০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, empty
`

রংপুর মেডিক্যালে ওয়ার্ডের ভেতরে সরকারি ওষুধ বিক্রির অভিযোগ

অভিযুক্ত মমিনুর রহমান রিপন ও আরমান আলী - ছবি : নয়া দিগন্ত

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সরকারি ওষুধ সাপ্লাই না থাকার অজুহাতে বাইরে থেকে কিনে আনার জন্য স্লিপ লিখে দেয়া হলেও ওয়ার্ডের ভেতরেই সরকারি ওষুধ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় রোগীর স্বজনরা দু’জনকে আটক করলে আনসারদের বিরুদ্ধে তাদের ছেড়ে দেয়ারও অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দোতলায় ৩ নম্বর পুরুষ ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে।

যাদেরকে আটকের পর ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে তারা হলেন হাসপাতালের কর্মচারী আনজুআরা বেগমের ছেলে মমিনুর রহমান রিপন। তিনি হাসপাতালের সাবেক চুক্তিভিত্তিক কর্মী ছিলেন। অপরজন হলেন বেসরকারি সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কমিশন এজেন্ট আরমান আলী।

ভুক্তভোগী কারমাইকেল কলেজের ছাত্র সিরাজুল ইসলাম জানান, ‘আমি বুধবার সন্ধ্যায় আমার মামা তোফাজ্জল হোসেনকে ঠাঁকুরগাও থেকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করাই। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসকরা আমাকে হাসপাতালে মজুদ নাই জানিয়ে সাদা কাগজে ওষুধের প্রেসক্রিপিশন লিখে তা বাইরে থেকে আনতে বলেন। আমি ওষুধ কেনার জন্য বের হতে গেলে সেখানে থাকা মমিনুর রহমান রিপন ও আরমান আলী আমার কাছ থেকে সাদা কাগজের স্লিপ নেন এবং বলেন তার কাছে সরকারি ওষুধ আছে। অর্ধেক কমিশনে তিনি তা বিক্রি করতে চান আমার কাছে। আমি তার কাছে দামদর করে ওষুধগুলো ক্রয় করি। এর মধ্যে আমি আমার বন্ধুদের বিষয়টি মাসেজে জানালে তারা হাসপাতালে আসেন এবং তাদের আটক করেন। সরকারি ওষুধ হাসপাতালে নাই, কিন্তু তারা কোথায় পেলেন জানতে চাইলে তারা জানায়, হাসপাতাল ঝাড়ু দেয়ার সময় তারা পেয়েছেন।’

সেখানে উপস্থিত সিহাব ইসলাম জানান, ‘আমরা তাদের দু’জনকে আটক করে সেখানে থাকা আনসার সদস্যদের কাছে সোপর্দ করি। কিন্তু আনসার সদস্যরা তাদের আটক করে কর্তৃপক্ষের কাছে না দিয়ে উল্টো ছেড়ে দেন। তিনি আরো জানান, আমরা আটক করায় তারা আমাদের তেড়ে আসেন। উল্টো আমাদের ভিডিও করে তা ছাত্র সমন্বয়কদের কাছে পাঠান এবং ঘটনা মিমাংসার জন্য চাপ দেন। তিনি বলেন, হাসপাতালে রোগীদের স্লিপ ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে বাইরে থেকে ওষুধ আনতে। আর ওয়ার্ডের ভেতরেই সেই সরকারি ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে প্রকাশ্যে। এর সাথে পুরো হাসপাতালের স্টাফরা জড়িত বলে দাবি তার।’

তবে আটকদের ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঘটনার সময় থাকা দু’আনসার সদস্য। তাদের একজন বাবুল হোসেন জানান, ‘আমরা হাসপাতালে নতুন এসেছি। ভ্রাম্যমাণ ডিউটিতে ছিলাম। কয়েকজনের কথা কাটাকাটি দেখেই সেখানে যাই। এ সময় তারা কথা কাটাকাটি ও ভিডিও করছিলেন। আমরা তাদের জিজ্ঞেস করতে করতেই তারা বের হয়ে যান। আমরা পিছু পিছু গিয়েও তাদের আটক করতে পারিনি।’

ওয়ার্ডের সিনিয়র নার্স মোস্তফা আবিদ জানান, ‘এমন ঘটনা সচরাচর ঘটে না। আমরা ওষুধপত্র বিশেষ করে এন্টিবায়েটিক সবগুলো সরকারিভাবেই দিয়ে থাকি। কিন্তু রিসেন্ট সাপ্লাই না থাকায় যারা গরীব রোগী তারা হয়তো অল্প টাকায় ওষুধ তাদের কাছ থেকে নিয়ে থাকে। কিন্তু সরকারি ওষুধ কিভাবে ওয়ার্ডেই বিক্রি হয় এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি তিনি।’

এ বিষয়ে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আ: ম: আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বিকেল ৫টার সময় অফিস শেষ করে চলে এসেছি। এ বিষয়ে আমাকে কেউ জানাননি। কালকে পরিচালকের সাথে কথা বলেন।’

হাসপাতালটির রোগী ও স্বজনরা জানান, ‘হাসপাতালের সরকারি ওষুধ বিক্রির একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট আছে। রোগীদের সরকারি ওষুধ সাপ্লাই নাই বললেও সেখানে তাদের নিযুক্ত দালালরা ওপেনে ওয়ার্ডের ভেতরেই সরকারি ওষুধ বিক্রি করছেন। শুধু তাই নয়, এরা খুবই শক্তিশালী। যারা এর প্রতিবাদ করছেন। তাদেরকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করতে তারা ছাত্র সমন্বয়কদেরও ব্যবহার করছেন।’

 


আরো সংবাদ



premium cement