২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

লোকসানের বোঝা মাথাই নিয়েই‘ম্যাংগো স্পেশাল’ ট্রেনের যাত্রা

লোকসানের বোঝা মাথাই নিয়েই‘ম্যাংগো স্পেশাল’ ট্রেনের যাত্রা - ফাইল ছবি

আম পরিবহনের জন্য পঞ্চমবারের মতো চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী হয়ে ঢাকা রুটে চালু চালু হলো ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন। গেল কয়েক বছরের লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়েই সোমবার (১০ জুন) বিকেল ৪টায় চাঁপাইনাবগঞ্জের রহনপুর স্টেশন থেকে ১ হাজার ২০ কেজি আম নিয়ে ট্রেনটি যাত্রা করে ট্রেনটি। পরে সন্ধ্যা ৬টায় চাঁপাইনবাগঞ্জ স্টেশনে ৭৮৫ কেজি আম তুলে আনুষ্ঠানিকভাবে এটির উদ্বোধন করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের এমপি মো: আব্দুল ওদুদ।

ট্রেনটি পদ্মা সেতু হয়ে রাজধানী ঢাকায় পৌঁছাবে সোমবার (১০ জুন) দিবাগত রাত সোয়া ২টায়।

এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক আহম্মেদ হোসেন মাসুদ। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. তাছমিনা খাতুন, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী আসাদুল হক ও বিভাগীয় (পাকশী) ব্যবস্থাপক শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ।

এদিকে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, ট্রেনটি গত চার বছরে আয়ের চেয়ে ব্যয় করেছে দ্বিগুণেরও বেশি।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত চার মৌসুমে লোকসানের পরিমাণ প্রায় দুই কোটি টাকা।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, নিরাপদে স্বল্প সময় ও খরচে আম পরিবহনের লক্ষ্যে লোকসান মাথায় নিয়েই এই ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’ চালু হলো। ট্রেনটিতে ছয়টি লাগেজ ভ্যানের মাধ্যমে আম পরিবহন করা যাবে ২৮ দশমিক ৮৩ টন। যাত্রা পথে রহনপুর স্টেশন থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, আব্দুলপুর, ঈশ্বরদী, পোড়াদহ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও ভাঙ্গাসহ মোট ১৫টি স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেবে ট্রেনটি।

সূত্রটি আরো জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন হয়ে ঢাকা পর্যন্ত প্রতি কেজি আম পরিবহনে ভাড়া লাগবে ১ টাকা ৪৭ পয়সা, রাজশাহী থেকে ১ টাকা ৪৩, পোড়াদহ থেকে ১ টাকা ১৯, রাজবাড়ি থেকে ১ টাকা ৭, ফরিদপুর থেকে ১ টাকা ১ এবং ভাঙ্গা থেকে ৯৮ পয়সা।

ব্যবসায়ীরা স্বল্প সময় ও স্বল্প খরচে নিরাপদে আম পরিবহন করলেও লোকসান গুনছে রেলওয়ে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সাল থেকে চালু হওয়া এ স্পেশাল ট্রেন প্রতি বছরই লোকসান গুনছে। ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত চার বছরে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে ৩ হাজার ৯৯৫ টন আম পরিবহন করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০২০ সালে ৪৭ দিনে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে আম পরিবহন হয়েছে ১১ লাখ ৯৯ হাজার ৫৯ কেজি। এতে আয় হয়েছে ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫৩৬ টাকা। আর ব্যয় হয়েছে ৫৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ২০২১ সালে ৪৯ দিনে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে আম পরিবহন হয়েছে ২২ লাখ ৯৯ হাজার ৯২০ কেজি। এতে আয় হয়েছে ২৬ লাখ ৩০ হাজার ৯২৮ টাকা, আর ব্যয় হয়েছে ৫৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ২০২২ সালে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন আম পরিবহন করেছে ৭ দিন। এ সময় ১ লাখ ৭৮ হাজার ৭৭৮ কেজি আম পরিবহনে আয় হয়েছে ২ লাখ ১২ হাজার ১৭৪ টাকা আর ব্যয় হয়েছে ১২ লাখ ৪০ টাকা। সবশেষ গত ২০২৩ সালে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে আম পরিবহন হয়েছে ১৮ দিন। এ সময় ১২ লাখ ৭ হাজার কেজি আম পরিবহনে আয় হয়েছে ৪ লাখ ৪৮ হাজার ৫০২ টাকা। আর ব্যয় হয়েছে ১৯ লাখ ৬২ হাজার টাকা।

চার বছরে রেল আয় করেছে ৪৬ লাখ ২৯ হাজার ১৪০ টাকা। এসময়ে রেল পরিচালনা করতে ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৪৭ লাখ ২২ হাজার টাকা। ফলে আম পরিবহন করে রেল লোকসান গুনেছে ১ কোটি ৯২ হাজার ৮৬০ টাকা। তবে এত পরিমাণ আর্থিক লোকসান সত্ত্বেও সোমবার (১০ জুন) থেকে এই স্পেশাল ট্রেন আবারো যাত্রা শুরু করল।

তবে এ ব্যাপারে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার গণমাধ্যমকে জানান, লোকসান সত্বেও স্থানীয় আমচাষি, ব্যবসায়ী ও খামারিদের সুবিধার্থে ট্রেনটি চালু করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement