বগুড়ায় রথযাত্রায় নিহত ৫ জনের পরিচয় মিলেছে, তদন্ত কমিটি গঠন
- বগুড়া অফিস
- ০৮ জুলাই ২০২৪, ১০:১০
বগুড়ায় সনাতন ধর্মালম্বীদের রথযাত্রায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নিহত পাঁচজনের পরিচয় পাওয়া গেছে।
তারা হলেন, বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার কুন্দুগ্রামের ভবানী মোহন্তের ছেলে নরেশ মোহন্ত, শহরের তিনমাথা রেলগেট এলাকার মন্তেস্বরের স্ত্রী আতশী, শাজাহানপুর উপজেলার গোহাইল গ্রামের সুদেবের স্ত্রী রনজিতা, শিবগঞ্জ উপজেলার কুলুপাড়া গ্রামের মৃত নারায়ণ কুমারের ছেলে অলক কুমার ও সারিয়াকান্দি উপজেলার সাহাপাড়ার বাসুদেব সাহার স্ত্রী জলি সাহা।
রোববার বিকেলের এই ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে।
তদন্ত কমিটিকে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। রোববার গভীর রাতে গঠিত অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট পিএম ইমরুল কায়েসের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটির সদস্য রয়েছেন পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি, বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিনিধি, সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি ও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি।
এই ঘটনায় ৫০ জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল ও ২৫০ শয্যা মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ৪৩ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বিদ্যুৎ স্পর্শে সৃষ্ট আগুনে অনেকের শরীর ঝলসে গেছে। আহতদের হাসপাতালে নেয়ার পর তাদের পরিবারের সদস্যসহ রথযাত্রায় অংশ নেয়া শত শত মানুষ শজিমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগ এবং ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) ভীড় করেন। বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতির কারণে চিকিৎসকদের হিমশিম খেতে হয়। ওই ঘটনার পর রথযাত্রা সংক্ষিপ্ত করা হয়।
দুর্ঘটনার পর পরই বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপু, বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো: সাইফুল ইসলাম, পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রর্বত্তী, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শুভাশীষ পোদ্দার লিটন শজিমেক হাসপাতালে যান।
জেলা প্রশাসক মো: সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, সৎকারের জন্য প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া আহতদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার রোববার বিকেল ৫টার দিকে বগুড়া শহরের সেউজগাড়ি ইসকন মন্দিরের কাছে সেউজগাড়ি পালপাড়া এলাকায় (সাতমাথা-তিনমাথা সড়ক) রথযাত্রার উদ্বোধন করেন। এরপর তারা চলে গেলে সনাতন ধর্মালম্বী হাজার হাজার নারী-পুরুষ রথটির দড়ি ধরে টেনে এগিয়ে যেতে থাকে। রথটি প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে শহরের লতিফপুর এলাকায় (পুলিশ লাইন্স সংলগ্ন) শিব মন্দিরে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে মাত্র পাঁচ শ’ গজ পূর্ব দিকে সেউজগাড়ি আমতলা মোড়ে পৌঁছার পর পরই রথের গাড়িতে সংযুক্ত উঁচু গম্বুজের ভেতরে থাকা লৌহ দণ্ডটি সড়কের ওপরের ১১ হাজার ভোল্টের তারের (তারটি সড়কের দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে টানা) সংস্পর্শে আসে। এতে মুহূর্তের মধ্যে আগুন ধরে যায় এবং ওই গাড়ি ধরে থাকা অর্ধ শতাধিক মানুষ সড়কের ওপর পড়ে যান। তাদের মধ্যে নারীদের সংখ্যাই বেশি। পুলিশের সহায়তায় সড়কের ওপর পড়ে থাকা আহতদের উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল এবং শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। পথের মধ্যে এবং হাসপাতলে নেয়ার পর তিন নারী ও দুই পুরুষের মৃত্যু হয়।
বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, ওই হাসপাতালে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। সেখানে বর্তমানে ৩৮ জন চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে দু’জন আইসিইউতে রয়েছেন।
বগুড়া সদর থানার ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ জানান, ২৫০ শয্যার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে একজন মারা গেছেন এবং সেখানে আরো তিনজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ বগুড়া পৌর কমিটির পরিমল প্রসাদ রাজ জানান, রথযাত্রার শুরুতে দুঃখজনখ হতাহতের ঘটনা ঘটার পর রথযাত্রাটি কিছু সময় থামিয়ে রাখা হয়েছিল। তবে পরে সেটি শুরু করা হয় এবং সংক্ষিপ্তভাবে শেষ করা হয়।
রথ যাত্রায় অংশ নেয়া সাংবাদিক অরূপ রতন শীল জানান, রথের গাড়িটি যারা টানছিলেন তাদের বার বার সড়কের ওপরে থাকা হাইভোল্টেজের তারের বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। সড়কের ওপরে আড়াআড়ি ভাবে টানা তারের নিচ দিয়ে রথের গাড়িটি সাবধানে পার করার জন্য ইসকন বগুড়ার সভাপতি খরজিতা কৃষ্ণ দাস বার বার মাইকে সতর্ক করছিলেন। কিন্তু হাজার হাজান মানুষের উপস্থিতিতে তার সতর্কবাণী কেউ শোনেনি।
নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) নির্বাহী প্রকৌশলী বিক্রয় ও বিতরন বিভাগ ১ এর আব্দুল মান্নাফ জানান, বিকেল সোয়া ৫টার দিকে রথের গাড়িতে বিদ্যুৎ স্পর্শের ঘটনার খবর পাওয়ার পর পরই স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশে ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়।
সড়কের ওপর সরবরাহ লাইনের তার ন্যাকেড রাখার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘১১ হাজার ভোল্টের তারগুলো এভাবেই রাখা হয়। শুধু বগুড়ায় নয় বরং সারাদেশেই এভাবে রয়েছে।’
দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদ্যুত সরবরাহ লাইনের যে তার সড়কের ওপর দিয়ে পারাপার করা হয়েছে সেগুলোর উচ্চতা ছিল ১০ মিটার। ধারণা করা হচ্ছে, রথের গাড়িতে এমন কোনো উঁচু দণ্ড যুক্ত করা হয়েছিল যেটি বিদ্যুৎ পরিবাহী। আর সে কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা