মানুষ যাতে বৈষম্যের শিকার না হয় সেই প্র্যাকটিস আমরা গড়ে তুলতে চাই : তারেক
- রাজশাহী ব্যুরো
- ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১:৩৫
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, মানুষ যাতে বৈষম্যের শিকার না হয়, সেই প্র্যাকটিসটা আমরা গড়ে তুলতে চাই। এজন্য একটু সময়ের প্রয়োজন। বিগত স্বৈরাচার সরকার শুধু বিচার ব্যবস্থা নয়, প্রতিটি ব্যবস্থাকে ভেঙেচুরে নষ্ট করে দিয়েছে। আমরা দেখেছি কোনোটা ডামি নির্বাচন, কোনোটা নিশিরাতের নির্বাচন, কোনোটা দেখেছি ভোট ডাকাতির নির্বাচন। কোনোবারই প্রকৃত জনপ্রতিনিধি ছিল না। তাই তারা যা ইচ্ছা তাই করেছে। আমরা আগামী দিনে চাইছি প্রকৃত একজন জনপ্রতিনিধি। আগামী দিনে যারা যোগ্য, সেই যোগ্য মানুষটিকে যোগ্য জায়গায় স্থান যদি আমরা দিতে পারি, তাহলেই এ দেশটাকে আমরা পরিবর্তন করতে পারবো।
শনিবার (২৪ নভেম্বর) বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রশ্নোত্তর পর্বে তারেক রহমান নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন।
রাজশাহী জেলা পরিষদ মিলনায়তনে দিনব্যাপী এ কর্মশালার আয়োজন করে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণবিষয়ক কমিটি। এতে রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলার নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। বিকেলে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের জন্য নিজের ৩১ দফার বিষয়ে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
বিগত আওয়ামী স্বৈরাচারের সময় প্রায় ৬০ লাখ নেতা-কর্মীর নামে মিথ্যা মামলা হয়েছে বলে জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, নেতা-কর্মীদের নামে দায়ের করা এসব গায়েবি মামলা পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করা হবে। বিষয়টি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে কথা বলছেন বলেও নেতা-কর্মীদের আশ্বস্ত করেন তিনি।
গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষকদলের যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম কবিরের এক প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, বিগত স্বৈরাচারের সময় আমাদের প্রায় ৬০ লাখ নেতা-কর্মীর নামে মিথ্যা মামলা হয়েছে। এটি গায়েবি মামলা নামে সারা দেশে পরিচিত। অবশ্যই আমরা এ ব্যাপারে সরকারের সাথে কথা বলছি। এটি একটি আইনগত প্রক্রিয়া, চলমান প্রক্রিয়া এটি। একবারে হয়তো সম্ভব হবে না। পর্যায়ক্রমে নিশ্চয় আমরা গায়েবি মামলা প্রত্যাহার করাতে সক্ষম হবো।
এ সময় বগুড়ার অ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে জানান, বর্তমানে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধরে আনছে, কিন্তু আদালতে সাথে সাথে জামিন হচ্ছে। অথচ আগে বিএনপির নেতা-কর্মীর জামিন হয়নি এত দ্রুত। এ বিচারকদের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এ প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, আমাদের সাথে ওদের পার্থক্যটা এখানেই। আমরা যে বৈষম্যের শিকার হয়েছি, সেটিকে আমরা ভাঙতে চাই।
রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে সব তথ্য নাগরিকের জন্য উন্মুক্ত থাকবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘এখানে একটি বিষয় আছে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার কিছু বিষয় থাকে। এ বিষয়, যেগুলোকে স্বাভাবিক নিরাপত্তার নজরে দেখতে হবে। সব ডিসক্লোজ করা সব সময় বোধ হয় করা যায় না, সম্ভব না। এর বাইরে যেগুলো থাকবে সেগুলো অবশ্যই স্বচ্ছ থাকবে। যে কেউ দেখতে পারবে। এ সিস্টেমটা আমাদের গড়ে তুলতে হবে।’
দলীয় আরেক নেতার ভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে পাঁচ বছরে পাঁচ কোটি বৃক্ষরোপণের ইচ্ছে আছে তার। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের পানি বাড়ছে। গবেষণায় উঠে আসছে বাংলাদেশের অনেকাংশ, অর্ধেক বা তার কম অংশ ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ দেশের মানুষকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। খালেদা জিয়া সরকারের সময় আমরা বৃক্ষমেলা করতাম। আমাদের যেভাবেই হোক, এ কর্মসূচি আবার শুরু করতে হবে। সবাইকে উৎসাহ দিতে হবে বৃক্ষরোপণের জন্য। গাছ প্রকৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ব্যক্তিগতভাবে আমার একটা পরিকল্পনা আছে। আগামী দিনে আমরা সুযোগ পেলে পাঁচ বছরে আমরা পাঁচ কোটি বৃক্ষরোপণ করবো।
ফারাক্কা বাঁধ থেকে পদ্মার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের ব্যাপারে দলের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন করেন আরেক নেতা। এ সময় বিএনপির তারেক রহমান বলেন, ফারাক্কা বাঁধের বিষয়ে আমাদের একটি ধারণা আছে। এটি একটি আন্তর্জাতিক বিষয়। বিএনপির বাইরে অন্য সরকার যখন ক্ষমতায় এসেছে, তারা যথাযথভাবে এটা দেখেনি। আর পতিত স্বৈরাচার সরকার ইচ্ছা করেই করেনি প্রতিবেশী দেশকে খুশি করার জন্য। এটা আন্তর্জাতিক লবি, আমরা সময়মতো অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কাজ করবো। প্রয়োজনে দেশের স্বার্থে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের নিয়েই কাজ করবো আমাদের ন্যায্য হিস্যা আদায়ের জন্য।
এর আগে সকালে রাজশাহীতে এ প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু হয়। এতে অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সাবেক মেয়র ও সাবেক এমপি মিজানুর রহমান মিনু, চেয়ারপারসনের বিদেশবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ড. মাহাদী আমিন, কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বক্তব্য দেন।
কর্মশালায় আলোচনা করেন বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক রাশিদা বেগম হীরা ও কৃষকদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা হাবিবা।
সভাপতিত্ব করেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত। বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক কমিটির সদস্য সচিব এ বি এম মোশাররফ হোসেনের সঞ্চালনায় কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতা ওবায়দুর রহমান চন্দন, আমিরুল ইসলাম আলীম, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা