বাড়িতে আশ্রয় নেয়া তরুণকে বাঁচাতে এসিডে ঝলসে গেল ২ নারী
- সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর ব্যুরো
- ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৬:০০
রংপুরের পীরগঞ্জে ছিনিয়ে নেয়া মোবাইল ফোনের বিষয়ে আপস করা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেড়ে হামলাকারীদের ভয়ে আশ্রয় নেয়া এক তরুণকে রক্ষা করতে গিয়ে এসিডে ঝলসে গেছে দুই নারী। তাদের রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টার দিকে চতরা কলেজ পাড়ার সুজন শেখের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
দগ্ধরা হলেন সুজন শেখের স্ত্রী কহিনুর বেগম (৩০) এবং ভাড়াটিয়া মৌসুমি আখতার (২৩)।
প্রাথমিক তদন্ত উদ্ধৃত করে রংপুর জেলা সুপার মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন জানান, ওই বাড়িতে তার ভাতিজা নাজমুল এলে তার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে মোবাইল ফোন নিয়ে বিরোধী পক্ষ রায়হান ও তার সঙ্গীরা। এ সময় তারা ওই বাড়িতে গিয়ে নাজমুলের ওপর হামলা চালায়। এ সময় নাজমুলকে বাঁচাতে এগিয়ে যান কহিনুর ও মৌসুমি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের ওপর বোতল দিয়ে তরল তরল দাহ্য পদার্থ ছুড়ে মারে হামলাকারীরা। এতে গুরুতর দগ্ধ হন তারা। তাদেরকে প্রথমে পীরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’
পুলিশ সুপার আরো জানান, তারা এসিড নাকি অন্য কোনো দাহ্য পদার্থে দগ্ধ হয়েছে তা নির্ণয়ের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় অপরাধীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।
দগ্ধ কহিনুর বেগম বলেন, ‘নাজমুল সন্ধ্যায় আমাদের বাড়িতে আসে। আরেক ভাতিজা রায়হানের সাথে তার মোবাইল ফোন নিয়ে ঝামেলা ছিল। সেটা কয়েক দিন আগের ঘটনা। রায়হান এলে নাজমুল ছাদের ওপর যায়। রায়হান তা টের পেয়ে ফোন করে রবিউল, অক্ষয় খোরশেদসহ কয়েকজনকে ডেকে আনে। পরে আমি তাদেরকে চলে যেতে বললে তখন তারা নাজমুলকে ধরে মারপিট শুরু করে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এ সময় আমি নাজমুলকে বাঁচানোর জন্য ঝাপটে ধরলে মৌসুমিও এগিয়ে আসে। পরে বলেছি, তোমরা সবাই বাড়ির বাহিরে গিয়ে মারামারি করো। তখন আমাদের ওপর একটা বোতল ছুড়ে মারে। এতে গায়ে পড়া মাত্রই শরীর পুড়ে যেতে থাকে। আমার ডান পা, বাম হাত, গলা, পিঠ পুড়ে গেছে। আমার স্বামী পীরগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তারা ভর্তি নেয়নি। পরে রাত ১টায় রংপুর মেডিক্যালে ভর্তি হলে জানা যায়, বোতলে এসিড ছিল।’
অপর দগ্ধ মৌসুমি আখতার বলেন, ‘নাজমুল আমার দেবর হয়। সে আমাদের বাসায় ঢুকেছে এটা কোনোভাবে টের পেয়েছিল রায়হান। পরে তারা নাজমুলকে মারতে এলে আমরা রক্ষা করতে যাই। তখন আমাদের ওপর এসিড ছুড়ে মারে। এতে আমার ডান হাত পুড়ে গেছে।’
কহিনুর বেগমের স্বামী সুজন শেখ জানান, ‘রায়হান, রবিউল, খোরশেদ, অক্ষয় আমার বাড়িতে এসে এ ধরনের ঘটনা করবে তা আমি ভাবতে পারি না। ভাতিজা আমার বাড়িতে আসতেই পারে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। আমার স্ত্রীর সারা শরীর পুড়ে গেছে। এখন কী হবে জানি না।’
এ ঘটনায় নাজমুল ইসলাম জানান, ‘পাঁচ থেকে ছয় দিন আগে একটা ফোন ছিনিয়ে নিয়ে রায়হানের কাছে রাখা হয়। আমি রায়হানকে ফোনটা দেয়ার জন্য বলি কিন্তু সে দেয়নি। তখন যে ছিনতাই করে এনে রায়হানের কাছে রেখেছিল তাকে মারধর করি এবং ফোনটা রায়হানের কাছ থেকে নিয়ে মালিককে দেই। এতে রায়হান ও তার সাথের কয়েকজন আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়। কারণ তারা বিষয়টা আপস করার কথ বলে টাকা চাইত। আমার কারণে তারা সেটা করতে পারেনি। সে কারণে আমি যখন চাচার বাড়ি যাই। তখন রায়হান, রবিউল, খোরশেদ, অক্ষয়সহ কয়েকজন আমাকে নজরে রেখে চাচার বাড়িতে ঢোকে। অক্ষয় বলে গলা কেটে হত্যা করবে। পরে আমার চাচি ও ভাবি আমাকে তাদের হাত থেকে বাঁচাতে এলে তারা একটা বোতল ছুড়ে মারে। আমিও এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা