‘তুমি অলওয়েজ বায়াস্ট হয়ে পয়সা খেয়ে প্রশ্ন করো, দিস ইজ ভেরি ব্যাড’
- রাজশাহী ব্যুরো
- ৩০ মে ২০২৪, ২১:৫৯
একজন সাংবাদিকের প্রশ্নে ক্ষুব্ধ হয়ে বেফাঁস মন্তব্য করেছেন রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। পরে দ্রুত সেখান থেকে চলে যান তিনি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনের প্রধান ফটকের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
এ সময় একজন সাংবাদিককে উদ্দেশ্য করে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী বলেছেন, ‘শোনো, তোমার প্রবলেম হলো, তুমি অলওয়েজ বায়াস্ট হয়ে পয়সা খেয়ে প্রশ্ন করো। দিস ইজ ভেরি ব্যাড।’
সূত্রে জানা গেছে, গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল আজ বৃহস্পতিবার শপথ নেয়ার পর প্রথম তার কার্যালয়ে যান। তিনি এমপি ওমর ফারুককে অনেকটা চ্যালেঞ্জ করেই এ নির্বাচনে বড় ব্যবধানে নির্বাচিত হন। আর এমপি ওমর ফারুক সমর্থিত প্রার্থী সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম পরাজিত হন।
সূত্রে আরো জানা গেছে, সকালে সাংবাদিকেরা জানতে পারেন, বেলাল উদ্দিন সোহেলের প্রথম কর্মদিবসেই উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীও উপস্থিত থাকবেন। সেখানে বেলালকে অফিসে বসতে বাধা দেয়ার পাশাপাশি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে এমন খবরের ভিত্তিতে সাংবাদিকেরা উপজেলা পরিষদ চত্বরে অবস্থান নেন। উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রথম কর্মদিবস বলে তার কয়েক শ’ নেতাকর্মী সেখানে জড়ো হয়েছিলেন। দুপুর ১২টার দিকে দেখা যায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুল ইসলাম পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সহায়তায় উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে বেলালের কর্মী-সমর্থকদের বের করে দিচ্ছেন। ইউএনও নিজেই হ্যান্ডমাইকে নেতাকর্মীদের চলে যেতে বলছিলেন। কিছুক্ষণ পর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কয়েকজন চেয়ারম্যান ও ৩০ থেকে ৪০ জন নেতাকর্মীকে সাথে নিয়ে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনের সামনে আসেন এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। এরপর তিনি ‘এদিকে আসো, এদিকে আসো। সাংবাদিক সাহেবরা এদিকে আসো’ বলে সাংবাদিকদের ডাকতে থাকেন।
এমপি ওমর ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ সমন্বয় মিটিং। এই মিটিংয়ে এই লোকগুলো কারা? এই অবৈধ সমাবেশটা কিসের? আমি ইউএনও সাহেবের কাছে প্রশ্ন করলাম। তাকে আমি দু’বার রিং করেছি যে, এই সমাবেশ হটাও। আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এই সমাবেশ করা হয়েছে এবং এতে ইউএনও সাহেব ইনভলব কি-না আই ডোন্ট নো। বাট তাকে আমি দু’বার রিকোয়েস্ট করেছি এ গুলোকে হটানোর জন্য।’
সাধারণ জনগণ একজন জনপ্রতিনিধির সাথে প্রথম দিন আসতে পারে কি-না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘না। আজকে এখানে মিটিং আছে। জনপ্রতিনিধির সাথে আসতে পারে না। মিটিংয়ের দিনে পারে না। এ সময় কালের কণ্ঠের রাজশাহী ব্যুরো প্রধান রফিকুল ইসলাম এমপি ওমর ফারুককে প্রশ্ন করেন, আপনার সাথেও অনেক লোক আছে, তারা কেন এসেছেন? তার এ প্রশ্ন শুনেই ক্ষুব্ধ হন এমপি ওমর ফারুক।
এ সময় সাংবাদিক রফিকুলকে উদ্দেশ্য করে এমপি ওমর ফারুক বলেন, ‘এরা চেয়ারম্যান। শোনো, তোমার প্রবলেম হলো, তুমি অলওয়েজ বায়াস্ট হয়ে পয়সা খেয়ে প্রশ্ন করো। দিস ইজ ভেরি ব্যাড।’
সাংবাদিকেরা এ সময় বলতে থাকেন, ‘আপনার কথাটা ঠিক নয়। এমন কথা বলার জন্য আপনাকে ক্ষমা চাইতে হবে।’
এ সময় অপর একজন সাংবাদিককে উদ্দেশ্য করে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘আমি তোমাকে এ কথা বলি নাই। যে আমাকে প্রশ্ন করেছে, আমি তাকে বলেছি।’
পরে সাংবাদিকদের তোপের মুখে দ্রুত সেখান থেকে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনের ভেতরে চলে যান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী।
উপজেলা চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল গণমাধ্যমকে জানান, ‘নতুন একজন জনপ্রতিনিধি দায়িত্ব নিতে গেলে তার সাথে সমর্থকরা প্রথম দিন আসতেই পারেন। তাই মানুষ ভালোবেসে আমার সাথে এসেছিল। কেউ এমপিকে হত্যার উদ্দেশ্যে আসেননি। এ ধরনের চিন্তা কেউ করতে পারে না।’
এমপি ফারুক চৌধুরী তাকে ‘হত্যার উদ্দেশ্যে সমাবেশ’ করার সাথে ইউএনওয়ের সম্পৃক্ততা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। সে বিষয়ে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে চাননি ইউএনও আতিকুল ইসলাম।