২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১, ২৩ রজব ১৪৪৬
`
শেখ হাসিনার তোষণে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

রাজশাহী নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজ অধ্যক্ষের বহিষ্কার দাবি

অধ্যক্ষ কালাচাঁদ শীল - ছবি : নয়া দিগন্ত

প্রায় ছয় মাস আগে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে দেশের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরই মধ্যে বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সরেছে শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। বাতিল হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ছবি এবং শেখ হাসিনার বাণী সম্বলিত স্লোগান। কিন্তু তারপরও স্বপ্রণোদিত হয়ে রাজশাহী নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ কালাচাঁদ শীল দাফতরিক কাগজপত্রে শেখ হাসিনার স্লোগান সম্বলিত লোগো ব্যবহার অব্যাহত রেখেছেন।

এ নিয়ে নয়া দিগন্ত অনলাইনে সংবাদ প্রকাশের প্রেক্ষিতে কলেজ ক্যাম্পাসে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে রাজশাহী নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসসহ অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মাঝে।

এ বিষয়ে গণঅভ্যুত্থান মঞ্চের পক্ষ থেকে অধ্যক্ষের বহিষ্কারসহ তিন দফা দাবি জানানো হয়েছে। তাদের দাবিগুলো হলো অধ্যক্ষ কালাচাঁদ শীলের কর্মকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করে তাকে দ্রুততম সময়ে স্থায়ী বহিষ্কার করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধে একটি স্থায়ী ও কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন করা এবং শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্লোগান বা প্রতীক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।

কলেজটির দাফতরিক বিভিন্ন কাগজপত্র ঘেঁটে ও যাচাই করে দেখা গেছে, অধ্যক্ষের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি, একাধিক ডিজাইন ও সাইজের খামে ‘শিক্ষা নিয়ে গড়বো দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’ লেখা সম্বলিত লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ কালাচাঁদ শীল স্বাক্ষরিত ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষের দ্বাদশ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন খাতে নির্ধারিত হারে বেতন ও সেশনচার্জ পরিশোধ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে এই স্লোগান ব্যবহার করা হয়েছে। এই বিজ্ঞপ্তিতে অধ্যক্ষ স্বাক্ষর করেছেন গত ৪ সেপ্টেম্বর। ডিসেম্বরের দিকে টেস্ট পরীক্ষার খাতাতেও রয়েছে শেখ হাসিনার প্রশংসা সম্বলিত লোগো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেন, ‘গত ৫ আগস্টের পর এই লোগো সম্বলিত খাম নজরে এসেছে। আমরা ধারণা করছি, ৫ আগস্টের পরই খামগুলো ছাপা হয়েছে। বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এছাড়া বিজ্ঞপ্তিতেও ‘শিক্ষা নিয়ে গড়বো দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’ লেখা সম্বলিত লোগো ব্যবহার করা হয়েছে।’

পুলিশ প্রশাসন থেকে বিভিন্ন সচিবালয় ও মন্ত্রণালয়ে রয়েছে অধ্যক্ষের নিবিড় সম্পর্ক। যার কারণে বহু শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এ বিষয়ে আপত্তি জানানোর পরও উল্টা সেসব কাগজ ব্যবহার করতে নির্দেশ দেন তিনি। তার বেপরোয়া আচরণ এবং কূটকৌশলের কারণে অনেকেই অধ্যক্ষের অন্যায় কর্মের বিরুদ্ধাচারণ করতে ভয় পান বলে জানান তারা।

এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে রাজশাহী নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়াসিফ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের চোখে পড়ার পর আমরা অধ্যক্ষকে সতর্ক করেছিলাম। কিন্তু তারপর এখনো একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীসহ অনেকের মধ্যে অসন্তোষ দানা বেঁধেছে। নতুন বাংলাদেশে এই ধরনের ঘটনা আমরা মেনে নেবো না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে দল মত নির্বিশেষে আবারো মাঠে নামব।

এ ব্যাপারে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মেহেরুন্নেসা ও ইসলামি শিক্ষা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তৌহিদুল হক বলেন, ‘একটি গণ-অভ্যুত্থানের পর যে সরকার গঠিত হয়েছে সেই সরকারের পলিসির সাথে এমন ঘটনা বেমানান। অবশ্যই এ ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

জানতে চাইলে রাজশাহী নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ কালাচাঁদ শীল বলেন, ‘এরকম হয়ে থাকলে আমি দুঃখিত। এটা ভুলবশত হয়ে থাকতে পারে।’

রাজশাহী নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষের স্লোগানযুক্ত লোগো ব্যবহারের নিন্দা ও দ্রুততম সময়ে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে গণঅভ্যুত্থান মঞ্চের আহ্বায়ক জাহিদ হাসান জোহা ও সদস্যসচিব ইকরামুল হক মানুন এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, ‘রাজশাহী নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ কালাচাঁদ শীল দাফতরিক কাগজপত্রে স্বৈরশাসকের যে রাজনৈতিক স্লোগান সম্বলিত লোগো ব্যবহার করেছেন, তা তার নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এটি কেবল একজন অধ্যক্ষের দায়িত্বের পরিপন্থি নয়, বরং শিক্ষার পরিবেশকে রাজনৈতিক মেরুকরণের মাধ্যমে কলুষিত করার শামিল। কালাচাঁদ শীলের কর্মকাণ্ড এই নীতির স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং এটি শিক্ষাক্ষেত্রে অরাজকতা সৃষ্টির শামিল।’


আরো সংবাদ



premium cement