২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আবেদনের যোগ্যতা না থাকলেও তিনি রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক!

অভিযুক্ত শিক্ষক মো: ইউসুফ - ছবি : সংগৃহীত

বিগত সরকারের আমলে আবেদনের যোগ্যতা না থাকলেও নজীরবিহীন অনিয়ম করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে মো: ইউসুফ নামের একজনকে। শুধু তাই নয়, ওই শিক্ষককে নিতে আইন না মেনে প্লানিং কমিটিও গঠন করা হয়নি। সিন্ডিকেট ওই নিয়োগ বাতিল করলেও বিষয়টি চ্যান্সেলরকে জানানোর আইন থাকলেও সেটা কৌশলে করেনি তৎকালীন কর্তৃপক্ষ। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে হাইকোর্টে রিটের পর রায় নিয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন বিভাগে। এ বিষয়ে আপিলও করেনি কর্তৃপক্ষ।

অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। হয়েছেন নীলদল, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ ক্লাব, বঙ্গবন্ধু পরিষদ নেতা। দায়িত্ব পালন করেছেন সহকারি প্রক্টর ও সহকারি প্রভোষ্ট হিসেবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন সখ্যতা গেড়েছেন সাদাদলে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার দফতর সূত্র ও অনুসন্ধানে মিলেছে নজীরবিহীন এই অনিমমের চিত্র।

তবে শিক্ষক মো: ইউসুফ জানিয়েছেন, সার্কুলারে দেয়া যোগ্যতা অনুযায়ী তিনি নিয়োগ পেয়েছেন। সার্কুলারে কোনো দুর্বলতা থাকলে সেটার দায় তার নয়।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় একটি শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে (স্মারক নং- বেরোবি/রেজি:/শি:নিয়োগ/২০১১/৭৭৪।) ওই বিজ্ঞপ্তির পদের বিবরণীর ‘খ’ তে ইতিহাস বিভাগে (বর্তমানে ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ) প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপক (স্থায়ী) ০১ (এক) টি পদে নিয়োগের কথা বলা হয়। বিজ্ঞপ্তির শর্তাবলীর (গ) নং শর্তে উল্লেখ করা হয়, ‘এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার যেকোনো একটিতে ন্যূনতম 'A' (৫.০০ পয়েন্ট ভিত্তিক গ্রেড সিস্টেমে সিজিপিএ/জিপিএ নূন্যতম ৪.০ থাকতে হবে।’ কিন্তু ওই পদে নিয়োগ দেয়া হয় মো: ইউসুফ নামের একজনকে। যার এসএসসি (২০০১) এবং এইচএসসি (২০০৩) পরীক্ষা ৫.০০ পয়েন্ট ভিত্তিক গ্রেড পদ্ধতিতে হলেও দু'টির একটিতেও সিজিপিএ/জিপিএ ৪.০০ ছিল না। নিয়োগ পাওয়া এই শিক্ষক এসএসসিতে সিজিপিএ/জিপিএ ৩.৫০ এবং অংকে সি গ্রেড ও এইচএসসিতে ৩.০১ এবং ইংরেজিতে ডি গ্রেড পেয়েছেন। কিন্তু কিভাবে সম্ভব হলে এই নিয়োগ। তা অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে পুকুর চুরির ঘটনা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পদের বিবরণের ১ (খ) তে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের যে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে তাতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর এর ২০০৯ সালের ২৯ নং আইনের প্রথম সংবিধির ১১(৮) ও (৯) লঙ্ঘিত হয়েছে। এই আইনের ৩৯ এর (২) নং ধারায় বলা আছে ‘তফসিলে বর্ণিত সংবিধি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সংবিধি হইবে’। উক্ত সংবিধির [ধারা ৩৯(২) দ্রষ্টব্য] ১১ (৮) এ উল্লেখ আছে বিভাগের মোট শিক্ষক সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষক সমন্বয়ে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটি গঠিত হইবে। তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত কমিটির সদস্য সংখ্যা অন্যূন তিনজন হইতে হবে।’

কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যায়, ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময়কালে বিভাগে তিনজন শিক্ষক কর্মরত ছিলেন। তারা হলেন ড. আবু মো: ইকবাল রুমী শাহ, মো: গোলাম রব্বানী ও আরা তানজিয়া। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে প্ল্যানিং কমিটি গঠন না করেই এই বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির আইনের সংবিধির ধারা ১১(৯) এ উল্লেখ আছে ‘প্লানিং কমিটি নিম্ন বর্ণিত কার্যাবলী সম্পাদন করিবে, যথা:- (ক) বিভাগের সম্প্রসারণ; এবং (খ) শিক্ষক, অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ।’ কিন্তু এই আইন অমান্য করে বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটি গঠন ব্যতিরেকেই ইতিহাস বিভাগ শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল।

অনুসন্ধানে আরো উঠে আসে, ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত একটি স্থায়ী পদের বিপরীতেই ২০১২ সালের ২৮ জুন আবেদনপত্র যাছাই-বাছাই ছাড়াই নিয়োগ বাছাই বোর্ডে তিনজন প্রার্থীকে স্থায়ীভাবে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। তারা হলেন মো: ইউসুফ, মো: মনিরুজ্জামান ও মো: আকতারুল ইসলাম। এখানেও সংবিধির ধারা ১১(৯) লঙ্ঘন করা হয়।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মো: ইউসুফের আবেদনের যোগ্যতা না থাকলেও ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ বাছাই বোর্ড তাদের সুপারিশের কারণ হিসেবে বলেন ‘আবেদনকারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, প্রকাশনা এবং সাক্ষাৎকারের দক্ষতার ভিত্তিতে সর্বসম্মতিক্রমে তাদেরকে প্রভাষক(১১০০০-৪৯০*৭-১৪৪৩০-ইবি-৫৪০*১১-২০৩৭০) পদে জাতীয় বেতন স্কেলে ২০০৯ অনুসরণে স্থায়ী একটি প্রভাষক পদের নিয়োগ করার সুপারিশ করা হয়।’

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিজ্ঞপ্তির শর্তানুযায়ী মো: ইউসুফের ওই পদে আবেদনের যোগ্যতাই ছিল না। কিন্তু তাকে ভাইভা কার্ড ইস্যু করা হয়। নিয়োগ বাছাই বোর্ডে ছিলেন তৎকালীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য ড. আতফুল হাই শিবলী, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও কলা অনুষদের ডীন হিসেবে ড. আবু মো: ইকবাল রুমি শাহ এবং ভিসি প্রফেসর ড. আব্দুল জলিল মিয়া।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নজীরবিহীন এই নিয়োগ জালিয়াতির বিষয়টি স্পষ্ট হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির ২০১৩ সালের ৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ৩৬তম সিন্ডিকেট সভায়। সিন্ডিকেট সভার আলোচ্য সুচি ৮ এ ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে যাছাই বাছাই বোর্ডের সুপারিশ এবং পর্যালোচনা ও নিয়োগের অনুমোদন এজেন্ডা আলোচনায় সময় স্পষ্ট হয় শুভংকরের ফাঁকি। সিন্ডিকেট সদস্যরা এ বিষয়ে তাদের লিখিত সিদ্ধান্তে বলেন, ‘ইতিহাস ও প্রত্নতত্ব বিভাগের বাছাই বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী যে তিনজন প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে তাদের মধ্য দ্বিতীয় প্রার্থী মো: ইউসুফ এর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় বি-গ্রেড ও স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণী থাকায় নিয়োগের জন্য উপযুক্ত বিবেচিত হতে পারে না। অতএব সিন্ডিকেট সভায় উপস্থিত সকল সদস্যের সর্ব সম্মতিক্রমে পদ পুনঃবিন্যাসের মাধ্যমে সৃষ্ট দু’টি প্রভাষকের স্থায়ী পদে বাছাই বোর্ডের সুপারিশকৃত প্রথম ও তৃতীয় প্রার্থী মনিরুজ্জামান ও মো: আকতারুল ইসলামকে নিয়োগ প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। ’

