০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, empty
`

রংপুরে চাঁদাবাজদের গ্রেফতার না করলে আত্মহত্যার হুমকি ব্যবসায়ীদের

রংপুরে চাঁদাবাজদের গ্রেফতার না করলে আত্মাহত্যার হুমকি দিয়ে ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের অবরোধ - ছবি : নয়া দিগন্ত

চাঁদা না দেয়ায় ফুটপাতের দোকানপাট ভাংচুর ও ব্যবসা বন্ধ করে দেয়ার প্রতিবাদে রংপুরে লাঠি হাতে সড়ক অবরোধ করছে ফুটপাতের ব্যবসায়িরা। চাঁদাবাজদের গ্রেফতার না করলে আত্মাহুতির হুমকি দিয়েছে অবরোধকারীরা। দেড়ঘণ্টা পর নিরাপদে চাঁদাছাড়াই ব্যবসা নিশ্চিতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর আশ্বাসে তারা অবরোধ তুলে নেয়।

মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) রাত ৯টা থেকে রংপুর মহানগরীর কারামতিয়া মসজিদ মোড়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করে সেখানকার পিঠা, চা,পান, জুসসহ ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা। এ সময় তাদের সাথে যোগ দেয় পরিবারের লোকজন। তারা লাঠি হাতে বিক্ষোভ করতে থাকে।

এ সময় অবরোধকারী ফুটপাতের দোকানী লাভলী বেগম জানান, ‘আমরা এই মোড়ের মধ্যে ফুটপাতে চা বিক্রি করে খাই। স্থানীয় মুনশিপাড়ার শান্ত, ইমন, পিয়াল, লিমন, সনি, রাকিবসহ কয়েকজন যুবক প্রতিদিনই আমাদের দোকানে এসে ২০-৩০ টাকার চা বিড়ি খায়। টাকা দেয় না। আমরা কিছু বলিও না। কিন্তু সোমবার (৪ নভেম্বর) থেকে বায়না ধরেছে ওদেরকে দোকানপ্রতি প্রতিদিন ২৫০ টাকা করে চাঁদা দিতেই হবে। আমরা গরিব মানুষ। দিন আড়াইশ টাকা কামাই করা আমাদের জন্য কস্টকর। ওদের কিভাবে দিবো। ওরা আমাদের হুমকি দিয়েছে। টাকা না দিলে কেউ দোকান খুলতে পারবে না। আমরা ভয়ে সন্ধায় দোকান খুলেছি। এশার নামাজের পর ওরা এসে টাকার দাবি করতে থাকে। তখন আমরা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ওরা আমাদের দোকানে দোকানে হামলা চালায়।’

লাভলী আরো জানান, ‘এরপর আমরা সবাই মিলে তাদের বাধা দেই। আমাদের সাথে এলাকার লোকজনও আসে। তখন তারা পালিয়ে যায়। এখন আমরা বিক্ষোভ করতেছি। আমাদের কর্মের নিরাপত্তা, জীবনের নিরাপত্তা কে দিবে। ওরা এখন আমাদের বাড়িঘরও ভাংচুরের হুমকি দিচ্ছে।

লাভলী বলেন, ‘আমার ছেলেও জুলাই মাসে দেশ স্বাধীন করার জন্য গেছিল। আমারে ছেলের পা ভেঙে গেছিল, তখন সেটা প্লাস্টার করেছিলাম। পরের দিন পুলিশের ভয়ে পায়ের প্লাস্টর খুলে ফেলছি। ভয়ে ছিলাম, কখন এসে আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। আন্দোলনে যাওয়ার জন্য। তার ফল কি এটা আমার ভোগ করছি। যে চাদাবাজরা আমাদের দোকান থেকে তেল তুলে নিয়ে যাচ্ছে। টাকা চাচ্ছে, দোকান ভেঙে দিচ্ছে। আমরা এখন শুধু একটু বাঁচতে চাই, আর কিছু চাই না ভাই।’


পাঁপড়ী আক্তার নামের এক দোকানী বলেন, ‘আমরা দিন আনি দিন খাই। মুন্সিপাড়ার কয়েকটা চাঁদাবাজ, গুন্ডা, সন্ত্রাস, নেশাখোর ওরা এসে দিন ২৫০ টাকা করে চাঁদা দাবি করেছে। চাঁদা না দেয়ায় ওরা দোকনপাটগুলো ভাংচুর করল। লুটপাট করল। প্রশাসন যদি থাকতো। তাহলে এখই এর বিচার হইতো। আমার স্বৈরাচার বিদায় করছি। কিন্তু স্বৈরাচারের বীজ এখনো বিদায় করতে পারি নাই। এখন বাংলার মাটিতে স্বৈরাচারের বীজ বোপন করা আছে। শেকড় থেকে বীজ তুলতে না পারলে এই বীজ উদ্ধার হবে না। ওদের কাছে কেন মাথা নত করে থাকতে হবে। কিসের জন্য। বুক পেতে রক্ত দিছি মাথা নত করার জন্য নয়। এটার আমার বিচার চাই। প্রশাসন যদি ওদের বের করে এনে গ্রেফতার না করে। তাহলে আমরা এখানে যত পরিবার আছি। সবেই একসাথে সবার গায়ে আগুন দিয়ে মারা যাবো। তারপর প্রশাসনকে দেখাবো মানুষ ক্ষিপ্ত হইলে কি করতে পারে।’

একই ধরণের অভিযোগ করেন অপর ব্যবসায়ী জেসমিন বেগম বলেন, ‘ওরা এসে বলে আমরা স্থানীয় আমাদেরকে টাকা দিতেই হবে। তখন আমি বলি আমিও তো স্থানীয়, এলাকার বউ। আমি টাকা দিতে না চাওয়ায় আমাকে অশ্লীলভাষায় গালি-গালাজ করেছে। এরপর তারা আমার দোকানে হামলা চালায়। আমার ভাসুরের গায়ে হাত তোলে। গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে গেছে। চুলায় পানি ঢেলে দিয়েছে। আমাকে থাপ্পর মারতে চেয়েছে। আমি প্রতিবাদ করলে তেলের মধ্যে পানি ঢেলে ফেলে দিয়েছে। এখন আমরা জানের নিরাপত্তা চাচ্ছি। সুষ্ঠু বিচার চাচ্ছি।’

খবর পেয়ে রেখানে ছুটে যায় পুলিশ। বিক্ষোভকারীরা রাস্তা ছেড়ে না দিলে সেখানে আসে সেনাবাহিনী। তারা এসে বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতার এবং তাদের দোকান করা ও নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিলে তারা অবরোধ তুলে নেয়। পরে কয়েকজন দোকানিকে পুলিশে থানায় ডেকে নেয় মামলা করার জন্য।


ঘটনাস্থেলে উপস্থিত রংপুর মহানগর পুলিশের কোতায়ালী থানার ওসি (তদন্ত) শুকুর আলী জানান, রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাদেরকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় বিক্ষোভ থেকে সরাতে পেরেছি। ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কাজ শুরু করেছি।


আরো সংবাদ



premium cement