২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

নিম্নাঞ্চলে পানির দুর্ভোগ কমছে, বাড়ছে ভাঙ্গন

নিম্নাঞ্চলে পানির দুর্ভোগ কমছে, বাড়ছে ভাঙ্গন - ছবি : নয়া দিগন্ত

কমতে শুরু করেছে তিস্তার পানি। কিন্তু তীরবর্তী এলাকাজুড়ে ধরেছে ভয়াবহ ভাঙন।

সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় লালমনিরহাটের ব্যারেজ পয়েন্টে ৪৫ সেন্টিমিটার এবং রংপুরের কাউনিয়ার সেতু পয়েন্টে ৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে তিস্তার পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

এর আগে রোববার সকাল থেকে পঞ্চমবারের মতো বাড়ে তিস্তার পানি। এতে অববাহিকার দুইপাড়ের চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে উঠতি আমন ও বাদামসহ বিভিন্ন আবাদি জমি।

তিস্তায় পানি বৃদ্ধির কারণে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালিগঞ্জ, আদিতমারী, সদর, নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে পানি উঠেছে। অববাহিকার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়েছে। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট। অনেক জায়গায় বিচ্ছিন্ন যাতায়াত। নৌকা-কলার ভেলায় কোনো মতে যাতায়াত করছে মানুষ। বাড়িঘরে পানি ওঠায় রান্না এবং শিশুদের নিয়ে বিপাকে পানিবন্দীরা। তলিয়ে গেছে উঠতি বাদামসহ ফসলি জমি। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিলেও এসব মানুষের পাশে এখনো পাশে দাঁড়ায়নি কেউ। রোববার দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে পানি কমতে শুরু করায় বাসা বাড়ি থেকে নামছে পানি। তবে দুর্ভোগ কমেনি।

এদিকে, পানি বাড়া ও কমার সাথে সাথে বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে ভাঙ্গন। রংপুরের গঙ্গাচড়ার মর্নেয়া, কোলকোন্দ, লক্ষিটারী, মর্নেয়া, কাউনিয়ার বালাপাড়ার গদাই, পীরগাছার ছাওলা, তাম্বুলপুর লালমনিরহাটের হাতিবান্দার সিন্দুরনা, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ি, কালিগঞ্জের কাকিনা, আদিতমারির মহিষাখোচ, সদরের খুনিয়াগাছ, কুড়িগ্রামের রাজারহাটের বিদ্যানন্দ, গতিআসাম, বুড়িরহাট, উলিপুরের ঠুটাপাইকর, থেতরাই, বজরা, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের তারাপুর, বেলকা, হরিপুর ইউনিয়নের শতাধিক পয়েন্টে ধরেছে ভয়াবহ ভাঙ্গন।

ভাঙ্গনকবলিত বিশ্বনাথ এলাকার মোহাম্মদ আজগার আলী জানালেন, ভাঙ্গন শুরু হয় রোববার। পরে গভীর রাতে তিনি তার ঘর সরিয়েছেন তিনি। এরই মধ্যে ভেসে গেছে গবাদি পশুসহ বিভিন্ন মালামাল। ভেঙ্গে গেছে বসতভিটা অর্ধেক। আট বিঘা জমির পাকা আমন ধান আমল ও বাদাম ক্ষেতের ওপর হাঁটু পানি।

একটিমাত্র ঘরও সরিয়ে নিতে হয়েছে রোববার রাতে গৃহবধূ রাবেয়া বেগমকে। তিনি জানালেন যে গভীর রাতে ঘর বাঁচাতে পারলেও ঘরের কোনো মালামাল বাঁচাতে পারেননি তিনি।

‘তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ’-এর স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য আশিকুর রহমান আশিক জানিয়েছেন, গনাই ও বিশ্বনাথ এলাকায় রোববার রাতেই দশটি পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখনই ঠেকানোর উদ্যোগ না নেয়া হলে পাশেই বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি স্কুল হাটবাজার এবং সড়ক তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

তিনি অবিলম্বে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরুর দাবি করেন।

উত্তরাঞ্চল পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, গুরুত্ব বিবেচনায় কিছু কিছু এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন প্রতিরোধের চেষ্টা চলছে।

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি জানান, তিস্তা উত্তরের দুই কোটি মানুষের জীবনরেখা। প্রতিবছর এখানে ২০ হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হয়। প্রায় লাখ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় তৈরি হয়েছে এই অবস্থা। যেহেতু পানি চুক্তি হচ্ছে না, তাই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলেই এই অবস্থার উত্তরণ সম্ভব।

গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ তামান্না জানান, আমরা সতর্ক অবস্থায় মাঠে আছি। এরই মধ্যে দুর্গত মানুষের মাঝে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

রংপুরের ডিসি মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল জানান, তিস্তার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলে পানিবন্দী মানুষের পাশে আছে প্রশাসন। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে মাঠপর্যায়ে প্রশাসনকে প্রস্তুত রেখেছি। সম্ভাব্য সব ধরণের প্রস্তুতি আছে আমাদের।


আরো সংবাদ



premium cement