মহাদেবপুরে গলা ও পায়ের রগ-কাটা মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে উদ্ধার
- এম এম হারুন আল রশীদ হীরা, মান্দা ( নওগাঁ)
- ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৭:১৪, আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১১:২৪
নিজ বাড়ির টিনের চালার উপরে ওঠে ধারালো হাসুয়া দিয়ে নিজের হাত, পায়ের রগ, গোপনাঙ্গ ও গলা কাটার সময় গুরুতর জখম ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার চেরাগপুর ইউনিয়নের মাইবা দিঘী (পাহান পাড়া) গ্রামে।
স্থানীয়রা জানায়, মাইবা পাহান পাড়া গ্রামের মৃত অজিত পাহানের ছেলে বিষু পাহান (৩৫) হঠাৎ করে বুধবার ভোররাতে পরিবারের লোকজনের অজান্তে হাতে একটি ধারালো হাসুয়া নিয়ে নিজ বাড়ির টিনের চালার উপর ওঠে বসে পড়েন। একপর্যায়ে বিষু পাহানের স্ত্রী জোসনা পাহান স্বামীকে ঘরে দেখতে না পেয়ে ঘর থেকে বের হন। এসময় টিনের চালার ওপর থেকে তার স্বামী স্ত্রীর উদ্দেশ করে বলেন, আমি এখানেই আছি, কেউ আমাকে নামানোর চেষ্টা করলে আমি তাদের শেষ করে দেব। ঘটনাটি প্রতিবেশীদের
জানালে প্রতিবেশী ও স্বজনরা বাড়ির নিচে অবস্থান নিয়ে বিষু পাহানকে পাহারায় রাখেন এবং সকালে ঘটনাটি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে জানান।
ঘটনার খবর পেয়ে মহাদেবপুর থানাধীন নওহাটামোড় পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই জিয়াউর রহমান জিয়া ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে পৌছান। এরপর নওগাঁ থেকে ফায়ার সার্ভিসের দুটি গাড়িসহ ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তাসহ কর্মীরাও ঘটনাস্থলে পৌছায়।
এসময় টিনের চালার উপর থাকা বিষু পাহান সবাইকে উদ্দেশ করে চিৎকার দিয়ে বলতে থাকেন, আমাকে নামাতে আসবে, তাকেই আমি হাসুয়া দিয়ে শেষ করে দেব, নিজেও শেষ হবো। এমন অবস্থায় পুলিশ প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা বিভিন্নভাবে কৌশল খাটিয়ে বাড়ির টিনের চালা থেকে বিষু পাহানকে নামানোর জন্য পরিকল্পনা শুরু করেন। স্থানীয় কয়েকজন যুবকের সহযোগিতা নিয়ে নামানোর পরিকল্পনা করার মহূর্তেই সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টিনের চালার ওপর বিষু পাহান তার হাতে থাকা ধারালো হাসুয়া দিয়ে একের পর এক হাত-পায়ের রগ ও গোপনাঙ্গসহ গলা কাটতে শুরু করেন।
এমন দৃশ্য দেখে দ্রুত টিনের চালার উপর ওঠে জালের ফাঁদে ফেলে (জাল দিয়ে পেচিয়ে) টিনের চালার ওপর থেকে গুরুতর জখম অবস্থায় নামানো হয় বিষু পাহানকে। নামানোর পূর্বেই বিষু পাহান হাসুয়া দিয়ে হাতের রগ, পায়ের রগ, গোপনাঙ্গ ও গলাসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ কেটে মারাত্মকভাবে নিজেই নিজেকে জখম করায়। এসময় স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়িতে করে বিষু পাহানকে দ্রুত নওগাঁ সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা করা হয়।
পরে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা রেফার্ড করলে বিষু পাহানকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সংবাদ লেখার সময় বিষু পাহানের ভাই রাজশাহী মেডিকেল থেকে ফোনে প্রতিবেদককে জানান, অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
অপরদিকে এমন ঘটনা ঘটানোর কারণ জানতে বিষু পাহানের পরিবার, স্বজন ও প্রতিবেশীদের সাথে কথা হলে তারা প্রতিবেদককে জানান, প্রায় এক বছর আগেও বিষু পাহান এমন উগ্র আচরণ করেছিলেন। তবে ওই সময় চিকিৎসা করানোর পরই গত এক বছর সে ভালোই ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই আবার এমন ঘটনা ঘটাল, যা কখনোই কোনো স্বাভাবিক মানুষ করতে পারে না। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন বলেও জানান তারা।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নওহাটামোড় পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই জিয়াউর রহমান জিয়া জানান, স্বাভাবিক মানুষ এভাবে নিজেই নিজের শরীরে আঘাত করতে পারে না, কিন্তু বিষু পাহান উপস্থিত সকলের সামনে নিজেই নিজের শরীরে ধারালো হাসুয়া দিয়ে যেভাবে আঘাত করেছেন তা খুবই মর্মান্তিক ও হৃদয় বিদারক দৃশ্য।
মহাদেবপুর থানার পরিদর্শক নজরুল ইসলাম জুয়েল বলেন, ঘটনাটি আমি জেনেছি। যদিও বা স্থানীয়রা বলছেন যে বিষু পাহান হঠাৎ করেই মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন। তারপরও ঘটনাটিকে গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। কারণ বিষু পাহান কী কারণে এমনটা করলেন, সেটিও ক্ষতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন ওসি।