০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ২ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

রংপুরে মুক্তিযোদ্ধার নাতির ভুয়া পরিচয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা

শরীফুল ইসলাম - নয়া দিগন্ত

মুক্তিযোদ্ধার নাতির ভুয়া পরিচয়ে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের বড় আলমপুর ইউনিয়নে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে কর্মরত শরীফুল ইসলাম চাকরি নিয়েছেন। এর জন্য তিনি মায়ের নামে ভুয়া নিকাহনামা ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভুয়া জন্মসনদও তৈরি করেছিলেন।

এ বিষয়ে অনুসন্ধান করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, ভুয়া নিকাহ রেজিস্ট্রার এবং ভুয়া জন্মসনদ প্রদানকারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে দুদক।

দুদক সূত্রে এবং অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১২ সালের ১৮ অক্টোবর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ৭৩৬ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তিতে ২২ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে প্রার্থীর বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে হতে হবে বলা হয়। শারীরীক প্রতিবন্ধী ও মুক্তিযোদ্ধা/শহীদ মুক্তিযোদ্ধার ছেলে-মেয়ে এবং নাতি-নাতনির ক্ষেত্রে বয়স সীমা ৩২ বছর উল্লেখ করা হয়।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার হযরতপুর গ্রামের কাজীপাড়া গ্রামের তোজাম্মেল হোসেনের ছেলে শরীফুল ইসলাম ওই পদে মুক্তিযোদ্ধার নাতি কোটায় আবেদন করেন। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী নিয়োগের সময় তার বয়স ৩১ বছর ছয় মাস ১৪ দিন হলেও মুক্তিযোদ্ধার নাতি কোটায় তাকে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর ২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট শরীফুল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে যোগদান করেন। চাকরিতে আবেদনের সময় শরীফুল ইসলাম বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলেমান আলী, বাবা- মরহুম বছির উদ্দিন, গ্রাম- গজারিয়া, থানা- সাঘাটা, জেলা-গাইবান্ধা সম্পর্ক নানা উল্লেখ করে মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্রসহ অন্যান্য কাগজপত্র দাখিল করেন। মুক্তিযোদ্ধার নাতি পরিচয় দিতে শরীফুল তার মাকে মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে পরিচয় দিয়ে ভুয়া নিকাহনামা তৈরি করেন নিকাহ রেজিস্ট্রার আবু তালেবের মাধ্যমে। এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আমিন প্রধানের মাধ্যমে ভুয়া জন্মসনদও তৈরি করেন।

জানা গেছে, শরীফুল ইসলামের মা সকিনা বেগম মুক্তিযোদ্ধা সোলেমান আলীর মেয়ে নন। তারপরেও শরীফুল নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার নাতি পরিচয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সাঘাটা থেকে একটি প্রত্যায়নপত্র সংগ্রহ করেন। ওই সনদপত্রে দেয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান আলীর মুক্তিবার্তার সনদটিও ভুয়া। এছাড়াও নিকাহনামাটি এবং জন্মসদনটিও ভুয়া।

এ বিষয়ে অভিযোগ হলে তদন্ত শুরু করে দুদক। অনুসন্ধান করে অভিযোগের সত্যতা পায় তারা। এ ঘটনায় দুদক রংপুর কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক এ কে এম নুর আলম সিদ্দিক ২০২১ সালের ২৩ জুন দুদক আইনে মামলা করেন। পরে দীর্ঘ তদন্ত শেষে উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শরীফুল, নিকাহ রেজিস্ট্রার আবু তালেব, ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন প্রধানের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা, দুদক রংপুরের উপ-সহকারী কর্মকর্তা মো: ইমরান হোসেন।

তিনি জানান, তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে যে শরীফুল ইসলাম তার মা সকিনা বেগমকে মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান আলীর মেয়ে বানাতে ভুয়া কাবিননামা ও জন্মসনদ তৈরি করেছেন। এবং ভুয়া নাতি সেজে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ পেয়েছেন। তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এছাড়াও তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা এবং সম্পদ জব্দের জন্য ক্রোকি পরোয়ানা জারি করার আবেদন করা হয়েছে। রোববার (৬ অক্টোবর) এ বিষয়ে আদালত শুনানি শেষে আদেশ দেয়ার দিন ধার্য আছে।

রংপুর দুদক আদালতের বিশেষ পিপি হারুন উর রশীদ জানান, মামলায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিতে তার মাকে মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে পরিচয় দিয়ে নিকাহনামা প্রদান করায় নিকাহ রেজিস্ট্রার আবু তালেব ও ভুয়া পরিচয়পত্র প্রদান করায় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন প্রধানের বিরুদ্ধেও চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।

শরীফুল ইসলাম বর্তমানে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বড় আলমপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে কর্মরত আছেন। এ বিষয়ে জানতে শরীফুল ইসলামের মোবাইলে একাধিকারবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো: সাদেকুজ্জামান সরকার বলেন, ‘উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শরীফুল ইসলামের বিষয়ে এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আবারো মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাওয়াদের তথ্য জানতে চাওয়া হয়। আমরা সব তথ্য আবারো জানিয়েছি। শুনেছি তার বিরুদ্ধে চার্জশিট হয়েছে।’


আরো সংবাদ



premium cement