অসুন্ধানে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টির আইন লঙ্ঘন করে একটি প্রভাষকের পদ বিজ্ঞাপিত করলেও দুইজন প্রার্থীকে এবং অধ্যাপক পদের বিপরীতে একজনসহ মোট তিনজনকে নিয়োগ প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে। যদিও অনুমোদিত (স্থায়ী) পদ ছিল কেবল ১টি। তবুও তিনজনকেই স্থায়ী পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। যা আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।

অনুসন্ধানে বলছে, নিয়োগের পুরো লেখাটি টাইপ করা থাকলেও 'স্থায়ী একটি প্রভাষক পদে'র জায়গায় 'এক' শব্দটি কলম দিয়ে কেটে '০৩ (তিন)' হাতে লিখে দেয়া হয়। আবেদনের যোগ্যতা না থাকা মো: ইউসুফকে বাছাই বোর্ড নিয়োগের সুপারিশকৃত তিনজনের মধ্যে প্রথম হিসেবে উল্লেখ করেন। কিন্তু তার নামের আাগে ক্রমিক নং ২ লেখা হয়। অনুসন্ধানে জানা যায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এটা লিখে তাকে আইনগত সুবিধা নেয়ার পথ তৈরি করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়টির আইনের ৩৪ (৩) এ বলা হয়েছে ‘বাছাই বোর্ডের সুপারিশের সহিত সিন্ডিকেট একমত না হইলে বিষয়টি চ্যান্সেলরের কাছে প্রেরণ করিতে হইবে এবং এই ব্যাপারে তাহার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হইবে।’ কিন্তু তৎকালীন ভিসি প্রফেসর ড. একেএম নুর উন নবী মো: ইউসুফের নিয়োগের সুপারিশ সিন্ডিকেট বাতিল করার পর চুড়ান্ত সিদ্ধান্তটি আনুষ্ঠানিকভাবে চ্যান্সেলরকে জানানোর নিয়ম থাকলেও তিনি তা কৌশলে জানাননি।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মো: ইউসুফ তার নিয়োগ সিন্ডিকেট সর্বসম্মতভাবে বাতিল করার পর আইনী কৌশল খুঁজতে থাকেন তিনি। সহযোগিতা নেন তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান ইকবাল শাহ রুমি ও তৎকালীন ভিসি প্রফেসর একেএম নুর উন নবীর। তাদের সহযোগিতায় এসময় অবৈধ পন্থায় মো: ইউসুফ নিয়োগ বাছাই বোর্ডের সুপারিশসহ তার নিয়োগ সংক্রান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তের গোপন সব নথি কালেক্ট করেন এবং ২০১৪ সালে হাই কোর্টে রিট পিটিশন (নং ৩৫৭২) দায়ের করেন। রিট পিটিশনে মো: ইউসুফ তার নিয়োগ সিন্ডিকেট কেন বাতিল করলো সেটি উল্লেখ করেননি। গত ২০১৯ সালের ৯ জুলাই হাইকোর্ট মো: ইউসুফের পক্ষে রায় দেন। কিন্তু তৎকালীন ভিসি ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ ওই রায়ের বিপক্ষে আপীল না করায় মো: ইউসুফ ওই বিভাগে ১৪ জুলাই ২০১৯ তারিখে প্রভাষক শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপ বাগিয়ে নিয়েছেন প্রমোশন। হয়েছেন সহকারি অধ্যাপক।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, হাইকোর্টে এই মামলার বিষয়ে অজ্ঞাত কারণে তৎকালীন ভিসি প্রফেসর ড. একেএম নুর উন নবী এবং প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ’র প্রশাসন সেরকমভাবে লড়াই করেননি।

এ প্রসঙ্গে রংপুর বারের আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম বুলেট জানিয়েছেন, ‘মো: ইউসুফের নিয়োগ সুপারিশ সিন্ডিকেট বাতিল করার বিষয়টি চ্যান্সেলরকে না জানিয়ে কৌশলে তৎকালীন ভিসি তাকে (ইউসুফকে) আইনি সুবিধা পেতে সহযোগিতা করেছেন। আবার রায়ের পর আপিল না করার বিষয়টিও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের পরিপন্থী। হাইকোর্টের নজরে সিন্ডিকেট সভায় মো: ইউসুফের নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্তের কপি এবং তার আবেদনেরই যোগ্যতা না থাকার ডকুমেন্টগুলো উপস্থাপন করা হলেই তার পক্ষে রায় যেতো না। তিনি প্রশ্ন রাখেন, যার আবেদনরই যোগ্যতা নাই। তিনি কিভাবে শিক্ষক হন। বিষয়টি পুকুর চুরি। শিক্ষা ব্যবস্থাকে এভাবে মেধাহীন ও ধংস করেছে বিগত সরকার।’

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ওই নিয়োগ বোর্ডের সদস্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মাহবুবার রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ট ছাত্র ছিলেন মো: ইউসুফ। প্রফেসর মাহবুবুর রহমানের ব্যাক্তিগত আর্কাইভসে নিয়মিত শ্রম দিতেন তিনি। এছাড়াও সেই সময়কার রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রধান ড. আবু মো: ইকবাল রুমি শাহ এর পিএইচডির সুপারভাইজার ছিলেন প্রফেসর মাহবুবুর রহমান। সেই সুবাধে তৎকালীন ভিসি প্রফেসর আব্দুল জলিল মিয়াকে ম্যানেজ করে দলীয় বিবেচনায় তাকে নিয়োগ বাছাই বোর্ড আবেদনের যোগ্যতা না থাকা সত্বেও প্রভাষক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করেছিলেন।

এদিকে ২০১৯ সালে যোগদানের পর থেকেই মো: ইউসুফ তৎকালীন ভিসি ড. কলিমউল্লাহর আনুকূল্যে দাপিয়ে বেড়াতে থাকেন ক্যাম্পাস। আস্থাভাজন আওয়ামী লীগের শিক্ষক হিসেবে হাতিয়ে নেন শহীদ মোখতার এলাহি হলের সহকারি প্রভোসট ও পরে সহকারি প্রক্টরের পদ। বাগিয়ে নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ। তার দাপটে কোনঠাসা হয়ে পড়েন অনেক আওয়ামীপন্থী সিনিয়র শিক্ষক। একই সাথে তিনি বাগিয়ে নেন তৎকালীন ভিসি ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ প্রতিষ্ঠিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ। এছাড়াও অধিষ্ঠিত হন রংপুর জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতি হিসেবে। ক্যাম্পাস ছাড়াও মো: ইউসুফ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন রংপুর জেলা ও মহানগরে আওয়ামী লীগপন্থী পেশাজীবী সংগঠনগুলোকে।


উত্থাপিত নিয়োগ জালিয়াতির অভিযোগ প্রসঙ্গে ইতিহাসের বিভাগের শিক্ষক মো: ইউসুফ জানান, ‘নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি শর্তাবলীর ‘ঘ’ তে বলা হয়েছে ‘কোনো পরীক্ষায় বি গ্রেড এর নিচে অথবা তৃতীয় বিভাগ/শ্রেণী গ্রহণযোগ্য হবে না। এই অনুযায়ী আমি আবেদনের যোগ্য। সেজন্যই আমাকে বাছাই বোর্ড সুপারিশ করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে শর্তাবলীর (গ) নং শর্তে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার যে কোনো একটিতে ন্যূনতম 'A' (৫.০০ পয়েন্ট ভিত্তিক গ্রেড সিস্টেমে সিজিপিএ/জিপিএ নূন্যতম ৪.০ থাকতে হবে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘এটা সার্ কুলারের দুর্বলতা। এর দায় আমার নয়।’

মো: ইউসুফ আরো বলেন, বাছাই বোর্ডের সুপারিশ সিদ্ধান্ত সিন্ডিকেট বাতিল করতে পারে না। সেকারণে আমি উচ্চ আদালতের স্মরণাপন্ন হই। আদালতের আদেশে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছি। আদালত পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত চ্যান্সেলরকে না জানানোর ‘ফাঁক’ ব্যবহার করে আপনি রিট করেছেন কিনা-এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কেন চ্যান্সেলরকে জানালো না সেটা তাদের দায়।

তিনি বলেন, ‘আমার নিয়োগের পর বিভাগের শিক্ষক গোলাম রব্বানী আমাকে জামায়াত-বিএনপি ট্যাগ দিয়ে জলিল স্যারের আমলে যোগদান করতে দেননি। এখন ২০২৪ সালে এসে তিনি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। আমি গত ৫ সেপ্টেম্বর তার বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইবুনালে মামলা করেছি। মামলায় একজন ছাত্রকে দিয়ে তিনি আমার বিরুদ্ধে ফেসবুকে বিভিন্ন আপত্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগ এনেছি। তার বিরুদ্ধে আমি মানহানির মামলা করবো।’

নীলদল, বঙ্গবন্ধু ক্লাব, বঙ্গবন্ধু পরিষদের বিভিন্ন পদে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এসব সঠিক নয়।’

এদিকে ইতিহাস বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক সাবেক প্রক্টর মো: গোলাম রব্বানী মো: ইউসুফের নিয়োগ জালিয়াতির বিষয়টি জানিয়ে চলতি মাসের ১৮ সেপ্টেম্বর রেজিস্টারের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।

তিনি জানান, ‘মো: ইউসুফের নিয়োগের বিষয়ে অনিয়ম, অবৈধ ও যোগসাজশে সংঘটিত হওয়া প্রক্রিয়াগুলো তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার জন্য আমি আবেদন করেছি। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর আইনের প্রথম সংবিধির ১১( ৮) ও (৯) ধারা লঙ্ঘন করে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করায় এবং বিজ্ঞাপিত পদে আবেদনের শর্তাবলি পূরণ না করা সত্ত্বেও মো: ইউসুফকে নিয়োগ দানের সুপারিশ করায় তার নিয়োগ বাতিলসহ পুরো নিয়োগ বোর্ড বাতিল করার দাবি করছি। যতদিন পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে না ততদিন পর্যন্ত তাকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক সকল কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখার জন্য দাবি করছি।

তার বিরুদ্ধে মো: ইউসুফের অভিযোগ প্রসঙ্গে মো: গোলাম রব্বানী বলেন, ‘একটি নজীরবিহীন অনিয়মের নিয়োগের বিষয়ে কথা বলায় তিনি আমার বিরুদ্ধে মানহানিকর মন্তব্য করছেন। আমার বিরেুদ্ধে সাইবার ট্রাইবুনালে যে মামলা তিনি করেছেন, তা হাস্যকর। সেখানে বলা হয়েছে আমি শিক্ষার্থীকে দিয়ে পোস্ট করিয়েছি। তার আরজিতেই স্পষ্ট যে আমি সেটি করিনি। তার অপতৎপরতার ও মানহানিকর বক্তব্যের বিষয়টি আমি আইনি লড়াই করবো।’

এ ব্যপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের নব নিযুক্ত ভিসি ড. শওকাত আলী জানান, বিষয়টি নিয়ে রেজিস্টারের সাথে আমি কথা বলবো। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটি করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
মতামত গ্রহণে ওয়েবসাইট চালু করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন কপ-২৯ সম্মেলনে ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র ও এলডিসি’র ‘ওয়াকআউট’ আলোচনায় 'না' ভোট এবং 'ভোট রিকল' হাসানের জোড়া উইকেটের পরও ৩০০ পার করলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ খাসিয়াদের বর্ষবিদায় উৎসব ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ অনুষ্ঠিত শিক্ষার্থীদের বিতর্কিত করে অভ্যুত্থান ব্যর্থ প্রমাণের অপচেষ্টা চলছে : উপদেষ্টা নাহিদ ফরিদপুর জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম তালুকদার গ্রেফতার ঢাকাবাসীকে যেকোনো উপায়ে নিরাপদ রাখতে হবে : ডিএমপি কমিশনার স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষকদের দাবির যৌক্তিকতা রয়েছে : ধর্ম উপদেষ্টা বাংলাদেশী অনুপ্রবেশের ইস্যু তুলেও ঝাড়খণ্ডে জিততে পারেনি বিজেপি ‘নতুন বাংলাদেশে কোনো চাঁদাবাজি চলবে না’

সকল