৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ মাঘ ১৪৩১, ২৯ রজব ১৪৪৬
`

সিরাজগঞ্জে দুই ওসিসহ ১৫ পুলিশ সদস্যের নামে মামলা

ওসি আসিফ মুহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম ও এনামুল হক। - ছবি : নয়া দিগন্ত

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গায় পুলিশের পিকআপে ধাক্কা লাগায় ট্রাকচালককে আটকের পর পায়ে গুলি করে পঙ্গু করার অভিযোগে সাবেক দুই ওসিসহ ১৫ পুলিশ সদস্যের নামে মামলা রুজুর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানা আমলি আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কে এম শাহরিয়ার শহীদ বাপ্পী এ আদেশ দেন।

ট্রাকচালক রোকন মোল্লা পাবনার ফরিদপুর উপজেলার নেছরাপাড়া এলাকার রহমত মোল্লার ছেলে বলে জানা গেছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ মে ট্রাকচালক রোকন মোল্লা বগুড়া থেকে পাবনা যাওয়ার পথে রাত ১টার দিকে ঢাকা-নগরবাড়ি মহাসড়কের উল্লাপাড়ার কাওয়াক মোড়ে পুলিশের পিকআপভ্যানের সাথে ধাক্কা লাগে। এ সময় ক্ষিপ্ত হয়ে উল্লাপাড়া মডেল থানার সাবেক ওসি আসিফ মুহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম ট্রাকচালক রোকন মোল্লার দিকে পিস্তল তাক করেন। ট্রাকচালক ভয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে সিরাজগঞ্জ রোডের দিকে দ্রুত ছুটতে থাকলে পুলিশের গাড়িও পিছু নেয়। এ সময় খবর পেয়ে সলঙ্গা থানার সাবেক ওসি এনামুল হকও ট্রাকটি ধরতে পিছু নেয়।

পরে সলঙ্গা থানার রাজশাহী-পাবনা মহাসড়কের হরিণচড়ায় ট্রাকচালক রোকন মোল্লাকে আটক করে মারধর করে এবং বিবস্ত্র অবস্থায় তাকে রাস্তার পাশে পুকুরে নামিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরে পুকুর থেকে তুলে ওসি এনামুল হক উল্লাপাড়া মডেল থানার তৎকালীন ওসি আসিফ মুহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম ট্রাকচালক রোকন মোল্লাকে গুলি করে মেরে ফেলতে বলে। পরে আসিফ তার ডান পায়ে গুলি করে সলঙ্গা থানায় নিয়ে তিনটি মামলা করে গ্রেফতার দেখিয়ে শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা অর্থোপেডিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ট্রাকচালক রোকন মোল্লার ডান পা কেটে ফেলা হয়।

মামলার বাদি রোকন মোল্লা বলেন, ‘উল্লাপাড়া থানার সাবেক ওসি আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম পিস্তল দিয়ে আমাকে গুলি করে পঙ্গু করে দিয়েছে। এখন একটি পা নেই। দীর্ঘদিন মিথ্যা মামলায় কারাগারে থাকার কারণে আমার সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে মামলা করতে দেরি হয়েছে। দীর্ঘদিন পর কারাভোগ শেষ করে জামিনে বেরিয়ে এসে মামলা করেছি। আমার সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিচারের দাবি করছি।’

আইনজীবী গোলাম হাদী কিরন ইসলাম বলেন, ‘বাদির মেডিক্যাল প্রতিবেদন এসেছে। সলঙ্গা থানা আমলি আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপারকে নিয়মিত মামলার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।’

এ বিষয়ে উল্লাপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম বদলিজনিত কারণে জেলার বাইরে থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সলঙ্গা থানার সাবেক ওসি এনামুল হক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘রোকন মোল্লা নামে এক আন্তঃজেলা ডাকাত উল্লাপাড়া কাওয়াক মোড় এলাকায় রাত ১টার দিকে ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তাকে উল্লাপাড়া থানা পুলিশ ধাওয়া করলে শাহজাদুপরের দিকে যায়। শাহজাদপুর থানা পুলিশের ধাওয়ায় সেখান থেকে আবারো উল্লাপাড়ায় আসে। সেখান থেকে আবার সলঙ্গা থানা এলাকায় চলে এলে আমরা ধাওয়া করি।’

তিনি আরো বলেন, ‘কিছুক্ষণ ধরে ধাওয়া করার পর হরিণচড়া এলাকায় তাকে ঘিরে ফেলা হয়। তখন সে গাড়ি রেখে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, পুলিশ পিছে পিছে ধাওয়া করলে সে গুলি করে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে সে আহত হয়। এরপর তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহসহ ছয় জেলায় ২৮টি মামলা রয়েছে।’

সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মো: ফারুক হোসেন বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী পিটিশন মামলা হিসেবে রুজু করে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনিব্যবস্থা নেয়া হবে।’


আরো সংবাদ



premium cement