নওগাঁয় শিক্ষার্থীদের উপর আ.লীগ ও পুলিশের হামলা, সাংবাদিকসহ আহত ১৩
- এম এম হারুন আল রশীদ হীরা, নওগাঁ
- ০৩ আগস্ট ২০২৪, ১৯:১৮
নওগাঁয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করেছে আওয়ামী লীগ ও পুলিশ। এতে সাংবাদিক, পুলিশসহ অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন।
শনিবার (৩ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের সরিষাহাটির মোড় এলাকায় আওয়ামী লীগ পার্টি অফিসের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শহরের কাজির মোড় এলাকায় দুপুর ১২টার দিকে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে শহরের মুক্তির মোড়ের দিকে এগোতে থাকেন।
মিছিলটি মুক্তির মোড় হয়ে সরিষাহাটির মোড়ে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসের সামনে পৌঁছলে আগে থেকেই পার্টি অবস্থানরত ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়তে শুরু করেন। এরপর শিক্ষার্থীরাও ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে পাল্টা ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। একপর্যায়ে পুলিশ সেখানে বেপরোয়া টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে উভয়পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেন। এ ঘটনায় ইটের আঘাতে নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান, একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের নওগাঁ প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম শামীমসহ অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে, সঙ্ঘর্ষের পর শিক্ষার্থীরা আবার জমায়েত হয়ে মুক্তির মোড়ে অবস্থান নিয়ে সেখানে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা প্রধান সড়কের ওপর বসে পড়ে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে সড়ক অবরোধ করে রাখেন। পরে দুপুর দেড়টার দিকে পরবর্তী দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আজকের আন্দোলন শেষ করেন।
নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক লায়লা আক্তার বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়ে দুপুর ২টা পর্যন্ত ১৩ জন রোগী হাসপাতালে আসেন। এদের সবাই মাথায় ইটের আঘাত লেগে আহত হয়েছেন। এদের একজনের আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন।
এ বিষয়ে নওগাঁর পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক বলেন, মিছিলের শুরু থেকেই পুলিশ সহনশীল আচরণ করেছে। শিক্ষার্থীদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য তাদেরকে নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ। কিন্তু মিছিলটি আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসের কাছে পৌঁছালে পার্টি অফিস থেকে কিছু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতে কিছু দুষ্কৃতকারী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুঁড়ে। এ ঘটনায় চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল ছুঁড়ে উভয়পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেন। পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে হত্যা ও গণগ্রেফতারের প্রতিবাদে নওগাঁয় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল পুলিশি বাধা ও বৃষ্টি উপেক্ষা গণ মিছিল সফল করেন। আজ শনিবার বেলা ১০ দিকে শহরের কাজির মোড়ে থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
পরে বৃষ্টিতে ভিজে শিক্ষার্থীরা মুক্তির মোড়ে এসে জড়ো হয় এ সময় তাদের হাতে নানা স্লোগান–সংবলিত লেখা, ব্যানার, ফেস্টুন দেখা যায়। ঘন্টা খানেক সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, ছাত্র-জনতার গণহত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে, গণগ্রেফতার বন্ধ করতে হবে। সারা দেশে নিরীহ যেসব শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের মুক্তি দিতে হবে। একইসাথে ছাত্র সমাজের ৯ দফা দাবি সরকারকে দ্রুত মেনে নিয়ে সেনাবাহিনীর হাতে দেশ দিতে হবে।
এছাড়াও ছাত্রদের চলমান আন্দোলনে সারা দেশের শিক্ষক, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী, পেশাজীবী, শ্রমজীবী ও সব নাগরিককে কর্মসূচি পালনের জন্য রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান তারা।
তবে চলমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে সেনাবাহিনী ও বিজিবির টহলের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরা শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে টহল দিতে দেখা যায়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে মুক্তির মোড়ে ঢল নামে হাজারো শিক্ষার্থীর। সেখানে পুলিশ বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে পুলিশ আর তেমন বাঁধা না দিয়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে আসেন। কোটা আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীদের স্মরণে শিক্ষার্থীরা গণ মিছিল নিয়ে সরিষাহাটি মোড়ে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে গেলে অফিসের সামনে থেকে মিছিলে হামলা চালালে তখন পাল্টা জবাবে অফিসের জানালার কাচ ভেঙে যায়। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করতে লাঠি চার্জ করে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা