পলাতক আ’লীগের সাবেক এমপি ফারুক চৌধুরীর রোষানলে ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর
- রাজশাহী ব্যুরো
- ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২:০২

রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী বর্তমানে পলাতক। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানের মাধ্যমে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই তিনি এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। তিনি ঠিক কোথায় আছেন সে ব্যাপারে প্রশাসনের তরফ থেকে সুনির্দিষ্ট তথ্য মেলেনি। তবে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সমালোচিত এই সাবেক এমপি বর্তমানে একটি রাজনৈতিক দলের এক নেতার তত্বাবধানে বহাল তবিয়তে রয়েছেন বলে জানা গেছে। তিনি পলাতক হলেও তার রোষানলে পড়েছেন কে এম মোস্তাফিজুর রহমান নামে একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। এতে চরম বিপাকে ও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন এই ব্যবসায়ী।
মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী থিম রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান। আর এই কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হলেন কে এম মোস্তাফিজুর রহমান। এই কোম্পানি নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের জের ধরে ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে আদালতে সালিসি (আরবিট্রেশন) মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে আদালতে চলমান রয়েছে। থিম রিয়েল এস্টেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কে এম মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকা জেলা জজ আদালতে মামলাটি করেছেন। মামলার আরজিতে ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোম্পানির ব্যাংক হিসাব থেকে কয়েক কোটি টাকা তুলে নেয়া, প্রতারণা ও প্রভাব খাটিয়ে থিম ওমর প্লাজা দখলের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলায় কোম্পানির অপর দু’ অংশীদারকেও বিবাদী করেছেন কে এম মোস্তাফিজুর রহমান। তবে মূল অভিযোগ তোলা হয়েছে ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে।
মামলা ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, থিম রিয়েল এস্টেটের ৩৫ শতাংশের মালিক হলেন ওমর ফারুক চৌধুরী। আর মোস্তাফিজুর রহমান মালিক হলেন ২৫ শতাংশের। এ ছাড়া আরো দু’জন পরিচালকের মালিকানা রয়েছে ২০ শতাংশ করে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বহুতল ভবন নির্মাণ করে থিম রিয়েল এস্টেট কোম্পানি। পরে ভবনের ফ্ল্যাট ও দোকানপাট বিক্রি করে। এরই ধারাবাহিকতায় রাজশাহীতেও তারা ‘থিম ওমর প্লাজা’ নামের একটি ১০ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করেছে। ভবনটির অবস্থান রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া মৌজায় নিউমার্কেটের উত্তর পাশে। প্রায় ৩০ কাঠা এই জমির মালিক ওমর ফারুক চৌধুরী। নিজের এই জমিতে বহুতল ভবন গড়ে তুলতে থিম রিয়েল এস্টেটের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন তিনি। অথচ জমিটি তিনি আগেই বন্ধক রেখেছিলেন একটি বেসরকারি ব্যাংকে। ওমর ফারুক চৌধুরী থিমের সাথে চুক্তি করার সময় বিষয়টি গোপন রেখে প্রতারণা করেছেন বলে উল্লেখ করা হয় মামলার আরজিতে। এতে কোম্পানি আর্থিক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
আরজিতে আরো অভিযোগ করা হয়, কে এম মোস্তাফিজুর রহমান বাধ্য হয়ে ওমর ফারুক চৌধুরীকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। কিন্তু জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় পরে মোস্তাফিজুর রহমান আদালতে সালিসি মামলা করেন। থিম ওমর প্লাজার ফ্ল্যাট ও দোকানপাট বিক্রির ব্যাপারে অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা কেন জারি করা হবে না, জানতে চেয়ে একটি কারণ দর্শানো নোটিশও দেয়া হয় তাকে।
মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে আরো জানা গেছে, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনেক অর্থ বিনিয়োগ করে যথাসময়ে ভবনটি নির্মাণ করেন। এতে কোম্পানির দেনাও হয়েছে প্রায় ৩১ কোটি টাকা। ভবনটির ফ্ল্যাট ও দোকান বিক্রি করে এই টাকা পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু তা না করে কোম্পানির চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ডেকে বলে দেন, এই ভবন এখন তার নিজের, এতে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কোনো অংশ নেই। ভবনে তাকে ঢুকতে দেয়া হবে না।
ওমর ফারুক চৌধুরী থিম রিয়েল এস্টেট কোম্পানির ব্যাংক হিসাব থেকে ৭ থেকে ৮ কোটি টাকা নিজের হিসাবে স্থানান্তর করেছেন বলেও আরজিতে উল্লেখ করা হয়।
এ ব্যাপারে জানতে মোবাইলে সাবেক এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে। ফলে তার বক্তব্য জানা যায়নি। তবে এ প্রসঙ্গে এর আগে ওমর ফারুক চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, সম্পত্তি নিয়ে অংশীদারদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হতেই পারে। তার নিষ্পত্তিরও বিধান রয়েছে।
জানতে চাইলে থিম রিয়েল এস্টেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এম মোস্তাফিজুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, ওমর ফারুক চৌধুরী পুলিশের তালিকায় পলাতক। কিন্তু তিনি বর্তমানে একটি বড় রাজনৈতিক দলের এক নেতার তত্বাবধানে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। তার রোষানলে পড়ে আমি এখন চরম বিপাকে ও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছি। এ নিয়ে আদালতে একটি মামলা চলমান রয়েছে।
তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই আত্মগোপনে চলে যান ফারুক চৌধুরী। এরপর এক রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় থিম রিয়েল এস্টেট কোম্পানিকে পুরোপুরি নিজের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পরিকল্পনা করেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ফারুক চৌধুরী তার স্ত্রী, দু’ মেয়ে ও এক ছেলেসহ পাঁচজনকে থিম রিয়েল এস্টেট কোম্পানির পরিচালক পর্ষদে ঢুকিয়েছেন। ব্যাংকিং লেনদেনও করছেন। শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সুযোগ বুঝে অন্যায়ভাবে ফারুক চৌধুরী কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে তার স্ত্রী নিগার সুলতানা চৌধুরীকে ও এমডি হিসেবে মেয়ে নাজিফা হক চৌধুরীকে দায়িত্ব দিয়েছেন। মোস্তাফিজুর রহমান দাবি করেন, এখন পর্যন্ত আমিই এই কোম্পানির বৈধ এমডি।
তিনি আরো বলেন, যে রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় ফারুক চৌধুরী রয়েছেন সেই নেতা সম্পর্কে বেয়াই হন। অর্থাৎ ফারুক চৌধুরীর মেয়ের সাথে ওই নেতার ছেলের বিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ফারুক চৌধুরীর আরেক মেয়ের বিয়ে দেয়া হয়েছে গত ১০ জানুয়ারি। রাজধানীর গুলশানে ওই বেয়াই ও তার এক ছেলের তত্ত্বাবধানে ওই মেয়ের বিয়ে দেয়া হয়েছে বলেও জানান কে এম মোস্তাফিজুর রহমান।
জানতে চাইলে রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) রফিকুল আলম নয়া দিগন্তকে বলেন, ওমর ফারুক চৌধুরী পলাতক। তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ সজাগ রয়েছে। তাকে পেলেই পুলিশ গ্রেফতার করবে। তার বিরুদ্ধে এরই মধ্যে বেশ কিছু মামলা দায়ের হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা