তিস্তায় পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, পানিবন্দী ২ হাজার মানুষ
- মো: রেজোয়ান ইসলাম, ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি
- ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮:৫৭
উজানে পাহাড়ি ঢল ও টানা পাঁচ দিনের বৃষ্টিপাতে ক্রমশ বাড়ছে তিস্তা নদীর পানি। শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। এরই মধ্যে পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের সবকটি কপাট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পানি বৃদ্ধিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় প্রায় ২ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিমলা উপজেলার গয়াবাড়ী, পশ্চিম ছাতনাই, পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, খালিশা চাপানী ও ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রাম ও নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকায় প্রায় ২ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বেশ কিছু স্থানে তিস্তার বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানির নিচে ডুবে গেছে চর ও নিম্নাঞ্চলের আমন ধান, আগাম শীতকালীন সবজির ক্ষেত ও চলাচলের সড়ক। ভেসে গেছে মাছের পুকুর-খামার। অনেকে গবাদিপশু নিয়েও নিদারুণ বিপাকে পড়েছেন। এছাড়াও টানা বৃষ্টিপাতে পানি বাড়ার ফলে উপজেলার সব নদ-নদীর পানির পাশাপাশি বিলের পানি বৃদ্ধিও অব্যাহত আছে। এতে রাস্তাঘাট ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। সেই সাথে ফসলি জমিতে পানি ওঠায় নষ্ট হচ্ছে আগাম শীতকালীন শাকসবজি, বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসল।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক নূরুল ইসলাম দৈনিক নয়া দিগন্তকে জানান, দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে বেলা ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ১০ সেন্টিমিটার যা বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর আগে ৯টায় পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ০০ সেন্টিমিটার যা বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১ দশমিক ৮৩ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। বেলা ১২টায় বিপৎসীমার ৫১ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার, সকাল ৯টায় ৫১ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়। এ পয়েন্টে ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হলে বিপৎসীমা অতিক্রম করে।
ছোটখাতা এলাকার মাজেদুল ইসলাম (২৭) বলেন, বৃষ্টির কারণে বাঁধ ধসে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বাঁধ সংস্কার না করলে ভাঙ্গন আরো বড় আকারে রূপ নিতে পারে।
ডিমলা উপজেলার পূর্ব খড়িবাড়ী এলাকার বাসিন্দা বুদারু মিয়া (৩৫) বলেন, নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। আমাদের রাত জেগে থাকতে হবে। কখন যে কি হয় ঠিক নেই।
উপজেলার কিসামত চরের বাসিন্দা কৃষক আরিফুল ইসলাম (৩৫) বলেন, আজ ভোর থেকে বাড়িঘরে নদীর পানি ঢুকতে শুরু করেছে। তিস্তার পানি বাড়তে থাকায় চরের অনেক পরিবার তাদের মালপত্র সরিয়ে নিরাপদে নিয়ে যাচ্ছে।
১০ নম্বর পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: আব্দুল লতিফ খান বলেন, ঝাড়সিংহেশ্বর ও পূর্ব ছাতনাই মৌজার ৬টি ওয়ার্ডের প্রায় ১৩ শ’ পরিবার পানিবন্দী রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ৭ নম্বর খালিশা চাপানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: সহিদুজ্জামান সরকার দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, বাইশ পুকুর এলাকায় প্রায় ৪ শতাধিক বাড়িঘরের পানি উঠেছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। সেই সাথে ফসলি জমিতে পানি ওঠায় নষ্ট হচ্ছে আগাম শীতকালীন শাকসবজি ও আবাদি বিভিন্ন ফসল।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া শাখার উপ-প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদীন বলেন, অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। পানির চাপ সামলাতে তিস্তার ব্যারাজের সবকটি জলকপাট খোলা রাখা হয়েছে।
ডিমলা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আব্দুস সবুর মিয়া দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, গত ৪৮ ঘণ্টায় ডিমলা উপজেলায় ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, রংপুর বিভাগসহ দেশের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের ভারী বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে রংপুর বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা