জামিন পেলেন রুয়েটের সাবেক ভিসি-রেজিস্ট্রার
- রাজশাহী ব্যুরো
- ২৮ মে ২০২৪, ২০:২১
নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় জামিন পেয়েছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) সাবেক ভিসি অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম সেখ এবং সাবেক রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সেলিম হোসেন।
মঙ্গলবার দুপুরের দিকে রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে তাদের পক্ষে আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। পরে শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন দেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলাটি দায়ের করে।
সূত্র জানায়, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী একরামুল হক, ইব্রাহিম হোসেন ও হাবিবুর রহমান দুই আসামির পক্ষে আদালতে নথিপত্র উপস্থাপন করে তাদের জামিনের আবেদন করেন। এ সময় তাদের জামিনের বিরোধিতা করেন দুদকের রাজশাহীর আইনজীবী শহীদুল হক খোকন। পরে শুনানি শেষে আদালতের বিচারক আল-আসাদ মো: আসিফুজ্জামান মামলার তদন্ত প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত আসামিদের জামিন মঞ্জুর করেন।
এর আগে, বেলা ১১টায় আদালতে মামলার কার্যক্রম শুরু হলে সাবেক ভিসি রফিকুল ইসলাম সেখ ও সাবেক রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সেলিম হোসেন আসামির কাঠগড়ায় গিয়ে দাঁড়ান। বেলা সাড়ে ১১টায় শুনানি শেষ হয়। পুরো সময় তারা আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। আদালতের কাঠগড়ায় ওঠার আগে সাবেক ভিসি রফিকুল ইসলাম সেখ মুখে মাস্ক পরে নেন।
শুনানিকালে আসামি পক্ষের আইনজীবী একরামুল হক আদালতকে বলেন, ‘রুয়েটের নিয়মকানুন মেনেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
বিজ্ঞাপিত পদের চেয়ে অতিরিক্ত লোকবল নিয়োগের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) যতগুলো পদে নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছিল, তার চেয়ে কমসংখ্যক পদেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আর বিজ্ঞাপনে উল্লেখ ছিল প্রয়োজনে পদের সংখ্যা বাড়তে কিংবা কমতে পারে। তাই এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি। আর নিয়োগ কমিটি শুধু সুপারিশ করেছিল। নিয়োগ অনুমোদন দিয়েছিল সিন্ডিকেট সভা।
আরো বেশ কিছু ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন।
তবে, এর বিরোধিতা করে দুদকের আইনজীবী শহীদুল হক খোকন আদালতকে বলেন, ‘অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম সেখ ভিসি থাকাকালে নিজের আত্মীয়-স্বজনকে চাকরি দিয়েছেন স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে। এজন্য বিজ্ঞাপিত পদের চেয়ে আসামিরা অতিরিক্ত লোকবল নিয়োগ দিয়েছেন। স্বজনপ্রীতি করে আসামিরা ঘৃণিত অপরাধ করেছেন। তাই তিনি জামিনের বিরোধিতা করেন। পরে শুনানি শেষে আদালত আসামিদের জামিন মঞ্জুর করেন।
দুদকের আইনজীবী শহীদুল হক খোকন বলেন, ‘দুদক মামলা করার পর দুই আসামি উচ্চ আদালতে গিয়ে ৫৬ দিনের জামিন নেন। সেই জামিন শেষে তারা ধার্য তারিখে নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। তারা যেহেতু উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ছিলেন, তাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেছেন।
উল্লেখ্য, রফিকুল ইসলাম সেখ রুয়েটের ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের অধ্যাপক। একই বিভাগের অধ্যাপক সেলিম হোসেন। দুজনেরই বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলায়। তারা ভিসি ও রেজিস্ট্রারের দায়িত্বে থাকাকালে ২০২১ সালে তাদের বিরুদ্ধে নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি তদন্ত করে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইউজিসি ও মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন সাপেক্ষে দুদক ২০২৩ সালের ২৮ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধান শেষে তাদের বিরুদ্ধে গত ২৭ মার্চ মামলা করে দুদক।
অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে একে অন্যকে লাভবান করার জন্য অপরাধমূলক, অসদাচরণ ও বিশ্বাসভঙ্গ করে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। লিখিত পরীক্ষায় কম নম্বর পাওয়া প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় অধিক নম্বর দিয়ে নিয়োগ দান করেছেন। তারা ছয়জন সেকশন অফিসারের পদের বিপরীতে নিয়োগ দিয়েছেন ১৩ জনকে। জুনিয়র সেকশন অফিসার পদের অনুমোদন ও শূন্য পদ না থাকা সত্ত্বেও এই পদে নিয়োগ দিয়েছেন। পিএসটু ভিসি ও পরিচালক পদে দুজনকে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তিনজনকে নিয়োগ দেন।
এ দিকে, আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে ডেটা অ্যান্ট্রি অপারেটর বিজ্ঞপ্তিতে এক পদের বিপরীতে দু’জনকে নিয়োগ দান, মালির তিনটি পদের বিপরীতে সাতজনকে নিয়োগ প্রদান, গাড়িচালকের একটি পদের বিপরীতে তিনজন, কুকের পদের বিপরীতে পাঁচজনকে নিয়োগ দিয়েছেন।
দুদকের অভিযোগে আরো বলা হয়, আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে এসব অপরাধমূলক কাজ করেছেন। ফলে আসামিরা ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত অতিরিক্ত নিয়োগপ্রাপ্তদের বেতন ভাতা ও সহায়ক সুবিধাদি বাবদ এক কোটি ২৬ লাখ ১২ হাজার ১০৯ টাকার আর্থিক ক্ষতি করেছেন। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে দুদক।