২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

তাকওয়া অর্জনের মাস রমজান

তাকওয়া অর্জনের মাস রমজান - ফাইল ছবি

রমজানুল মোবারকের আজ নবম দিবস। এ মাসে রোজা রাখার নির্দেশ দেয়ার উদ্দেশ্য হিসেবে কুরআন মজীদে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘যেন তোমরা মুত্তাকি হতে পারো।’ অর্থাৎ রমজানে সিয়াম পালনের মাধ্যমে মুমিন বান্দারা তাকওয়ার গুণ অর্জন করতে পারে। আর তাকওয়ার বদৌলতে মানুষ সবচেয়ে বেশি মর্যাদার অধিকারী হয় আল্লাহ রব্বুল আলামিনের কাছে।

সূরা হুজুরাতের ১৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, হে মানুষেরা, নিশ্চয়ই আমরা তোমাদের সৃষ্টি করেছি একজন নর ও একজন নারী থেকে এবং তোমাদেরকে জাতি ও গোষ্ঠীগুলোর বিভক্ত করেছি এ জন্য যে তোমরা পরস্পরে পরিচিত হবে। নিশ্চয়ই তোমাদের সবচেয়ে মুত্তাকিই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে সম্মানিত।

এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয়, আল্লাহর কাছে বান্দার মর্যাদার মাপকাঠি তার তাকওয়া। যার চরিত্রে তাকওয়ার মাত্রা যেমন, আল্লাহতায়ালার কাছে তার মর্যাদা তেমন। কুরআন মজীদের শুরুতে বলা হয়েছে, এই কিতাবে কোনো সন্দেহ নেই। (এই কিতাব) পথনির্দেশ মুত্তাকীদের জন্য, যারা অদৃশ্যে ঈমান রাখে, সালাত কায়েম করে ও আমি তাদেরকে যা দিয়েছি তা থেকে (আল্লাহর পথে ) ব্যয় করে। আর যারা ঈমান রাখে আপনার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে ও আপনার আগে যা নাযিল করা হয়েছে তার প্রতি। আর তারা আখেরাতে বিশ্বাস রাখে।

এখানে তাকওয়ার প্রযোজনীয়তার পাশাপাশি মুত্তাকিদের মৌলিক গুনাবলী উল্লেখ করা হয়েছে। অতএব একজন মুমিন বান্দার উচিত আল্লাহর নিকট মর্যাদা লাভের জন্য তাকওয়ার গুণ অর্জন ও তা উন্নত করার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। তাকওয়া শব্দের অর্থ সাবধানতা ও সংযম। মন্দ কাজ থেকে বেঁচে থাকাই তাকওয়ার অর্থ বলে বর্ণনা করা হয়। তবে মন্দ কাজ বর্জন যেমন জরুরি, তেমনি ভালো কাজগুলো করাও তাকওয়ার অন্তর্গত। কর্তব্য পালন ও বর্জনীয় পরিহারের সমষ্টিই তাকওয়া।

সাধারণভাবে তাকওয়া শব্দের অর্থ করা হয় আল্লাহর ভয়। মহান রাব্বুল আলামিনের সামনে একদিন সবাইকে হাজির হতে হবে। সে দিন দুনিয়াবি জীবনের প্রতিটি কথা, কাজ ও আচরণের হিসাব দিতে হবে। এই বিশ্বাস ও ভয়ই মানুষকে সাবধানী ও সংযমী করে তোলে। তাকওয়ার মর্ম বর্ণনায় হজরত উবাই ইবনে কা‘ব রাযিয়াল্লাহু আনহুর একটি উক্তি অত্যন্ত তাৎপর্যবহ। হজরত ওমর ফারুক রাযিয়াল্লাহু আনহু তাকে তাকওয়ার মর্ম বর্ণনার অনুরোধ করলে তিনি বলেন, আমিরুল মুমিনীন, আপনি কি কখনো কাঁটাঝোপের মধ্য দিয়ে পথ চলেছেন? সেখানে যেমন আপনাকে সবসময় সাবধানে নিজের শরীর ও কাপড় রক্ষা করে চলতে হয়, তাকওয়া ঠিক তেমনি সাবধানী আচরণ ও জীবন যাপনের নাম। বস্তুত আল্লাহর কাছে বান্দার জবাবদিহিতার অনুভূতিই তাকওয়া।

ইসলামি শরিয়তে বান্দার করণীয় ও বর্জনীয় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। তেমনি এসবের গুরুত্ব ও মাত্রার পর্যায়ক্রম নির্ণীত আছে। করণীয়গুলোকে আবশ্যকতার মাত্রার পর্যায়ভেদ অনুযায়ী ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও মুস্তাহাব পরিভাষায় প্রকাশ করা হয়। আর বর্জনীয়গুলোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় হারাম, মাকরুহ তাহরিমি, মাকরুহ তানজিহি ইত্যাদি পরিভাষা। কর্তব্য পালন ও বর্জনীয় পরিহারের মাত্রা অনুযায়ী তাকওয়ার স্তর বিন্যস্ত করা হয়। তাকওয়ার তিনটি স্তর- প্রাথমিক, মধ্যম ও উচ্চ। প্রত্যেক মুসলমানের জন্য যা অবশ্য পালনীয় অর্থাৎ ফরজ ও ওয়জিব, তা পালন করা এবং যা অবশ্য বর্জনীয় অর্থাৎ হারাম ও মাকরুহ তাহরিমি, তা বর্জন করা তাকওয়ার প্রাথমিক পর্যায়। তাকওয়ার ন্যূনতম পর্যায় হারাম ও মাকরুহ তাহরিমি বর্জন এবং ফরজ ও ওয়াজিব আদায় করা। কারো মধ্যে কমপক্ষে এতটুকু থাকলেও তিনি মুত্তাকি। বলা যায় একজন মুমিনের জন্য তাকওয়ার এই স্তরটি আবশ্যিক। নিম্নতম এই তাকওয়া নাজাতের জন্যও শর্ত।

ফরজ ও ওয়াজিবের পাশাপাশি সুন্নতগুলো পালন এবং হারাম ও মাকরুহ তাহরিমির পাশাপাশি মাকরুহ তানজিহ বর্জন তাকওয়ার মধ্যম স্তর। আর মুস্তাহাবগুলো পালনে এবং সন্দেহজনক কাজগুলো বর্জনে সচেষ্ট থাকা তাকওয়ার সর্বোচ্চ স্তর। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কোন ব্যক্তি দূষণীয় কাজে জড়িত হওয়ার আশঙ্কায় নির্দোষ কাজগুলো বর্জন না করা পর্যন্ত তাকওয়ার সর্বোচ্চ স্তরে উন্নীত হতে পারে না। অতএব শুধু নিষিদ্ধ উক্তি, আচরণ ও উপভোগ থেকে নিবৃত্ত থাকা নয়, সন্দেহজনক বিষয়গুলোও এড়িয়ে চলা একজন মুমিন বান্দার কর্তব্য। এভাবেই উন্নত হতে পারে তাকওয়ার স্তর। সুতরাং পবিত্র মাহে রমজানে সিয়াম আদায়ের পাশাপাশি তাকওয়ার স্তর উন্নত করতে সচেষ্ট থাকাও আমাদের প্রয়োজন।


আরো সংবাদ



premium cement