২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
জেল থেকে ৪ কয়েদী পালানোর ঘটনার তদন্ত শুরু

বগুড়ায় ডেপুটি জেলারসহ আরো ২ জন সাসপেন্ড, ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

বগুড়ায় ডেপুটি জেলারসহ আরো ২ জন সাসপেন্ড : ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা - ছবি : সংগৃহীত

বগুড়া জেলা কারাগারের ছাদ ফুটো করে কনডেম সেল থেকে চার আসামি পালানোর ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছেন কারা অধিদফতর ও জেলা শাসনের কর্তা ব্যক্তিরা। ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে কর্মকর্তারা দেখছেন জেলার ও জেল সুপারের দায়িত্ব অবহেলা। তাই তদন্তের শুরুতেই দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ একজন ডেপুটি জেলারসহ আরো দু’জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এ নিয়ে এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে সাময়িক বরখাস্ত, তিনজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা ও দু’জনকে কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।

দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ডেপুটি জেলার হোসেনুজ্জামান ও প্রধান কারারক্ষীসহ মোট পাঁচজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া অপর দুই-তিনজন কারারক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে।

জেল সুপার আনোয়ার হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বৃহস্পতিবার থেকেই তদন্ত শুরু করেছে জেলা প্রশাসন ও কারা অধিদফতর গঠিত তদন্ত কমিটি। কারা অধিদফতরের কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল শেখ সুজাউর রহমান বগুড়া কারাগার চত্বর পরিদর্শন করে তদন্ত কাজ শুরু করেন। শুরুতেই প্রাথমিকভাবে দায়িত্ব অবহেলায় কারণে এই আটজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়।

সাময়িক বরখাস্তকৃতদের মধ্যে ডেপুটি জেলার ছাড়াও সর্বপ্রধান কারারক্ষি ফরিদ উদ্দিন, প্রধান দুই কারারক্ষী দুলাল মিয়া ও আব্দুল মতিন এবং কারারক্ষী আরিফুল ইসলাম রয়েছেন। এছাড়া বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে প্রধান কারারক্ষী আমিনুল ইসলাম, সহকারী প্রধান কারারক্ষী সাইদুর রহমান ও কারারক্ষী রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় বগুড়া কারাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। এ কারণে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি, জঙ্গি মামলায় অভিযুক্ত জেএমবির আসামিদের অন্য কারাগারে সরিয়ে নেয়া হয়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজশাহী বিভাগীয় কারাগারসহ পাশের জেলার বিভিন্ন কারাগারে আসামি সরানোর কাজ চলে।

বগুড়া কারাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার ফাঁক-ফোঁকর গলিয়ে এবং জেল সুপার ও জেলারের দায়িত্ব অবহেলার কারণে কারাগারের ‘কনডেম’ সেলের ছাদ কেটে পালিয়ে যায় চার দুর্ধর্ষ ফাঁসির আসামি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনোভাবেই এর দায় এড়াতে পারেন না জেল সুপার ও জেলার। এই ঘটনা নজীরবিহীন। তাই দায়িত্ব অবহেলার কারণে আট জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে সাবেক আইজি (প্রিজন) লিয়াকত আলী খান সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার দুর্ধর্ষ আসামির পালিয়ে যাওয়ার জন্য সম্পূর্ণ দায়ভার জেলার ও জেল সুপারের। এটা তাদের চরম ব্যর্থতা। কারাবিধি অনুসরণ করে বন্দি পরিচালনা করা হলে ওই আসামিরা পালিয়ে যেতে পারতো না।’

