটল। সেটা আমরা আর দ্বিতীয়বার হতে দিব না।

শনিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে রংপুর শিল্পকলা অ্যাকাডেমি মিলনায়তনে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘শহীদ পরিবারের পাশে বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও অনুদানের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

শারমিন এস মুরশিদ বলেন, ‘আমরা যুগে যুগে সমাজ ও রাজনীতি জীবনে যা অর্জন করেছি, তা ছাত্র-জনতার সংগ্রাম ও প্রতিবাদের ফল। ৫২ সাল, ৬৯, ৭০, ৭১ সাল এবং তারপর পদ্মা দিয়ে অনেক পানি বয়ে গেছে। অবশেষে ২০২৪ এসেছে। একাত্তরের যুদ্ধ দেখেছি, তারপর ২০২৪ দেখেছি। আমরা যে স্বপ্নটা দেখেছিলাম সাম্য, গণতন্ত্র, ন্যায্যতার মাধ্যমে একটা সুন্দর সমাজ গড়ে তুলব এবং ন্যায্যতার অধিকারেই আমাদের যুদ্ধ হয়েছিল। স্বাধীনতা পেয়েছি, মাটি পেয়েছি, পতাকা পেয়েছি কিন্তু আমাদের সেই স্বপ্নটা স্বপ্নই থেকে গেছে। একাত্তরে স্বাধীনতার পরে আমরা গণতন্ত্র পাইনি। সাম্য ও ন্যায্যের জায়গায় আমরা দাঁড়াতে পারিনি। এক লাখ মুক্তিযোদ্ধার পুনর্বাসন হয়নি। তাদের ভেতরে ৯০ শতাংশ ছিলেন গ্রামের ছেলে-মেয়েরা। তাদের খালি হাতে, খালি পায়ে গ্রামে ফিরে যেতে হয়েছিল। সেদিন আমরা দেশ গঠনের কাজে তাদের কাজে লাগাতে পারিনি।’

তিনি বলেন, ‘এটা ছিল অন্যায়। আজকে ২০২৪ এর যে মুক্তিযোদ্ধারা আছেন তারা মুক্তিযুদ্ধের ধারা ও মূল্যবোধের বাহক। বিস্ময়করের সাথে দেখতে পাই ২০২৪ এর পুনর্জন্ম নিল আরেকটি প্রজন্ম, যারা সেই আদর্শে যুদ্ধে নামল। তাদের পুনর্বাসন, দেশ গড়া ও কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার আমরা বিফল হব না।’

গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহত পরিবারের সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ করার অভিব্যক্তি প্রকাশ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘একাত্তরে আমরা যেটা করতে পারিনি, আজকে আমরা সেটা করে দেয়া সম্ভব। কারণ এটাই এখন একমাত্র পথ। যারা ভাবছেন আমরা আবু সাঈদের গল্প বলছি বলে অন্যদের ভুলে যাচ্ছি, এটা ভুল ভাবছেন। আমরা তা করছি না। আবু সাঈদ একটা সিম্বল হতে পারে। কিন্তু সে সবাইকে প্রতিনিধিত্ব করেছে। আমরা আপনাদের সবার কাছে পৌঁছতে চাই। এই কাজটা সহজ না। তবে আমাদের আন্দোলনকারী ছেলেরা জুলাইয়ের বিপ্লবীরা আমাদের পাশে আছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের কথা ও কাজের মধ্যে কিছু ভুল ত্রুটি হবে। আমাদের ওপর রাগ করবেন, সমালোচনা করবেন। এমনকি আমাদের তিরস্কারও করবেন। কিন্তু কেউ মুখ ফিরিয়ে নেবেন না। কারণ আমরা আমাদের অন্তর থেকে আপনাদের পাশে আছি। ভুল হবেই, ভুল শুধরে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। যারা এ গণঅভ্যুত্থানে আহত ও নিহত হয়েছেন, তারা আমাদের সত্যিই কাছে পাবেন।’

একই অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘একাত্তর সালে অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে যে এখন আমাদের ২০২৪ সালে এসে বলতে হচ্ছে দ্বিতীয় স্বাধীনতায় আমরা আরেকবার স্বাধীন। এই স্বাধীনতা তো আর বন্ধ করা যাবে না। এই স্বাধীনতা আমাদের টিকিয়ে রাখতে হবে। শহীদ পরিবারের কষ্ট আমরা কাউকে বলে বোঝাতে পারব না। বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ, ভাইয়ের কাঁধে ভাইয়ের লাশ। কিন্তু মায়ের কান্না লাশ বহন করে না মায়ের বুকের ভেতরে বহন করে। আমরা শহীদ ও আহত পরিবারের পাশে থাকব। যদি আমাদের কোনো গাফলতি হয় তাহলে আপনারা আমাদের প্রশ্ন করবেন। এটা আপনাদের অধিকার।’

সারজিস আলম বলেন, ‘ফারুকী তার পুরো সময়ে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার জন্য যেভাবে তোষামোদি করার দরকার তা করেছেন। এ ফারুকীরা কীভাবে এ উপদেষ্টা পরিষদে আসেন? এরকম কঠিন সময়ে নীরব থাকা ও গা বাঁচিয়ে চলা লোকজনকে আমরা উপদেষ্টা হিসেবে দেখতে চাই না।’

তিনি বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে অনেকবার আখতার হোসেনের রক্ত ঝরেছে। তিনি প্রতিদিন আন্দোলনের সাথে ছিলেন। তার এ অবদানকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই।’

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত রংপুর বিভাগের ৪৪টি পরিবারের মধ্যে পাঁচ লাখ করে টাকা অনুদান দেয়া হয়।

পরে উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদ ও ফরিদা আখতার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করতে রংপুরের পীরগঞ্জে যান।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন প্রধান নির্বাহী মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ, পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, ডিসি মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল, নিহত সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র মা শামসি আরা জামান।


আরো সংবাদ



premium cement