বস্তায় আদা চাষে আগ্রহ বাড়ছে শেরপুরের কৃষকদের
- আকরাম হোসাইন, শেরপুর (বগুড়া)
- ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:০৯
পরিত্যক্ত জমিতে কম খরচে কম পরিশ্রমে অধিক লাভ হওয়ায় বগুড়ার শেরপুরে বস্তায় মাটি ভরে আদা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। আদার সাথে সাথী ফসল (এক ফসলের মধ্যে অন্য ফসলের চাষ) হিসেবে অন্য সবজি চাষ করা যায়। এতে ভালো লাভ হওয়ায় অন্য কৃষকদের মধ্যেও আদা চাষে আগ্রহ তৈরি হচ্ছে।
মসলা ও ভেষজ ওষুধ হিসেবে সারা দেশে আদার ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। এখন বাজারে দাম কিছুটা কম থাকলেও সারা বছরই বাজারে আদার দাম বেশ চড়া থাকে। তাই পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে এবং বাড়তি আয়ের আশায় শেরপুরের কৃষকরা বস্তায় আদা চাষ শুরু করেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, শেরপুরে চলতি মৌসুমে প্রায় দু’শতাধিক কৃষক বস্তায় আদা চাষ করেছেন। উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ও পৌরসভায় কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় কৃষকরা আদা চাষ শুরু করেছেন।
উপজেলার শাহ-বন্দেগী ইউনিয়নের ধড়মোকাম গ্রামের কৃষক ইয়াসিন আলী বলেন, ‘এবারই প্রথম বস্তায় আদা চাষ করেছি। মাটির সাথে গোবর সার, খৈল, ছাই, জিংক মিশিয়ে ৫০০ বস্তা বাড়ির পাশেই পরিত্যক্ত জায়গায় চাষ করেছি। ২৭৫ টাকা কেজি দরে বগুড়ার মহাস্থান থেকে দেশী বীজ আদা সংগ্রহ করে গত এপ্রিল মাসের শেষের দিকে বস্তার মাটিতে রোপণ করেছি। জানুয়ারি মাসে আদা উঠিয়ে বাজারে বিক্রি করতে পারব। আমি বাড়ির পরিত্যক্ত দু’শতাংশের মতো জায়গা কাজে লাগিয়ে লাখ টাকা আয়ের আশা করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি সমাজসেবা অধিদফতরের মশলা চাষের একটি ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণ করি এবং সেখান থেকে আদা চাষে আগ্রহী হই। যেহেতু মাঠে আমার জমি নেই, সে কারণে বস্তায় আদা চাষ শুরু করেছি। বস্তায় আদা চাষের একটি ভালো দিক হলো, এর তেমন একটা পরিচর্যা করতে হয় না। শুধু গাছের গোড়ায় ঘাস হলে তা উপড়ে ফেলি। রোপণের পর আমি কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করিনি। শুধুমাত্র একবার ছত্রাকনাশক ব্যবহার করেছিলাম উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মরিয়ম আপার পরামর্শে।’
ইয়াসিন আলী বলেন, ‘বস্তা প্রতি এক কেজি থেকে তিন কেজি পর্যন্ত ফলন হয়। যেহেতু আমার আদা দেশী, সে কারণে এখানে দেড় থেকে দু’কেজি ফলন হবে বলে মনে করছি। বীজ হিসেবে বিক্রি করতে পারলে লাখ টাকার উপরে লাভ হবে। আর যদি বাজারে বিক্রি করি তাহলে ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা লাভ হবে। এখন পর্যন্ত আদা চাষে খরচ হয়েছে মাত্র ২০ হাজার টাকা। আগামি বছর আমি আরো বেশি বস্তায় আদা চাষের পরিকল্পনা করেছি। আদা চাষে ছায়াযুক্ত জায়গার প্রয়োজন তাই এখনই শতাধিক পেপে গাছ লাগিয়েছি।’
একই এলাকার আরেক কৃষক আব্দুল মান্নান জানান, বস্তায় আদা চাষে আলাদা জমির প্রয়োজন হয় না। রোগের আক্রমণও কম হয়। বাড়ির আশপাশের পরিত্যক্ত, ছায়াযুক্ত জায়গা কাজে লাগিয়ে অন্যান্য ফসলের সাথে সাথী ফসল হিসেবে বাড়তি আয় করা যায়।
৩৮ শতাংশ জমিতে আদা চাষ করা কৃষক জহির উদ্দিন বলেন, ‘আমি আদার জমিতে বেগুন, শসা, পটল ও বরবটি লাগিয়েছিলাম। এগুলো বিক্রি করে ইতোমধ্যেই খরচের বড় একটি অংশ তুলেছি। আশা করছি শতকে ১০০ কেজি ফলন পাব। তবে বেলেযুক্ত মাটি হলে আরো বেশি ফলন হতো।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার বলেন, ‘এপ্রিল-মে মাস আদা রোপণের জন্য উপযুক্ত সময়। বস্তায় আদা চাষ করলে আলাদা জমি অপচয় হয় না। বস্তার মাটি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। আদার সাথে অন্য ফসল চাষ করায় লাভের পরিমাণও বেশি হয়। আমরা কৃষকদের আদা চাষে উৎসাহ দিচ্ছি। তাদের কারিগরি সহায়তা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি। পাশাপশি প্রতিটি ইউনিয়নেই কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি আদা চাষের জন্য।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা