২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

অসহযোগ আন্দোলনে উত্তাল রাজশাহী

থানা, খাদ্যগুদাম, ভূমি অফিস ও আ’লীগ কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ
- ছবি : নয়া দিগন্ত

সরকার পতনের এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিন রোববার (৪ আগস্ট) উত্তাল হয়ে উঠে রাজশাহী। অসহযোগ আন্দোলন ঘিরে মাঠে দেখা গেছে দুটি পক্ষকে। একদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা। আরেক দিকে ছিল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলো।

আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে উপজেলা পর্যায়েও। দুপুরের দিকে রাজশাহী জেলার মোহনপুর থানা, সরকারি খাদ্যগুদাম, ভূমি অফিস ও আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এসময় থানা পুলিশের দুটি ও উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) একটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়েও ভাঙচুর চালানো হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আন্দোলনকারীরা সকালে মোহনপুর থানা থেকে আধা কিলোমিটার দূরে একদিলতলা হাটে অবস্থান করছিলেন। সেখানে পুলিশি বাধা অতিক্রম করে তারা উপজেলা সদরের দিকে চলে যান। এরপর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে কার্যালয়টির ভেতরের সবকিছুই পুড়ে যায়। এরপর থানার সামনের বিভিন্ন স্থাপনা ও গ্যারেজে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। এতে থানার দুটি গাড়ি আগুনে পুড়ে যায়। থানার পাশে থাকা মোহনপুর উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ের সামনে আগুন দেয়া হয়। এতে সেখানে থাকা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়িটি পুড়ে যায়। পরে উপজেলা খাদ্যগুদামে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন দেয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় ইউএনও কার্যালয়। এ ঘটনার পর উপজেলা সদর থেকে সরে আন্দোলনকারীরা কেশরহাট পৌর এলাকায় গিয়ে অবস্থান নেন। দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা উপজেলার কেশরহাট পৌরসভা এলাকাতেই অবস্থান করছিলেন। এ নিয়ে সেখানে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।

মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হরিদাস মণ্ডল গণমাধ্যমকে জানান, থানার সামনে বিভিন্ন স্থাপনা পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পুলিশের দুটি গাড়ি আগুনে পুড়েছে। তবে আগুন থানার ভেতরে যায়নি। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন তারা।

মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আয়শা সিদ্দিকা গণমাধ্যমকে জানান, মোহনপুর থানা, উপজেলার ভূমি অফিস, খাদ্যগুদাম ও আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ইউএনও কার্যালয়েও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তারা আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করছেন।

এরআগে সকাল ১০টা থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) সামনে অবস্থান নেন। সেখান থেকে তারা তালাইমারী হয়ে ভদ্রা মোড়ে যান। রুয়েট গেইট থেকে ভদ্রা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে সড়কে আগুন জ্বালিয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। এসময় তালাইমারী ও ভদ্রা এলাকায় পুলিশের লাগানো কয়েকটি সিসি ক্যামেরা ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।

আর রেলগেইট এলাকায় অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। রেলগেট এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। দুটি পক্ষের অবস্থান নিয়ে উত্তেজনা থাকলেও রেলগেট বা ভদ্রা এলাকার কোথাও পুলিশের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি।

জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপকমিশনার জামিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, সকাল থেকে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ করলেও পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে ছিল। সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা ঘিরে বাড়তি নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে। এসব এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কেউ জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতির চেষ্টা করলে তা প্রতিরোধ করবে পুলিশ।


আরো সংবাদ



premium cement