২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সারজিস-হাসনাতকে রংপুরে ঢুকতে না দেয়ার ঘোষণা জাপা নেতার

সারজিস-হাসনাতকে রংপুরে ঢুকতে না দেয়ার ঘোষণা জাপা নেতার - ছবি : নয়া দিগন্ত

জাতীয় পার্টি নিয়ে বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকে রংপুরে প্রবেশ করতে না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।

সোমবার (১৪ অক্টোবর) রাতে রংপুরে দলীয় কার্যালয়ে জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির যৌথকর্মী সভায় সভাপতির বক্তব্যে এই ঘোষণা দেন তিনি।

এ সময় তাদেরকে ‘টোকাই’ হিসেবেও অভিহিত করেন তিনি। এছাড়া তিনি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের শহীদের সংখ্যা দাবিকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সুফল নিজের ঘরে নেয়ার অশুভ পরিকল্পনা বলেও দাবি করেছেন তিনি।

এতে প্রধিান অতিথি ছিলেন দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। এ সময় দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম ইয়াসির, যুগ্ম মহাসচিব হাজি আব্দুর রাজ্জাকসহ কেন্দ্রীয় ও স্থাণীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

জাপা কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘রংপুরে যা করতে চান তা জাতীয় পার্টির অংশ গ্রহণ ছাড়া আমরা ঘটাতে দিব না। জাতীয় পার্টিকে বাদ রেখে কোনো আলোচনা নয়। রংপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার, বিভাগীয় কমিশনার আপনাদের জানিয়ে দিতে চাই, রংপুরে কোনো রাজনৈতিক সংলাপে জাতীয় পার্টিকে যদি ডাকা না হয়, সম্মান দেয়া না হয়, তাহলে জাতীয় পার্টি নিজেই সেটা অধিকার আদায় করে নিবে। জাতীয় পার্টিকে সেই সংলাপে ডাকা না হলে তা করতে দেয়া হবে না। রংপুরে জাতীয় পার্টি বৃহৎ দল। এখানে আমাদের ছাড়া কোনো আলোচনা ফলপ্রসু হবে না।’

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মোস্তফা বলেন, ‘এজন্য প্রস্তুত থাকবেন। সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সারজিস আলম রংপুরে আসতে পারবে না। যদি ফেসবুকে ম্যাসেস দেখেন। সাথে সাথে যার কাছে যা কিছু আছে, তা নিয়ে রংপুরে এই পার্টি অফিসে চলে আসবেন। আমরা দেখায় দিতে চাই। রংপুরে জাতীয় পার্টির শক্তিকতটুকু। সেই আন্দোলন পুলিশ ঠেকাবে, না বিজিবি ঠেকাবে, না র‌্যাব ঠেকাবে, সেটাকে সুপারচিট (অতিক্রম) করে ওই তাদেরকে যদি আমরা নস্যাত করতে না পারি, তাহলে জাতীয় পার্টিতে নাক ক্ষত দিয়ে চলে যাব। কোনোদিন আর জাতীয় পার্টি করব না। আমাদের ঘোষণা সারজিস আলম এবং হাসনাত আব্দুল্লাহর কোনো প্রোগ্রাম রংপুরের মাটিতে হতে দেয়া হবে না। যা হয়, তাই হবে ইনশাআল্লাহ।’

অন্তবর্তি সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশে মোস্তফা বলেন, ‘ড. ইউনূসকে বলতে চাই, আপনি একজন বিজ্ঞ মানুষ। একজন বরেণ্য মানুষ। বাংলাদেশের অনেক সম্মান বয়ে এনেছেন। কিন্তু কয়েকটা ছাত্রের কথা শুনে আপনি যদি রাষ্ট্র পরিচালনা করেন, তাহলে আপনি ভুল করবেন। এখনো কিন্তু আপনি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন নাই। সারাদেশের মানুষের মধ্যে হাহাকার। পুলিশ বাহিনী কাজ করতেছে না। আপনি স্বপ্ন দেখতেছেন একটা সুন্দর বাংলাদেশ গঠন করবেন। সেই বাংলাদেশ গড়তে গেলে আপনাকে গঠনমুলক চিন্তাভাবনা করতে হবে। আজকে সারজিস আলম এবং হাসনাত আব্দুল্লাহর মতো দুইটা টোকাইকে যদি মনে করেন বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণ করতেছে তাহলে আপনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন। যেভাবে উত্থান হয়, সেভাবে মানুষের পতনও হয়। আমরা চাই সংস্কার কার্যক্রম সমাপ্ত করার কাজটি জাতীয় পার্টিকে সাথে নিয়েই করবেন।’