তিনি বলেন, ‘একজন কারারক্ষী সার্বক্ষণিক কনডেম সেল নজরদারি করবেন। তার আর কোনো দায়িত্ব নাই। কনডেম সেলের আসামিকে নজরদারি করাই তার দায়িত্ব। কিন্তু কারারক্ষী তার দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করেননি। সেইসাথে কারাবিধি অনুযায়ী কনডেম সেলগুলোতে সন্ধ্যার আগে আসামি লক আপে উঠবে। এ সময় জেলার নিজে প্রতিদিন সেলগুলোতে এসে আসামির খোঁজ নিবেন আসামির হিসাব ঠিক আছে কিনা। এটা জেলারের দায়িত্ব। কিন্তু জেলার তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি। এ ছাড়া জেল কোড অনুযায়ী জেল সুপারের বিষয়টি সুপারভাইস করার করার কথা। কিন্তু তিনিও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেননি। যদি জেল কোড অনুযায়ী কারারক্ষী, জেলার ও জেল সুপার দায়িত্ব পালন করতেন, তাহলে ওই আসামিরা পালিয়ে যেতে পারতো না। তাদের ব্যর্থতার কারণেই আসামি পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি কনডেম সেলে কারাবিধি অনুযায়ী বেজোড় সংখ্যার যেমন ১ বা ৩ জন আসামি থাকার কথা। কিন্তু সেখানে চারজন আসামি একত্রে থাকল কিভাবে। এই চারজনের মধ্যে আবার একই হত্যা মামলার দু’জন আসামি ছিল। এই সুযোগে তারা ওই কনডেম সেলে একত্রিত হয়ে পালানোর পরিকল্পনা করে। এই পরিকল্পনায় তারা সফল হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, বগুড়া কারাগার স্থাপিত হয়েছে ১৮৩৩ সালে ব্রিটিশ শাসন আমলে। কারাভবন ও কনডেম সেলগুলো সেই আমলের। তখন ভবন নির্মাণে লোহার রড ব্যবহার করা হতো না। ছাদ নির্মাণে চুন ও সুড়কি ব্যবহার করা হতো। বগুড়া কারাগারের চারটি কনডেম সেলের ছাদ চুন ও সুড়কির তৈরি। ১৯১ বছর পুরোনো সেই কনডেম সেলগুলোর কার্যক্ষমতা কমে গেছে। তাই আসামিরা ছাদগুলো সুরঙ্গ করে কেটে ফেলতে পেরেছে। তবে প্রশ্ন হলো, এই ছাদ কাটতে যন্ত্রপাতি কীভাবে পেল? কে দিল ছাদ কাটার যন্ত্রপাতি? এই রহস্য দানা বাঁধছে। যদিও পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার ফাঁসির আসামিদের কাছ থেকে একটি ৪ দশমিক ৩ ইঞ্চি লম্বা স্টিলের পাত, একটি প্যাঁচানো প্লাস্টিকের রশি, একটি সাত ইঞ্চি লম্বা স্ক্রু ডাইভার জব্দ করা হয়েছে। এই স্টিলের পাত ও স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে কৌশলে একমাস ধরে একটু একটু করে ছাদ কেটে সুড়ঙ্গ তৈরি করে পালিয়ে যায়। তবে এসব দিয়ে সেলের ছাদ কেটে পালানো সম্ভব কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এদিকে বগুড়া কারাগারে হাজতি ও কয়েদিসহ রয়েছে তিনগুণ বন্দী। কারাগারের ধারণ ক্ষমতা মাত্র ৭০০ জন। আর গতকাল পর্যন্ত বন্দি ছিল দুই হাজার ২০০ জন। হাজতি ও কয়েদিদের গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। তবে কারাগার থেকে আর কোনো আসামি যাতে পালাতে না পারে সেজন্য নিরাপত্তা বাড়ানোসহ সার্বিক বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অপরদিকে বগুড়া কারাগার থেকে চার ফাঁসির আসামির পলায়ন ও গ্রেফতারের পর বগুড়া কারাগারের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
কারা সূত্র জানায়, বগুড়া কারাগারের চারটি সেন্ট্রিপোস্ট বাড়ানো হয়েছে। জনবল বাড়নো হয়েছে ২৮ জন। একইসাথে কারাগারের দেয়ালের বাইরে ২৪ ঘণ্টা ১২ জন কারারক্ষী দায়ত্ব পালন করছেন।

এর আগে মঙ্গলবার (২৬ জুন) দিবাগত রাত ৩টার দিকে সেলের ছাদ ফুটো করে বিভিন্ন চাদরকে রশি হিসেবে ব্যবহার করে ফাঁসির চার আসামি পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ রাতে ৪টা ১০ মিনিটের দিকে কিছুটা দুরে চেলোপাড়া চাষীবাজার এলাকা থেকে তাদের গ্রেফিতার করে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার কয়েদি হলেন কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দিয়াডাঙ্গা এলাকার নজরুল ইসলাম ওরফে মজনু , নরসিংদীর মাধবদী উপজেলার ফজরকান্দি এলাকার আমির হোসেন, বগুড়ার কাহালু পৌরসভার মেয়র আবদুল মান্নানের ছেলে মো: জাকারিয়া এবং বগুড়া সদরের কুটুরবাড়ি পশ্চিমপাড়া এলাকার ফরিদ শেখ।

এ ঘটনায় বুধবার (২৬ জুন) বগুড়া জেলা প্রশাসকের গঠিত ছয় সদস্যের এবং অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক শেখ সুজাউর রহমান সুজার নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। একইসাথে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় জেলার ফরিদুল ইসলাম রুবেল বুধবার ওই চার কয়েদির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদের আদালতে পাঠানো হয়। আদলত তাদের কারাগারে পাঠায়।

এদের মধ্যে কুড়িগ্রামের নজরুল ইসলাম মঞ্জুর ও নরসিংদীর আমির হামজা ফোর মার্ডার মামলার ফাঁসির আসামি। এ ছাড়া বগুড়ার কাহালু উপজেলার জাকারিয়া ২০১২ সালে কাহালু উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র নাইমুর ইসলাম নাইমের হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামি।


আরো সংবাদ



premium cement
ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ২৪ ঘণ্টায়ও মহাসড়ক ছাড়েনি ডিইপিজেডের লেনী ফ্যাশনের শ্রমিকরা বুধবার সকালে ঢাকার বাতাসের মান ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ চীন সীমান্তের কাছে গুরুত্বপূর্ণ শহরের দখল নিল মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা সুদানে গৃহযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা আগের হিসাবকে বহুগুনে ছাড়িয়ে গেছে, বলছে গবেষণা চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা : যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক ২০ শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ‘গণহত্যার’ অভিযোগ নিহত আইনজীবীকে নিয়ে অপপ্রচার করছে ভারতীয় গণমাধ্যম : প্রেস উইং হিজবুল্লাহ-ইসরাইল অস্ত্র-বিরতি চুক্তি জয় দিয়ে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ শুরু করতে চায় টাইগ্রেসরা সহজ জয়ে সিরিজে সমতা পাকিস্তানের

সকল