০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮ ভাদ্র ১৪৩১, ২৭ সফর ১৪৪৬
`

রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষ : আহত ১৩

- ছবি : নয়া দিগন্ত

কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজশাহীতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় অন্তত পাঁচটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। সংঘর্ষে আহত অবস্থায় পাঁচজনকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কমপ্লিট শাটডাউনের সমর্থনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েণ্টে অবস্থান নেন। এ সময় আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরাও একই স্থানে গিয়ে জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা কোনো ধরণের উসকানী ছাড়াই কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুপুরের দিকে রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ এলাকায় পুলিশের সাথে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। আর পুলিশ পাল্টা শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছুঁড়ে। এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পুলিশের একটি গাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ঘটনার সময় পুলিশের গাড়ি থেকে নেমে চালক প্রাণে রক্ষা পান। এ ঘটনায় তিন পুলিশসহ অন্তত আটজন আহত হন। আহতদের মধ্যে পাঁচজন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী। বর্তমানে রাজশাহীতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

রামেক হাসপাতাল পুলিশ বক্স সূত্র জানায়, সাহেববাজার জিরো পয়েণ্ট এলাকায় সংঘর্ষে আহত পাঁচজনের মধ্যে একজন নগরীর শাহমখদুম কলেজের ছাত্র। তার ঘাড়ে চাপাতির কোপ লেগেছে। নগরীর সাহেববাজার এলাকায় সংঘর্ষকালে আহত হন তিনি। এই এলাকায় বাজারের একজন ডাল ব্যবসায়ী আহত হন। ভুবনমোহন পার্ক এলাকায় শিক্ষার্থীদের সাথে সংঘর্ষে ছাত্রলীগের এক কর্মী আহত হন। রাণীবাজারে আহত হয়েছেন এক যুবলীগ কর্মী। এছাড়া মিয়াপাড়া এলাকায় সংঘর্ষ চলাকালে এক পথচারী আহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী- নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট এলাকায় অবস্থান নেন। এসময় আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরাও একই স্থানে গিয়ে জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা কোনো ধরণের উসকানী ছাড়াই কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেন। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। সংঘর্ষকালে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এতে সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট এলাকায় চরম উত্তেজনা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে আশপাশের সব ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের যানবাহন চলাচলও। পথচারী ও সাধারণ মানুষ প্রাণ ভয়ে দিকবিদিক ছুটোছুটি শুরু করেন। হামলাকারীদের হাতে দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও লাঠি দেখা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এসময় খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এরপর সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট এলাকা দখলে নেয় আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা।

এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আন্দোলনের নামে যদি আর কেউ অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালায় তাহলে এর জবাব দিতে আমরা প্রস্তুত আছি। তিনি আন্দোলনের নামে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানান। অন্যথায় এর দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির গণমাধ্যমকে জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় নিরাপত্তা আরো বাড়ানো হচ্ছে।

এদিকে, কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি চলাকালে রাজশাহীতে সীমিত পরিসরে যানবাহন চলাচল করে। এতে বিভিন্ন গন্তব্যে বের হওয়া মানুষকে বিপাকে পড়তে হয়। কোটা সংস্কারের দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজশাহী কলেজসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মাঠে ছিলেন। তবে বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি স্থানে পিকেটিং ছাড়া আর কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি।

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে বৃহস্পতিবার নির্ধারিত সময়েই পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভিন্ন রুটের ট্রেন নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে বলে দাবি করেছেন স্টেশন ব্যবস্থাপক আবদুল করিম।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জামিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, রাজশাহীতে কোটা আন্দোলনকারীদের কমপ্লিট শাটডাউনের কোনো প্রভাব পড়েনি। প্রধান প্রধান সড়ক, সরকারি অফিসসহ নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। মানুষের জানমালের কোনো ক্ষয়ক্ষতির চেষ্টা করা হলে পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে।


আরো সংবাদ



premium cement