মোস্তফা যুক্তি দেখিয়ে বলেন, ‘জাতীয় পার্টি জ্বালাও পোড়াও রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। অন্যকারো ওপর হস্তক্ষেপ করা আমাদের সংগঠনের ইথিক্সে নাই। আমরা শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক দল। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে রাজনীতি করতে চাই। যদি সেই রাজনীতি করতে দেয়া না হয়, তাহলে জাতীয় পার্টির থেকে খারাপ দল আর বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দল হবে না। বাংলাদেশের কোথায় কি হবে জানি না, রংপুর আমাদের অস্তিত্ব, সেই অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে মোস্তফার বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতে হয়, তাতেও আমি রাজি। তবুও রাজপথ ছাড়ব না।’

শহীদের সংখ্যায় বিএনপির সংখ্যা ঘোষণা নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সমালোচনা করে মোস্তফা বলেন, ‘জাতীয় পার্টিকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। তাদের (রংপুরে বিএনপির) রাজনীতি ছিল গ্রান্ড হোটেল মোড়। ওই মোড় থেকে তারা বের হতে পারে নাই। আজকে ফখরুল সাহেব হিসাব দেন। যে ৮৭০ জন মারাগেছে তারমধ্যে ৪২২ জনই তাদের। আপনার মতো দায়িত্ত্বশীল বিএনপির মহাসচিবের কাছ থেকে এ ধরণের কথা আমি আশা করি নাই। আপনি ভাগ করতে চাচ্ছেন বিএনপির অংশ সবচেয়ে বেশি। আর কেউ মারা যায়নি। আপনারা হিসেবে করে দেখেন প্রায় দুই হাজার লোক মারা গেছে। তারমধ্যে কয়জন ছাত্র মারা গেছে। আর কয়জন দলীয় কর্মী মারা গেছে। সেটা আপনারা ভালো করেই জানেন।’

মোস্তফা বলেন, ‘বিএনপি বলে এখানে রংপুরে নাকি পাঁচজন বিএনপির কর্মী মারা গেছেন। আমি জানি একজন বিএনপির কর্মীও রংপুরে মারা যায়নি। এখানে সাধারণ মানুষ মারা গেছে। এখানে কলা ব্যবসায়ী, ফল ব্যাবসায়ী মারা গেছে। আমাদের নেতা জেলা ছাত্রসমাজের সভাপতি আমিনুলের চাচা মিলন মারা গেছে। ৪২২ জনের হিসাব কোথায় পেলেন ভাই। আন্দোলনকে বিতর্কিত করে নিজের ঘরে ফলটা তুলতে চাচ্ছেন। এ ধরণের অশুভ চিন্তভাবনা থেকে আপনারা বেরিয়ে আসুন।’

মোস্তফা বলেন, ‘আন্দোলনে সবার অংশগ্রহণ ছিল। সবাই মিলে ফ্যাসিস্ট বিদায় করেছি। আপনারা তো পল্টনে এক লাখ লোকের সমাবেশ করেছেন। ১০ মিনিটের মধ্যে পুলিশ আপনাদের সমাবেশে ভেঙে দিয়েছে। একটা লোকও তো সেদিন মারা যায়নি। কাজেই এসব ভ্রান্ত কথাবার্তা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্তি করার যে চেষ্টা করতেছেন এটা শুভ হবে না। আন্দোলনের পর যত চাঁদাবাজি হয়েছে। যত ঘটনা ঘটেছে। যত টার্মিনাল দখল হয়েছে। সবজায়গাতে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদলের নেতাকর্মীরা জড়িত ছিলেন। আপনারা দেখান জাতীয় পার্টির কোন ছেলে কোথাও চাঁদাবাজি করেছে। মাস্তানি করেছে। এটা জাতীয় পার্টি করে না।’

মোস্তফা তার বক্তব্যে উপস্থিত দলের চেয়ারম্যানকে সারাদেশে সাংগঠনিক কর্মসূচি দেয়ার আহ্বান জানান।

পরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা আর বাংলাদেশে একদলীয় শাসন, ফ্যাসিবাদ এবং সবদলকে বাদ দিয়ে একদলীয় নির্বাচন ব্যবস্থা গ্রহণ করব না, রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দিব।’

জি এম কাদের বলেন, ‘আমরাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সবকিছু দিয়ে সহযোগিতা করেছি। সংসদে কথা বলেছি। আামাদেরকে আওয়ামী লীগের দোসর প্রচারণা দিয়ে সংলাপে ডাকা হচ্ছে না। এটা ঠিক নয়। আমাদেরকে দুটি দল অস্থির করে রেখেছিল।

তিনি বলেন, আগামী দিনে আন্দোলনের যে ডাক আসবে তাতে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাবে। তাদের দলে রাখা যাবে না।’


আরো সংবাদ



premium cement