২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ঘরে সিঁধকেটে স্বামীর হাত থেকে স্ত্রীকে রক্ষা, অস্ত্রসহ স্বামী আটক

ঘরে সিঁধকেটে স্বামীর হাত থেকে স্ত্রীকে রক্ষা, অস্ত্রসহ স্বামী আটক - ছবি : নয়া দিগন্ত

বগুড়ার ধুনটে পুলিশের ৪ ঘন্টাব্যাপি শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান শেষে স্বামী পলাশের (৩৫) হাত থেকে স্ত্রী রহিমা খাতুনকে (৩০) রক্ষা করেছে পুলিশ। পলাশকে অস্ত্রসহ আটক করোপ হয়। মঙ্গলবার তাকে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।  

পুলিশ জানায়, প্রায় বারো বছর আগে উপজেলার নিমগাছি ইউনিয়নের মাজবাড়ী গ্রামের পলাশের (৩৫) সাথে নিমগাছি গ্রামের জিল্লুর রহমানের মেয়ে রহিমা খাতুনের (৩০) বিয়ে হয়।

অভাবের সংসারে প্রায়ই অশান্তি লেগে থাকত। এর মাঝেই আট বছরেআগে তাদের ঘরে নীরব নামের একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। কিছুদিন সংসারে শান্তি নেমে আসলেও অভাব তা স্থায়ী হতে দেয় না। সংসারে স্বচ্ছলতা আনার জন্য রহিমা তিন বছর আগে সৌদি আরবে কাজের জন্য যান। সেখানে দুই বছর কাজ করে গত বছর দেশে ফিরে আসেন।

দেশে ফিরে রহিমা পলাশকে গরু ব্যবসার জন্য টাকা দেন। অলস পলাশ টাকা পয়সা নষ্ট করলে সংসারে আরো অশান্তি বেড়ে যায়। রহিমা আবারো গর্ভবতী হন। বর্তমানে তিনি পাঁচ মাসের অন্তঃসত্বা। অশান্তি তীব্র হলে রহিমা স্বামীর বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এতে পলাশ ক্ষুব্ধ হয়ে স্ত্রীর উপর প্রতিশোধ নিতে চান।

এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সোমবার বেলা ১২টার দিকে তাদের ছেলে নীরব বাইরে গেলে আচমকা তিহনি তার স্ত্রীকে ঘরে রেখে দরজা জানালা বন্ধ করে দেন। এরপর তিনি তার স্ত্রীকে খাটে শুইয়ে গলায় ধারালো ছুরি ধরে। স্ত্রী কান্নাকাটি শুরু করলে বাইরের লোকজন জানতে পেরে বাড়ির চারিদিক ঘিরে ফেলে। তারা পলাশকে বুঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পলাশ কারো কথা না শুনে বার বার বলতে থাকে- ‘তোমরা চলে যাও। আমি রহিমাকে জবাই করে নিজে আত্মহত্যা করব।’ প্রতিবেশীরা ধুনট থানা পুলিশকে জানালে এসআই প্রদীপ কুমারের নেতৃত্বে ধুনট থানা থেকে পুলিশের একটি টিম আসে। কিন্তু পলাশ এসআই প্রদীপের কোন কথায় কর্ণপাত না করে রহিমার গলায় ছুরি ঠেকিয়ে সবাইকে চলে যেতে বলে।

ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃপা সিন্ধু বালা বিষয়টি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেরপুর সার্কেল মো: গাজিউর রহমানকে জানালে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা করেন এবং বিষয়টি পুলিশ সুপার মো: আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএমকে জানালে তিনি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো: আব্দুর রশিদকেও দ্রুত ঘটনাস্থলে যেতে বলেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেরপুর সার্কেল ও ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করতে থাকেন।

পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় তারা পলাশের সাথে বিভিন্নভাবে কথা বলে তাকে ব্যস্ত রাখে এবং ঘরের অন্যদিক দিয়ে সিঁধ কাটে। পরে রাত ৮আটটার দিকে একসাথে সিঁধ কাটা অংশ দিয়ে এবং দরজা ভেঙ্গে ফিল্মি স্টাইলে ঘরে ঢুকে পলাশকে ছুরিসহ আটক করা হয় এবং তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে উদ্ধার করা হয়। এভাবে প্রায় ৪ ঘন্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে রক্ষা পায় রহিমা ও পলাশের জীবন। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে মঙ্গলবার পলাশকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

শেরপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান জানান, কোন অঘটন চাড়া অভিযান সফল হওয়ায় সবাই স্বস্তি পেয়েছি। পলাশকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান দেয়া হয়েছে। তবে স্ত্রী রহিমার পক্ষ থেকে এখনও কোন মামলা দেয়া হয়নি।


আরো সংবাদ



premium cement