২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
বিএমডিএ-তে চুরি

চোরকে নাগালে পেয়েও না ধরার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে

-

রাজশাহী বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) স্টোরে চুরির ঘটনা ঘটেছে। চুরির সময় হাতে-নাতে কর্তব্যরত আনসারদের কাছে ধরা পড়েন এরশাদুল ইসলাম (৩৫)। তিনি বিএমডিএ’র চুক্তিভিত্তিক কর্মচারি।

বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ থানায় খবর দিলে এসআই আকরামুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে আসে। এ সময় কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ প্রদানপূর্বক তাকে গ্রেফতারের ব্যাপারে বলেন। কিন্তু এসআই আকরামুজ্জামান তদন্তের অজুহাত দেখিয়ে চোরকে গ্রেফতারে অনীহা প্রকাশ করেন। এরপর থেকেই চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত এরশাদুল পলাতক। এমনই অভিযোগ বিএমডিএ’র রাজশাহী জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান সহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

তাদের ভাষ্য, ঘটনার সময় স্টোরে উপস্থিত ছিলেন স্টোরকিপার রেজাউল করিম ও দারওয়ান শাহীনুর রহমান কাজল। কোনো ধরনের অনুমতি এবং চাহিদাপত্র ছাড়াই স্টোরের পেছন দিক দিয়ে চার রিল তামার তার সরানো হচ্ছিল, যা হাতেনাতে ধরে ফেলেন দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা। সবকিছুর প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ওই সময় পুলিশ অভিযুক্ত এরশাদুলকে না ধরে থানায় ফেরেন। এ নিয়ে বিএমডিএ জুড়ে বেশ অসন্তোষ দেখা যায়।

তবে এই চুরির সাথে জড়িত থাকার বিষয়টিতে সন্দেহের তীর গিয়ে বিধেছে স্টোরকিপার রেজাউল করিম ও তার অধীনস্ত দারোয়ান শাহিনুর রহমান কাজলের ওপর। কিন্তু তাদের দাবি, তারা কিছুই জানতে পারেননি।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, অন্যান্য মালামালের সাথে ডিপ টিউওয়েলের কাজে ব্যবহারযোগ্য চার রিল তামার তারের নমুনা রাখা ছিল স্টোরে। সাধারণত অফিস অর্ডার এবং চাহিদা ছাড়া কোনো প্রকারের মালামাল স্টোর থেকে বের হওয়ার নিয়ম নেই। এই নিয়মের ব্যতয় ঘটিয়ে রোববার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে এগুলো গোপনে সরানো হচ্ছিল। ঘটনাটি আনসার সদস্যরা টের পেয়ে মালামালসহ আটক করে এরশাদুলকে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত আনসার সদস্য রুবেল শরিফ বলেন, সাধারণত অফিস অর্ডার হওয়ার পর চাহিদাকৃত মালের ওপর একটি টোকেন প্রদান করা হয়। সেই টোকেন আনসারদের কাছে জমা দিলে, আমরা মাল ছেড়ে দেই। কিন্তু এমন কোনো কাগজ এবং টোকেন না নিয়েই পেছন থেকে তামার তারের রিল নিয়ে যাওয়ার সময় এরশাদুলকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতনদের বিষয়টি অবগত করা হয়।

বিএমডিএ সূত্র বলছে, নিয়ম অনুসারে একজন স্টোরকিপার যখন অফিস ত্যাগ করবেন, তখন তার ঊর্ধ্বতন দু’জন কর্মকর্তার স্বাক্ষর নিয়ে স্টোরে তালা দিয়ে সিলগালা করে বের হবেন। এটি প্রতিদিনের রুটিন। আর যতক্ষণ তিনি অফিসে থাকবেন; ততক্ষণ স্টোরের যাবতীয় দায়িত্ব তার। তার উপস্থিতিতে একটি নাট-বল্টুর হেরফের হলে; তার ঘাড়েই দায়িত্ব বর্তায়।

এ ঘটনায় রোববার রাত ১১টায় বিএমডিএ’র রাজশাহী রিজিয়নের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান নগরীর রাজপাড়া থানায় একটি এজহার দায়ের করেছেন। তিনি বলেন, ঘটনাটি জানার পরপরই আমরা থানায় কল করে পুলিশ ডাকি এবং অভিযুক্ত কর্মচারী এরশাদুলকে গ্রেফতার করতে বলি। কারণ, সে এখতিয়ার বহির্ভূতভাবেই চার রিল তার সরিয়ে নিচ্ছিলো। প্রতি রিলে প্রায় ১১কেজি করে তামার তার থাকে। চার রিল তামার এই তারের বাজার মূল্য আনুমানিক ৭০ হাজার টাকা। এই চুরির চাক্ষুস প্রমাণসহ সে ধরা পড়ে। কিন্তু পুলিশ তদন্তের কথা বলে অভিযুক্তকে না ধরেই থানায় ফেরেন। সেই কর্মচারী এখন পলাতক। তাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে চুরির বিস্তারিত তথ্য বেরিয়ে আসতো। কিন্তু, এমনটি হয়নি।

দাফতরিক পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেখানে একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, একজন নির্বাহী প্রকৌশলী ও একজন সহকারী প্রকৌশলী আছেন। তারা ঘটনাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দানের পর চুরির সঙ্গে যুক্ত থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

গ্রেফতার না করে অভিযুক্তকে ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, একটা সরকারি জায়গা থেকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ চুরি হয়ে যাচ্ছিল। নিয়ম মেনে উর্ধ্বতন কর্তাদের জানিয়ে নিজে বাদী হয়ে এজহারও দায়ের করেছি। কিন্তু পুলিশের এক কর্মকর্তা তাকে না ধরে তদন্তের নামে ছেড়ে দিয়েছেন। এটা দুঃখজনক।

এদিকে প্রথমে এ বিষয়ে কথা বলতে না চাইলেও পরে এসআই আকরামুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় আমি ঘটনাস্থলে পুলিশ টিম নিয়ে গেলেও ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা হচ্ছেন এসআই তরিকুল ইসলাম। এ ব্যাপারে তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

জানতে চাইলে এসআই তরিকুল ইসলাম বলেন, মামলার দায়িত্বভার আমি পেলেও এখন পর্যন্ত ঘটনাস্থলে যাওয়ার সময় পাইনি। খুব দ্রুতই বিষয়টি তদন্ত করবো’। তবে এ ব্যাপারে রাজপাড়া থানার অফিস ইনচার্জ (ওসি) আশরাফুল আলমের বক্তব্য পাওয়া যাইনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সাবিনা ইয়াসমিন গণমাধ্যমকে বলেন, ঘটনাটি আমার জানা নেই। তবে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই এমন ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়। তারপরও বিষয়টি আমি উভয়পক্ষের কাছে পুরোপুরি জেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবো।


আরো সংবাদ



premium cement
আনিসুল, সালমান ও জিয়াকে ‘রক্ষার চেষ্টাকারী’র বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সচিবালয়ের আগুন নেভাতে আসা ফায়ার সার্ভিস কর্মীকে ট্রাকের চাপা মোহাম্মদপুরে বাসমালিককে হত্যা মাঝরাতে সচিবালয়ে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১৮ ইউনিট রাজধানীর ফুটপাথ পরিদর্শনে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী নিখোঁজের ৪ দিন পর কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক খালেদ ফিরেছেন মোহাম্মদপুরে বাস মালিককে হত্যা উত্তরায় এপিবিএনের সামনে ট্রাক চাপায় অজ্ঞাত ব্যক্তি নিহত দ্রব্যমুল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতায় জনগণ বিক্ষুব্ধ চাঁদপুরে জাহাজে ৭ খুনের মোটিভ শিগগিরই জানতে পারবো : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা উন্নয়ন কর্মসূচিতে বড় কাটছাঁট

সকল