উল্লাপাড়ায় ট্রেন লাইনচ্যুতির পর ইঞ্জিনে আগুন, ক্ষতিগ্রস্ত ৭ বগি
- সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা
- ১৪ নভেম্বর ২০১৯, ১৫:০৯, আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৯, ১৯:৪১
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়াতে ঢাকা থেকে রংপুরগামী লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেন নিয়ন্ত্রন হারিয়ে লাইনচ্যুতির পর ইঞ্জিনে আগুন ধরে ভস্মীভূত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে ঢাকা থেকে রংপুর যাওয়ার পথে উল্লাপাড়া রেল স্টেশনে প্রবেশকালে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। খবর পেয়ে উল্লাপাড়া ফায়ার সার্ভিস পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় আহত যাত্রীদের উদ্ধার করে স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিক ও উল্লাপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। উল্লাপাড়া ফায়ার সার্ভিস অফিসার নাদির হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, সকাল ১০টা ১৫ মিনিটের সময় ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে রংপুরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে ট্রেনটি। দুপুর ২টা ৪ মিনিটের সময় উল্লাপাড়া রেল স্টেশনের প্রবেশমুখ কন্ট্রোল বোর্ড বরাবর এসে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অন্য লাইনে ঢোকার সময় হঠাৎ লাইনচ্যুতি হয়ে ইঞ্জিনটি পরে গিয়ে আগুন ধরে যায়। এসময় পেছনের বগিগুলো সজোরে ধাক্কা খেয়ে লাইনচ্যুত হয়ে দুমড়ে-মুচরে যায়। মুহূর্তের মধ্যে আগুনের কুন্ডলিসহ ধোয়ায় আচ্ছন্ন হয় স্টেশন এলাকা। ভয়ে মানুষজন ছুটাছুটি করতে থাকে।
খবর পেয়ে উল্লাপাড়া দমকল বাহিনী, রেলওয়ে পুলিশ ও উল্লাপাড়া থানা পুলিশ এবং স্থানীয়রা এসে একযোগে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় ট্রেনের চালকসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিক ও উল্লাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী উল্লাপাড়া রেলওয়ে গেইট কিপার ফয়সাল জানান, লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনটি উল্লাপাড়া স্টেশনে বিরতি নেই। তাই এটি দ্রুতবেগে চলে যায়। তবে প্রতিদিনের চেয়ে এটির গতি একটু বেশি ছিল।
তিনি আরো জানান, ট্রেনটি উল্লাপাড়া রেল স্টেশনে প্রবেশেমুখের কন্ট্রোল বোর্ডের কাছে গিয়ে বিকট শব্দ হয়ে ইঞ্জিন লাইনচ্যুত হলে সাথে সাথে আগুন ধরে যায়। এসময় পেছন দিকের বগিগুলো সজোরে ধাক্কা খেয়ে পরে যায়। ট্রেনের ১৪টি বগির সাতটিই লাইনচ্যুত হয়। এই ঘটনায় বগুড়া নগরবাড়ি মহাসড়ক দুই ঘন্টা বন্ধ থাকার পর খুলে দেয়া হয়েছে। এই ঘটনায় ঢাকা টু উত্তর ও পশ্চিম বঙ্গের সাথে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ঈশ্বরদী থেকে রেলওয়ের উদ্ধারকারী রিলিফ ট্রেন রওনা দিয়েছে বলে জানা গেছে। এই ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে।
এদিকে, স্টেশনে ঢোকার আগে কন্ট্রোল বোর্ডের কাছে রেললাইন ভাগ হয়েছে। রেল লাইনের যে স্থানে ভাগ হয়েছে সেখানে কাঠের স্লিপার ভেঙ্গে গিয়ে যেটি দিয়ে যাওয়ার কথা তার পরিবর্তে অন্য লাইনে ঢুকে পড়ার কারণে এই লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
ট্রেনের চালক তারিক রহমান জানান, ডুয়েল গেজ লাইনের এই স্থানে বৃহস্পতিবার সকালে লাইন মেরামত কাজ করা হয়েছে। সম্ভবত ওই স্থানের লুপে কোনো ত্রুটি ছিল বলে তার ধারণা। যার কারণে ব্রডগেজের ট্রেন মিটারগেজে উঠে গিয়ে এই ঘটনা ঘটে।
স্টেশন মাস্টার রফিকুল ইসলাম জানান, নিদিষ্ট গতির চেয়ে বেশি গতিতে ট্রেনটি চালানোর কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
আহতদের একজন পাবনার ভাঙ্গুরার সাথী খাতুন ওই ট্রেনের ইঞ্জিন সংলগ্ন বুফে কামরায় ছিল। ইঞ্জিন পরে যাওয়ায় তিনি বুফে কামরায় আটকা পড়েন। পরে ওই কামরার জানালার গ্লাস ভেঙ্গে তাকে উদ্ধার করা হয়।
সাথী খাতুন বলেন, নিশ্চিত মৃত্যুর কবল থেকে প্রাণে বেঁচে গেলাম।