১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩০, ১৫ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

পাবনায় ছেলের সাথে এইচএসসি পাস করলেন বাবা-মা

বাবা ফারুক হোসেন, মা জাকিয়া সুলতানা ও ছেলে হুজ্জাতুল ইসলাম ফাহিম - ছবি : নয়া দিগন্ত

এবারে পাবনার সুজানগরে ছেলে ও মা-বাবা একইসাথে এইচএসসি পাস করেছেন।

বাবা ফারুক হোসেন জিপিএ ৪ দশমিক ৭১, মা জাকিয়া সুলতানা জিপিএ ৪ দশমিক ২৫ এবং ছেলে হুজ্জাতুল ইসলাম ফাহিম জিপিএ ৪ দশমিক ১৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।

ছেলের চেয়ে বাবা-মায়ের রেজাল্ট ভালো হওয়ায় এলাকায় হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে।

চলতি বছর এইচএসসির ফল প্রকাশের পর এমন সাফল্যে পরিবার-পরিজনসহ এলাকাবাসীর প্রশংসায় ভাসছেন বাবা-মা ও ছেলে।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে সাতবাড়ীয়া ডিগ্রি কলেজের বিএম শাখা থেকে বাবা ও মা এবং ছেলে উইলস্ লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ (ইংলিশ ভার্সন) থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।

সাতবাড়ীয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল বাছেত বাচ্চু জানান, ফারুক হোসেন ও তার স্ত্রী জাকিয়া তার প্রতিষ্ঠান থেকে ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ছেলেসহ একইসাথে বাবা-মা পাশ করার এই সাফল্য সমাজের অনেককে অনুপ্রাণিত করবে।

বাবা-মার সাথে এইচএসএসসি (সমমান) পরীক্ষায় পাশ করে উচ্ছ্বসিত ছেলে হুজ্জাতুল ইসলাম ফাহিম জানায়, একই বছর আমার সাথে আমার বাবা ও মা এইচএসসি পাশ করায় সত্যিই আমি অনেক খুশি।

মা জাকিয়া সুলতানা বলেন, আমার খুব ইচ্ছা ছিল এইচএসএসসি পাশ করার। কিন্ত মা-বাবার সংসারে সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি। পরে আমি আমার স্বামী ও ছেলের পরামর্শে এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার জন্য আমি এবং আমার স্বামী সুজানগর উপজেলার সাতবাড়ীয়া ডিগ্রি কলেজের বিএম শাখায় ভর্তি হই। এবং এইচএসসি (সমমান) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাস করেছি, তাই আমি আনন্দিত।

বাবা ফারুক হোসেন বলেন, অল্প বয়সে ২০০২ সালে আমার বিয়ে হয়। এরপর সংসারের হাল ধরার কারণে ব্যবসা করায় তখন আর লেখাপড়া হয়ে উঠেনি। আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। স্ত্রী ও আমি একইসাথে কলেজে ভর্তি হই। একসাথে স্ত্রী ও বড় ছেলের সাথে একই বছর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করে আমি অনেক খুশি।

তিনি আরো বলেন, সমাজে চলতে অনেক সময় শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য বিড়ম্বনায় পড়তে হতো। সত্যি কথা বলতে লেখাপড়ার কোনো বিকল্প নেই। পাশ করার ফলে আমাদের মর্যাদা আরো বৃদ্ধি পাবে। আমি এবং আমার স্ত্রী উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে পড়ালেখা চালিয়ে যাব।

সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর রাশেদুজ্জামান রাশেদ বলেন, একইসাথে বাবা-মা ও ছেলে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় আমাদের সামনে তারা একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাদের এমন কৃতিত্বকে সবার সম্মান করা উচিত এবং তাদের দেখে অন্যরাও উচ্চ শিক্ষায় অগ্রসর হবেন বলে প্রত্যাশা করি।

উল্লেখ্য, পাবনার সুজানগর উপজেলার সাতবাড়ীয়া ইউনিয়নের গুপিনপুর গ্রামের মরহুম জানু বিশ্বাসের ছেলে বি এম ফারুক হোসেন ২০০২ সালে ১০ শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় বিয়ে করেন উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের উলাট গ্রামের ময়েন উদ্দিন মোল্লার মেয়ে মোছা: জাকিয়া সুলতানাকে। ২০০৩ সালে তাদের দুইজনেরই এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও সন্তান গর্ভে আসায় এবং সাংসারিক চাপে শেষপর্যন্ত আর পরীক্ষা দেয়া সম্ভব হয়ে উঠেনি তাদের।

পরে ২০২২ সালে খয়রান লুকমান হাকিম টেকনিক্যাল স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন এই দম্পতি। তাদের ইচ্ছা আরো অনেক বড় হবে। ছেলের সাথেই বাবা-মা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করবেন।


আরো সংবাদ



premium cement