১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

নবান্ন উপলক্ষে কালাইয়ে বসেছে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা

নবান্ন উপলক্ষে কালাইয়ে বসেছে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা - ছবি : নয়া দিগন্ত

প্রতিবছরের ন্যায় এবারো নবান্ন উপলক্ষে জয়পুরহাটের কালাইয়ে বসেছে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা। এ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থাকা এই এলাকার জামাই-মেয়ে, ইষ্টি-কুটুমরা আসেন এখানকার স্বজনদের বাড়ি বাড়ি। মেলা থেকে সেরা মাছ কিনে জামাইরা নিয়ে যান শ্বশুরবাড়িতে। তাই এ মেলাকে জামাই মেলাও বলা হয়ে থাকে।

রোববার কালাই পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের পাঁচশিরা বাজারে বসেছে মাছের এ মেলা। মেলায় শুধুই মাছ। সুন্দর করে সাজানো কাতলা, রুই, মৃগেল, চিতল, গ্রাসকার্প, কার্ফু, কালবাউশ, ব্রিগেড, সিলভার কার্পসহ হরেক রকমের মাছ। আছে একধরনের কেনার প্রতিযোগিতা। কোন জামাই কত বড় মাছ কিনলেন, সেটাই আসল বিষয়। প্রতিযোগিতায় নীরবে অংশ নেন শ্বশুররা।

তিন কেজি থেকে শুরু করে ১৮ কেজি ওজনের বড় মাছ। মাছের আকার অনুযায়ী ৫ কেজি থেকে শুরু করে ১৮ কেজি ওজনের বড় মাছ। মাছের আকার অনুযায়ী প্রতি কেজি মাছ ৩০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারাও ব্যাপক উৎসাহের সাথে কিনছেন ওইসব মাছ। আবার দেখতে এসেছেন অনেকেই।

মেলায় অংশ নেন উপজেলার মাত্রাই, উদয়পুর, পুনট, জিন্দারপুর, আহম্মোবাদ ইউনিয়ন ও কালাই পৌরসভার শতাধিক গ্রাম-মহল্লার মানুষেরা।

এই মেলা কেন্দ্র করে ঘরে ঘরে এ উৎসবকে ঘিরে প্রতিটি বাড়িতেই মেয়ে-জামাইসহ স্বজনদের আগে থেকেই দাওয়াত দেয়া হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তর থেকে শত শত মানুষ উৎসব দেখতে আসেন। ক্রেতারা মাছের দাম হাঁকাচ্ছেন, কিনছেন, আবার কেউ কেউ সেলফি তুলতেও ব্যস্ত।

এই মাছের পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্যের পসরা বসে এই মেলায়। ক্রেতারা খালিহাতে ফিরছেন না কেউ। সবাই সামর্থ্য অনুযায়ী মাছ কিনে খুশিমনে বাড়ি ফিরছেন।

মাছ ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা জানান, পঞ্জিকা অনুসারে অগ্রহায়ণ মাসের দ্বিতীয় দিনে এ মেলা বসে। নতুন ধান কাটার উৎসবে কৃষকদের প্রস্ততকৃত চালে প্রথম রান্না উপলক্ষে এ নবান্ন উৎসব পালিত হয়। এদিনে মেয়ে-জামাই ও আত্মীয়-স্বজনকে আমন্ত্রণ করেন কৃষকরা। যথারীতি অনুষ্ঠান পালন করতে জামাই-মেয়ে, বিয়াই-বিয়ান ও আত্মীয়-স্বজনরা আসেন বাড়িতে। পাড়া-মহল্লায় জেগে ওঠে উৎসবের আমেজ। পিঠা-পুলি, পায়েস, গুড় ও চিনির ক্ষীর সাথে খই ও মুড়ি খাওয়ার ধুম পড়ে যায়।

মেলায় ঘুরতে আসা মেহের আফরোজ বলেন, ‘আমার বিয়ের পর থেকেই আমি প্রতিবছর এই মেলা দেখতে আসি। এ মেলার জন্য আমরা আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত করি। আমাদের বাড়ির জন্য এবার ১২ কেজি ওজনের কাতলা মাছ কিনেছি।’

মাত্রাই ইউনিয়নের বাসিন্দা তাহরিম হাসান জানান, ‘এই নবান্নের মেলা আমাদের কাছে ঈদের চেয়েও বেশি আনন্দের। বাড়িতে মেয়ে জামাই, ভাগ্নি জামাইকে দাওয়াত করা হয়েছে। এই মাছের মেলা কেন্দ্র করে তারা বাড়িতে এসেছে। সবাই অনেক খুশি।’

মেলায় মাছ কিনতে আসা চঞ্চল বাবু নামে এক জামাই বলেন, ‘অন্য বছরের চাইতে এবার মাছের দাম একটু বেশি। তবে যাই হউক না কেন এই মেলা থেকে ১৮ কেজি ওজনের একটি রুই মাছ কিনে নিয়ে শশুর বাড়ি যাচ্ছি।’

মেলায় মাছ কিনতে আসা মিলন মিঞা নামে এক জামাই বলেন, ‘অন্য বছরের চাইতে এবার মাছের দাম একটু বেশি। তবে যাই হউক না কেন এই মেলা থেকে ১২ কেজি ওজনের একটা কাতলা মাছ ১০ হাজার টাকায় কিনে নিয়ে শশুর বাড়ি যাচ্ছি।’

হাট ইজারাদার আব্দুল মান্নান জানান, প্রতিবছর এই দিনে নবান্ন উৎসব উপলক্ষে এই স্থানে মাছের মেলা বসে। মাছ ব্যবসায়ীরা মেলার আগে এলাকায় মাইকের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার করেন। এতে করে অনেক ব্যবসায়ী ও মাছ ক্রেতাদের সমাগম ঘটে। আজকে প্রচুর মাছ আমদানি যেমন হয়েছে বিক্রিও ভালো হবে বলে আশা করছি।

কালাই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তৌহিদা মোহতামিম জানান, প্রতিবছর এই মেলাকে ঘিরে এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। আজকেও মানুষের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। এ মেলায় এবার ৪০-৫০টি স্টল রয়েছে। এই মেলায় ব্যবসায়ীরা অন্তত কোটি টাকার মাছ কেনাবেচা করবেন। মেলায় কেউ যেন বিষযুক্ত মাছ বিক্রি করতে না পারে সেদিকে আমাদের কঠোর নজরদারি রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement